কক্সবাজারে খুন-অপহরণ আতঙ্ক
১ দিনের ব্যবধানে ২ খুন- এস এম মিন্টু
- ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:২৭
‘বিশ লাখ টাকা দিবি, না দিলে তোর ছেলেকে মেরে ফেলব।’ ‘আমরা কোনো ধর্ম মানি না, টাকা লাগবে টাকা।’ ২০ মিনিটের মধ্যে টাকা না নিয়ে এলে তোর ছেলের লাশ পাবি।’ গত তিন দিন আগে টেকনাফের এক বাসিন্দাকে তিনজন অপহরণকারী চক্রের সদস্য একটি নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে চলে নির্যাতনের খড়গ। নির্যাতনের শিকার ওই যুবকের বাবাকে ফোন করে ২০ লাখ টাকা দিতে বাধ্য করেন। এমনই একটি অডিও রেকর্ড এসেছে নয়া দিগন্তের কাছে। সেখানে অকথ্য ভাষায় গালিগাজ করতে শোনা গেছে। পরে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ছেলেকে ফিরিয়ে আনেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই যুবক ফিরে এসে বলেন, টেকনাফ সদরের গোজারবিল এলাকার একটি নির্জন বাসায় তাকে আটকে রাখে অপহরণকারীরা। যারা অপহরণ করেছে তারা রোহিঙ্গা সদস্য। বর্তমানে তারা টেকনাফের স্থানীয় বাসিন্দা। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।
অপর দিকে পর্যটন নগরী খ্যাত কক্সবাজার শহরে দিনের বেলা ঘুরাঘুরির পর সন্ধ্যা নামতেই সৈকতের আশপাশে হেঁটে, গল্প কিংবা আড্ডায় সময় কাটায় পর্যটকরা। কিন্তু সড়কে পর্যাপ্ত বাতি না থাকায় বিঘিœত হয় বেড়াতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তা। এ নিয়ে ভ্রুক্ষেপ নেই সংশ্লিষ্টদের। আর এতেই দিনের পর দিন বেড়েই চলছে খুন ও ছিনতাইয়ের ঘটনা।
পর্যটন স্পটগুলো ছাড়াও শহরের প্রধান সড়ক, এমনকি অলিগলিতেও ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন পর্যটক ও পথচারীরা। ৫ আগস্টের পর দেশের থানাগুলো সচল হলেও কার্যত এখনো নিষ্ক্রিয় পর্যটন নগরী কক্সবাজারের ট্যুরিস্ট পুলিশ ও জেলা পুলিশ। পর্যটন স্পটসহ সমুদ্রসৈকতে তেমন পুলিশের টহলও নেই। এ সুযোগে সমুদ্রসৈকতসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে বাড়ছে খুন, অপহরণ, ছিনতাই, ডাকাতিসহ নানা ধরনের অপরাধ।
গত তিন দিনে শুধু কক্সবাজার শহরে দুই খুন ও চার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। মহেশখালীতে তিন দিনে এক গৃহবধূসহ দুই নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
সর্বশেষ গত ৯ জানুয়ারি রাত ৯টার দিকে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে খুলনার কাউন্সিলর গোলাম রব্বানীকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। একই দিন বৃহস্পতিবার সকালে এন্ডারসন রোডে এক এনজিওকর্মী ছিনতাইয়ের শিকার হন। এর আগের দিন ৮ জানুয়ারি শহরের কলাতলি ডিসি পাহাড়ে আল মাহমুদ হক আহাদ নামের এক শিশুকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ডাকাত দলের হাতে সেনাকর্মকর্তা খুন আর মাকে হত্যার পর থানায় ছেলে হাজির হওয়ার মতো ঘটনা।
জেলা পুলিশের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৪ সালে জেলায় ১৭৯ জন হত্যার শিকার হয়েছেন। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ১৭৬টি। শেষ চার মাসেই খুন হয়েছেন ৫৫ জন। পুরো বছরে সবচেয়ে বেশি ২২টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে জুন মাসে। আরেক প্রতিবেদনে পুলিশ জানিয়েছে, ২০২৪ সালে অপহরণের মামলা হয়েছে ৪০টি। অপহরণের শিকার হয়েছেন ১৯২ জন।
গত বৃহস্পতিবার কক্সবাজার শহরে ডিভাইন রিসোর্টের পাশে ছিনতাইয়ের শিকার হাওয়া আবরাহাম বলেন, আমরা তিন বন্ধু মিলে সৈকতে আড্ডা দিতে যাই। আড্ডা শেষে ফেরার পথে ডিভাইন ইকো রিসোর্টের পাশে পাঁচজন মাস্ক পরা লোক এসে আমাদের ছুরি চালায়। এসময় আমাদের মোবাইল ও মানিব্যাগ নিয়ে যায়। আমাদের বন্ধু তুহিনের পায়ে বেশ কয়েকটি ছুরির আঘাত হয়। পরে তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের সদস্যসচিব এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, কক্সবাজার জেলায় আইনশৃঙ্খলা চরম অবনতির দিকে চলে গেছে। প্রতিদিন জেলায় হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণসহ নানা ঘটনা ঘটছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর নীরবতার সুযোগে অপরাধীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেকটা অভিভাবকহীন কক্সবাজার পর্যটন নগরী। আইনশৃঙ্খলা উন্নতির স্বার্থে যৌথবাহিনীর মাধ্যমে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করা জরুরি হয়েছে পড়ছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা