সরকারি চাকুরেদের ‘গৃহনির্মাণ ঋণ নীতিমালার সংশোধন
ঋণের অঙ্কের চেয়ে কম মূল্যে দলিল রেজিস্ট্রি করা যাবে না- সৈয়দ সামসুজ্জামান নীপু
- ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:২৬
অনিয়ম ও প্রতারণা ঠেকাতে সরকারি চাকরিজীবীদের ‘গৃহনির্মাণ ঋণ প্রদান নীতিমালা-২০১৮’ সংশোধন করেছে সরকার। এখন থেকে গৃহ নির্মাণের জন্য নেয়া ঋণের অঙ্কের চেয়ে জমি বা ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশনের মূল কম দেখানো যাবে না। সংশোধিত নীতিমালায় বলা হয়েছে, ‘এ ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশনের সময় ঋণগ্রহীতা অন্ততপক্ষে ঋণের প্রকৃত মূল্য দলিলে প্রদর্শন করবে।’
দেখা গেছে, অনেক ক্ষেত্রে সরকারি চাকরিজীবীরা গৃহনির্মাণের জন্য যে অঙ্কের ঋণ নিয়েছেন, দলিল বা রেজিস্ট্রেশন করার সময় জমি বা ফ্ল্যাটের মূল্য তার চেয়ে কম উল্লেখ করেছেন। কিন্তু ঋণের বিপরীতে সরকারের দেয়া পুরো সুদ ভর্তুকিই তারা নিয়েছেন।
সূত্র জানায়, ঋণ প্রদানকারী ব্যাংক/হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন প্রদত্ত ঋণের অঙ্ক দলিল মূল্যে প্রতিফলিত হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন না করে ব্যাংক-ক্লায়েন্ট সম্পর্কের ভিত্তিতে কাগজপত্র সঠিক পেলে ঋণ দিয়ে আসছে।
সরকার মনে করছে, নীতিমালাটি সংশোধনের ফলে অনিয়ম, প্রতারণা ঠেকানো সম্ভব হবে। অন্য দিকে, সরকারের রাজস্ব হারানোর পরিমাণ কমে যাবে।
সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত একটি সংশোধনীতে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ অনুমোদন দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেছেন, দেখা গেছে, এই নীতিমালায় সরকারি চাকরিজীবীদের ফ্ল্যাট বা জমির কেনার জন্য ব্যাংক ঋণ দেয়া হয়। এই ঋণের সুদের হার যদি ১০ ভাগ হয়, তবে সরকার এই খাতে ৫ শতাংশ ভর্তুকি দেয়। দেখা যায়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারি চাকুরেরা ব্যাংক থেকে জমি বা ফ্ল্যাট কেনা বাবদ ৮০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। কিন্তু জমি রেজিস্ট্রেশনের সময় সেই জমি বা ফ্ল্যাটের মূল্যই দেখাচ্ছেন ৬০ বা ৭০ লাখ টাকা। সরকার কিন্তু এই ৮০ লাখ টাকা ঋণের ওপরই সুদ ভর্তুকি দিয়ে থাকে। এই বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেখেও না দেখার ভান করে। এখন নীতিমালা সংশোধন করে বলা হয়েছে, জমি বা ফ্ল্যাটের দাম কোন অবস্থায়ই ঋণের অঙ্কের কম দেখানো যাবে না।
জানা গেছে, প্রজাতন্ত্রের কাজে নিয়োজিত সরকারি কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহ নির্মাণ ঋণ প্রদান নীতিমালা-২০১৮ সংক্রান্ত পরিপত্র ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই তারিখ জারি করা হয়। ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর তারিখ ওই নীতিমালায় কিছু সংশোধন আনা হয়।
নীতিমালার অনুচ্ছেদ ৭.১ গ(২) অনুযায়ী ঋণ দেয়ার জন্য ডেট-ইক্যুইটি অনুপাত হবে ৯০:১০। এর অর্থ হচ্ছে ঋণদানকারী ব্যাংক ফ্ল্যাটের/সম্পত্তির মূল্যের সর্বোচ্চ ৯০ শতাংশ ঋণ দেবে এবং ঋণগ্রহীতা কমপক্ষে ১০ শতাংশ ব্যয়নির্বাহ করবে। ওই ঋণ-ইক্যুইটি অনুপাত অনুসরণ করে ঋণসংক্রান্ত ব্যাংকের কাগজপত্র (যেমন-মঞ্জুরিপত্র, রিপেমেন্ট শিডিউল) যাচাই করে সঠিক প্রাপ্তি সাপেক্ষে ঋণ আবেদন নিষ্পত্তি করা হচ্ছে।
সম্প্রতি অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের (প্রশাসন ও টিডিএম) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঋণ ও সুদ ভর্তুকি মঞ্জুরের আবেদন প্রক্রিয়াকালে ঋণগ্রহীতা/বাস্তবায়নকারী সংস্থার কাছে বায়নানামা, বন্ধকী দলিল ও ক্রয় দলিল দাখিলের অনুরোধ করা হচ্ছে। সুদ ভর্তুকি মঞ্জুরের আবেদন প্রক্রিয়াকালে প্রাপ্ত ওই দলিলাদি পর্যালোচনায় দেখা যায়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত ঋণের অঙ্কের চেয়ে কম মূল্যে দলিল রেজিস্ট্রি হচ্ছে; মৌজা মূল্যে ফ্ল্যাট/জমি রেজিস্ট্রি করার সুযোগ থাকা এবং সাব-রেজিস্ট্রি অফিস এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন না করায় এমনটি ঘটছে।
সূত্র জানায়, ঋণ প্রদানকারী ব্যাংক/হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনপ্রদত্ত ঋণের অঙ্ক দলিল মূল্যে প্রতিফলিত হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন না করে ব্যাংক-ক্লায়েন্ট সম্পর্কের ভিত্তিতে কাগজপত্র সঠিক পেলে ঋণ দেয়া হচ্ছে। চলমান প্র্যাকটিস অনুযায়ী মৌজা মূল্যে রেজিস্ট্রিকৃত ফ্ল্যাট/জমির ক্ষেত্রে গৃহ নির্মাণ ঋণ চালু হওয়ার পর হতে অর্থাৎ জুলাই, ২০১৮ থেকে এ যাবৎ দলিল মূল্য নির্বিশেষে ব্যাংক হতে গৃহীত ঋণের ওপর মাসিক ভিত্তিতে সরকারি সুদ ভর্তুকি দেয়া হয়েছে। তবে গৃহীত ঋণের চেয়ে কম মূল্যে দলিল রেজিস্ট্রি হলে পুরো ঋণের উপর সুদ ভর্তুকি পাওয়া যাবে না এমন বিষয়টি সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহনির্মাণ ঋণ প্রদান নীতিমালা-২০১৮ এ উল্লেখ নেই। কিন্তু ঋণের সাময়িক অনুমোদন দেয়ার পর নভেম্বর ২০২৪ থেকে চূড়ান্ত অনুমোদনকালে প্রকৃত ঋণ মূল্যের ভিত্তিতে সুদ ভর্তুকি দেয়ার শর্ত আরোপ করায় ঋণ গ্রহীতারা ঋণের মঞ্জুরি আদেশ ও সুদ ভর্তুকি প্রাপ্তিতে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন মর্মে আবেদনে জানিয়েছেন। এতে করে তারা ব্যাংকের কিস্তি ও সুদ পরিশোধ করতে পারছেন না।
বিষয়টি পর্যালোচনায় করে কয়েকটি সুপারিশ করা হয়। এগুলো হলো-
(ক) সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহনির্মাণ ঋণ প্রদান নীতিমালা-২০১৮ সংশোধন করে ওই নীতিমালার অনুচ্ছেদ ৭.১(গ) এর উপানুচ্ছেদ (১)-এ নিম্নবর্ণিত বাক্যটি সংযোজন করা যেতে পারে :
‘এ ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশনের সময় ঋণগ্রহীতা অন্ততপক্ষে ঋণের প্রকৃত মূল্য দলিলে প্রদর্শন করবে’
(খ) ওই সংশোধনটি ‘বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান বিচারপতি ও সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থা মাধ্যমে গৃহ নির্মাণ ঋণ প্রদান সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২১’ এবং ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের শিক্ষক কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহ নির্মাণ ঋণ প্রদান সংক্রান্ত নীতিমালা-২০১৯’ তেও অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
(গ) অর্থ বিভাগ কর্তৃক ইতোমধ্যে যেসব ঋণের ক্ষেত্রে প্রদেয় সুদ ভর্তুকির সাময়িক মঞ্জুরি আদেশ জারি করা হয়েছে এবং চূড়ান্ত আদেশ জারি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে তাঁদের ক্ষেত্রে ৫(ক) এর শর্ত প্রযোজ্য হবে না অর্থাৎ আদেশ জারির তারিখ থেকে তা কার্যকর হবে।
সূত্র জানায়, অর্থ উপদেষ্টা অনুমোদন দেয়ার পর প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের গৃহ নির্মাণ ঋণ মঞ্জুরির ক্ষেত্রে সৃষ্ট জটিলতা দূর হবে পাশাপাশি দলিলে কম মূল্যে গৃহ ক্রয় বা নির্মাণ দেখনোর প্রবণতা কমবে এবং সরকারি রাজস্ব আদায়ে সুবিধা হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা