বিদেশী পর্যটকরা চান নীরব ও নিষ্কলুষ পরিবেশ
- হামিদ সরকার সুন্দরবন (খুলনা) ঘুরে এসে
- ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:২৬
মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও নীরবতায় ঘেরা সুন্দরবন পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন। পর্যটকদের জন্য এক প্রাকৃতিক বিস্ময়। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের জন্য আকর্ষণ। দেশী-বিদেশী মিলে প্রতি বছর গড়ে দুই লাখের বেশি পর্যটক আসছে এই সুন্দরবনে। গবেষক, বিশেষজ্ঞ ও পর্যটনের সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই সুন্দরবনে বিদেশী পর্যটকদের আগমন বাড়াতে হলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাথে ওই এলাকার লোক সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ফুটিয়ে তুলতে হবে। পর্যটকবাহী জাহাজগুলোতে সুন্দরবন ও এই অঞ্চলের ওপর তথ্য সমৃদ্ধ প্রামাণ্যচিত্র দেখানোর সুযোগ রাখা উচিত। সুন্দরবনের ব্র্যান্ডিং ও মার্কেটিং করতে প্রয়োজন বাংলাদেশের বিভিন্ন দূতাবাসে প্রচারণা ও প্রামাণ্যভিডিও চিত্র ওয়েটিং রুমে প্রদর্শন করা। এ ছাড়া এ অঞ্চলে প্রবেশের বিষয়টি সহজ ও পর্যটক বান্ধব করতে হবে।
সুন্দরবন বিভাগের দেয়া তথ্যে এ চিত্র ফুটে উঠেছে। সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতি অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুতে সুন্দরবনে আয়তন ছিল বর্তমানের দ্বিগুণ। কমতে কমতে বর্তমানে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন এখন দাঁড়িয়েছে ৬০১৭ বর্গ কিলোমিটার, যা দেশের মোট সংরক্ষিত বনভূমির ৫১ ভাগ। সুন্দরবনের জলভাগের পরিমাণ ১৮৭৪.১ বর্গ কিলোমিটার, যা সমগ্র সুন্দরবনের ৩১.১৫ ভাগ। ১৯৯২ সালে সমগ্র সুন্দরবনের এই জলভাগকে রামসার এলাকা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসঙ্ঘ।
সুন্দরবন দেখতে নভেম্বরে ঢাকা থেকে আসা ৬০ বছরে আবদুর রহমান অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, সুন্দরবন এতটাই সুন্দর যে বনের প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্য মুগ্ধ করেছে। কিন্তু দিন দিন সুন্দরবন নানা রকম ক্ষতির মুখে পড়ছে। এইভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশ হারাবে প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি, হারাবে জৈববৈচিত্র্য। সুন্দরবন বাংলাদেশের ফুসফুস হয়ে যেমন আমাদের প্রাণ রক্ষা করছে, তেমনিভাবে বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে সৃষ্ট নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকেও আমাদের রক্ষা করছে। বাংলাদেশের সুন্দরবন একটিই। তাই এ বনকে রক্ষা করতে আমাদের দ্রুত উদ্যোগী হওয়া দরকার বলে অভিমত জানান তিনি।
সুন্দরবনে পর্যটক আকর্ষণের বিষয়ে আলাপকালে গবেষক ও খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি ও উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিন বিভাগের অধ্যাপক ড. এম ওয়াসিউল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নিরবতা, নিস্তব্ধতা হলো একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ ছাড়া সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বাংলাদেশের অন্যান্য জায়গার তুলনায় আলাদা। এই সৌন্দর্যকে আমরা কিভাবে পর্যটকদের কাছে তুলে ধরতে পারি সেটার প্রতি আমাদের নজর দেয়া দরকার। এই প্রাকৃতিক রিসোর্টকে মানুষ যাতে উপভোগ করতে পারে তার জন্য পদক্ষেপ নেয়া দরকার। তাহলেই দেশী ও বিদেশী পর্যটকরা যে উদ্দেশ্য নিয়ে এদেশে আসে, সুন্দরবনে আসে তা পূর্ণ হবে। এর ফলে পর্যটকও বাড়তে পারে।
এখানকার বাহনের আধুনিকায়নের ব্যাপারে এই গবেষক বলেন, ইঞ্জিন চালিত বাহন নিয়ে আমরা সুন্দরবনে যাচ্ছি। এ ইঞ্জিনের শব্দ কিন্তু কম নয়। আবার ওই বোট যখন চলে না, তখন জাহাজের আলো, এসি বা অন্যান্য যন্ত্র চালু রাখার জন্য এবং বিদ্যুতের জন্য যে জেনারেটর চলছে, সেটারও কিন্তু বিকট শব্দ, যা বনের নিস্তব্ধতাকে নষ্ট করে দেয়। বিশ্বে এখন প্রযুক্তি অনেক এগিয়ে গেছে। শব্দমুক্ত বা দূষণমুক্ত জেনারেটরও পাওয়া যায়। এগুলো ব্যয়বহুল বলে এখনো ব্যবহার হচ্ছে না। তাই এসব আধুনিক প্রযুক্তি আমাদের এখানে আনার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারিভাবে উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
গাইডের বিষয়টি উল্লেখ করে ড. এম ওয়াসিউল ইসলাম বলেন, এখানে পর্যাপ্ত সংখ্যক দক্ষ ও প্রশিক্ষিত ইকো-গাইডের অনেক অভাব রয়েছে। এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। বন বিভাগকে আমরা বারবার বলেছি। একজন দক্ষ ইকো-গাইড ট্যুরে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। পর্যটনের সাইটকে তিনি সুন্দর করে পর্যটকের কাছে তুলে ধরতে পারেন, যা পর্যটকদের প্রত্যাশা থাকে। এদের সুন্দর সেবা পর্যটকদের বারবার আসতে বাধ্য করবে। এটা যত বেশি শক্তিশালী হবে পর্যটকরা তত বেশি সুন্দরবনকে জানতে পারবে। সুন্দরবন এলাকার মানুষের জীবন-জীবিকা, জীববৈচিত্র্য, সংস্কৃতির তথ্য আরো বিস্তারিত জানতে পারবে পর্যটকরা।
পর্যটকদের চাওয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, বিদেশী পর্যটকরা বেশি কিছু চায় না। তারা বাংলাদেশের প্রতি খুব একটা প্রত্যাশা নিয়ে আসেন না। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের যে বিষয়টি আছে এটাকেই তারা মূলত উপভোগ করতে চায়। সুন্দরবন ঘুরতে এলে এই জিনিসগুলো তোমরা দেখতে ও জানতে পারবে- এটাই পর্যটকদের জন্য তুলে ধরা। তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যান্য প্রাকৃতিক বিস্ময় থেকে কেন এই সুন্দরবন আলাদা তা তাদের সামনে প্রকাশ করতে হবে। আমাদের এখানে মার্কেটিংয়ের প্রচণ্ড অভাব আছে। এখানে বাংলাদেশ বন বিভাগ শুধু নয়, পর্যটন করপোরেশন, টুরিজম বোর্ড, প্রধানমন্ত্রী বা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় আছে, বিদেশে বাংলাদেশের বিভিন্ন যে দূতাবাস আছে তাদের এ ব্যাপারে বড় ধরনের একটা ভূমিকা আছে। এ ছাড়া বেসরকারি টুর অপারেটর যারা আছে তাদেরও মার্কেটিংয়ের একটা পলিসি থাকা দরকার। বিদেশে যেসব আন্তর্জাতিক মেলা বা ফেয়ারগুলো হয় সেখানে অংশ নিয়ে এটাকে তুলে ধরা প্রয়োজন। এতে বহির্বিশ্বে আমরা বাংলাদেশ ও দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে তুলে ধরে পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে পারি।
তিনি বলেন, একজন বিদেশী পর্যটক সুন্দরবনের গিয়ে যখন দেখবে সেখানে প্লাস্টিকের বোতল পড়ে আছে বা পানিতে ভাসছে, তখন তারা মনে করবে এই বনের ব্যবস্থাপনা বা টুরিজম ব্যবস্থাপনা ঠিক মতো হচ্ছে না। পরিবেশগত শিক্ষাক্রম ও সচেতনা বাড়তে হবে।
অধ্যাপক ড. ওয়াসিউল বলেন, শুধু সুন্দরবন নয়, এর আশপাশে বেশ কিছু লোকালয় আছে। তাদের সংস্কৃতি ও হেরিটেজ আছে। এসব কিন্তু আমাদের দেশীয় টুরিস্টরা দেখতে চায়, বিদেশীরাও পছন্দ করে। এই টুরিজমটাকেও আমাদের ধীরে ধীরে সম্প্রসারণ করতে হবে। টুরিজমের সাথে যদি আমরা স্থানীয়দের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে পারি তাহলে এটার মাধ্যমে স্থানীয় জনগণ অনেকভাবে লাভবান হবে। অর্থনৈতিক ও সংস্কৃতিক পরিমণ্ডল থেকেও আমরা সবাই লাভবান হবো। এটা করলে সুন্দরবনের জন্য নতুন একটা ডাইমেনশন তৈরি হবে। এটা হলে কয়েক দিনের জন্য এখানে মানুষ আসবে। তবে এটার যে কাজ চলমান আছে তা পরিকল্পিতভাবে করা হচ্ছে না। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য সুন্দরবন ও তার আশপাশের পথ দিয়ে যেসব জাহাজ হর্ন দিয়ে নিয়মিত চলাচল করছে এসব কিন্তু আমাদের সুন্দরবনের ক্ষতি করছে। এসব নিয়ে আমাদের কারো মাথাব্যথা নেই।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা