নিম্নমানের কাগজে ছাপা ৬০ হাজার বই জব্দ
- শাহেদ মতিউর রহমান
- ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
ঠিকানা গোপন করে রাতের অঁাধারে নিম্নমানের কাগজে পাঠ্যবই ছাপছে বেশ কিছু প্রেস বা ছাপাখানা। গতকাল এমন একটি প্রেসে আকস্মিক অভিযানে মুদ্রিত ১০ লাখ ফর্মার ৬০ হাজার কপি বই জব্দ করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। পরে সেগুলো ধ্বংসও করেছে পরিদর্শক টিম। সরকার প্রেস নামে এই প্রতিষ্ঠানটি তাদের ঠিকানা গোপন করে ভিন্ন একটি ঠিকানার প্রেস থেকে নিম্নমানের এই বই ছাপিয়ে স্কুলে স্কুলে পাঠানোর চেষ্টা করছিল। যদিও শর্ত মোতাবেক প্রাথমিক পর্যায়ের পাঠ্যবইয়ের কাগজের পুরুত্ব বা জিএসএম থাকতে হবে ৮০ এবং কাগজের ব্রাইটনেস থাকার শর্ত হচ্ছে ৮৫। কিন্তু গতকাল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মাতুয়াইলের হাজী বাদশা মিয়া রোডের সরকার প্রেসে অভিযান চালায় এনসিটিবি। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, নিম্নমানের কাগজে দেদারছে প্রাথমিকের পাঠবই ছাপানো হচ্ছে। একই সাথে বইয়ের বাইন্ডিং কাজও পুরোদমে চলছে।
সূত্রমতে গতকাল এনসিটিবির উৎপাদক নিয়ন্ত্রক প্রফেসর আবু নাসের টুকুর নেতৃত্বে একটি পরিদর্শক টিম আকষ্মিকভাবেই সরকার প্রেসের এই গোপন ঠিকানায় অভিযানে যান। সেখানে গিয়ে দেখা যায় বিপুলসংখ্যক প্রেস কর্মচারী ও বাইন্ডিং কর্মচারী নির্দ্বিধায় নিম্নমানের কাগজে বই ছাপতে ব্যস্ত রয়েছে। সরকার প্রেসের মালিক ওমর ফারুক। এনসিটিবিতে দেয়া সরকার প্রেসের ঠিকানা দেখানো হয়েছে মীরপাড়া, ঢাকা। কিন্তু আসল ঠিকানায় বই মুদ্রণের কাজ চলছে না। গোপনে নিম্নমানের কাগজে বই ছাপা হচ্ছে অন্য ঠিকানায়। সরকার প্রেসের মালিক ওমর ফারুক ইতোমধ্যে গা ঢাকা দিয়েছেন। তাকে ফোনেও পাওয়া যায়নি। সূত্র আরো জানায়, গতকালের অভিযানে উৎপাদন নিয়ন্ত্রকের সাথে আরো উপস্থিত ছিলেন এনসিটিবির সম্পাদনা বিভাগের সহকারী সম্পাদক রেজাউল করিম এবং বিষয় বিশেষজ্ঞ মাহমুদুল আমীন।
এ দিকে এনসিটিবির পক্ষ থেকে প্রথমেই অভিযুক্ত ওই প্রেসের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে; যাতে নিম্নমানের কাগজে আর কোনো বই মুদ্রণের কাজ তারা করতে না পারে। একই সাথে প্রেসে থাকা নিম্নমানের কাগজের রোলও জব্দ করা হয়েছে এবং সেগুলো ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে।
অন্য দিকে গত শনিবার ঢাকার সূত্রাপুরের ৩৪ আর এম দাস লেনের টাঙ্গাইল অপসেট প্রেসে অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ গাইড বই ছাপা অবস্থায় আটক করা হয় বিপুল পরিমাণ নিম্নমানের কাগজ ও নোট গাইডবই। সূত্র জানায়, এক দিনেই সেখানে ৫০ হাজার (একের ভেতরে সব নামে) নিষিদ্ধ গাইড বই জব্দ করে সেগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিয়োজিত সদ্য পদোন্নতি পাওয়া ৯২২ জনের একজন অধ্যাপক মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে টাঙ্গাইল প্রেসে গোপনে নিষিদ্ধ গাইড নোটবই ছাপার বন্দোবস্তু করে দিয়েছেন। যদিও এই অধ্যাপককে সার্বক্ষণিকভাবে এই প্রেসে অবন্থান করে মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, একজন অধ্যাপককে যখন শুধু একটি প্রেসের মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাহলে সেখানে গোপনে কিভাবে নিষিদ্ধ নোট গাইড বই ছাপার সুযোগ পেয়েছে? এ বিষয়ে গতকাল সন্ধ্যায় ওই অধ্যাপককে ফোন দেয়া হলে তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, আমার দায়িত্ব বা কাজের জন্য আমি কতৃর্পক্ষকে জবাব দেবো। সাংবাদিকদের সাথে কথা বলা আমার দায়িত্ব নয়।
ইদানীং বেশ কিছু প্রেসে নিম্নমানের কাগজে প্রাথমিকের বই ছাপা প্রসঙ্গে গতকাল এনসিটিবির চেয়ারম্যান নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা সর্বদা কড়া নজরদারি রাখলেও অতি গোপনে প্রেস মালিকরা নিম্নমানের কাগজে বই ছাপার পাঁয়তারা করছে। কিছু প্রেস তাদের ঠিকানা বদল করে অন্য ঠিকানায় প্রেস বসিয়ে রাতের অঁাধারেও নিম্নমানের কাগজে বই ছাপার চেষ্টা করছে। তবে আমাদের একাধিক মনিটরিং টিম এ বিষয়ে বেশ তৎপর রয়েছে। যারাই কোনো ধরনের চাতুর্যের আশ্রয় নেবে আমরা তাদেরকে চিহ্নিত করছি। ইতোমধ্যে বেশ কিছু প্রেসকে আমরা শাস্তির আওতায়ও নিয়ে এসেছি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা