প্রবাসে দলভিত্তিক প্রতিক্রিয়া দেশের ইমেজের ক্ষতি করে : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
- কূটনৈতিক প্রতিবেদক
- ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০, আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:২৬
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, প্রবাসে ইস্যুভিত্তিক না, কেবল ব্যক্তি ও দলভিত্তিক যে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়, তা বাংলাদেশের ইমেজ এবং ব্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে বিরাট ক্ষতি করে। কেউ একজন বাংলাদেশ থেকে যান, আর তাকে ডিম ছোড়ার জন্য বা তার বিরুদ্ধে সেস্নাগান দেয়ার জন্য বিরাটসংখ্যক মানুষ দাঁড়িয়ে যান- এরকম দৃশ্য পৃথিবীতে অন্য কোনো দেশের ক্ষেত্র বিরল।
গতকাল রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে সেন্টার ফর এনআরবি আয়োজিত ‘ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ’ বিষয়ক এক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এনআরবি চেয়ারপারসন এম এস সেকিল চৌধুরীর সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংককের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, ব্যাংকার অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি আবদুল হাই সরকার, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুল আওয়াল মিন্টু, জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষী ফোর্সের সাবেক কমান্ডার মেজর জেনারেল (অব:) ফজলে এলাহী আকবর, রেমিট্যান্স বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্ট ব্যাংকার আবদুল মান্নান।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে কয়েকটি বড় রাজনৈতিক দল আছে। তারা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল। কারণ পৃথিবীর কোনো রাজনৈতিক দলের এত শাখা বা কর্মী নেই। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত- ক্ষেত্রবিশেষে জাতীয় পার্টির বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শাখা আছে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধ বিদেশে এসব শাখার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। তারা শত্রুভাবাপন্ন হয়ে পড়েন।
তিনি বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী কোথাও গেলে সেখানে দুয়োধ্বনি দেয়ার জন্য কেউ দাঁড়িয়ে থাকে না। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে হয়। এটি থেকে আমাদের বের হতে হবে। ভারতীয়রা পৃথিবীর অন্যান্য দেশে যেসব সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে, আমরা পাই না কেন? কারণ আমরা স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িত হই খুব কম। আমি যখন দক্ষিণ আফ্রিকায় ছিলাম তখন দেখেছি, ঢাকা থেকে যখন অতিথি গেছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও বিএনপি ও আওয়ামী লীগের লোকজন একসাথে মিলে সংবর্ধনা দিয়েছে। তবে এটি ব্যতিক্রম। পশ্চিমা দেশগুলোতে কিন্তু আমি তা দেখিনি। আমি দেখেছি প্রবাসী বাংলাদেশীরা সব সময় দুই ভাগ হয়ে আছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় উদাহরণ আমাদের অনুসরণ করতে হবে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে নতুন সরকার গঠিত হতে যাচ্ছে, সে দিকে তাকান। কত ভারতীয় গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে চলে আসছেন। পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও কিছুটা হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কতটুকু হয়? ব্রিটেনে বাংলাদেশের কয়েকজন এমপি রয়েছেন। এটি বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিংয়ে সহায়তা করে। ভারত তাদের শক্তিশালী ডায়াসপোরা তৈরি করেছে। বিদেশে অনেক সফটওয়্যার কোম্পানির প্রধান ভারতীয়। এগুলো হচ্ছে ব্র্যান্ডিংয়ের আসল রাস্তা। ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য আমাদের অবশ্যই ভালো কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, এনআরবিদের ভূমিকা বিশ্বে ইতিবাচক, আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে নেতিবাচকও আছে। সে দিকে আমাদের নজর দিতে হবে। একজন ট্যাক্সিচালকের গাড়িতে ভুল করে কেউ যদি বিপুল পরিমাণ অর্থ ফেলে রেখে যায় এবং তিনি সেটি তার মালিককে খুঁজে বের করে ফেরত দেন, এ ধরনের ঘটনায় দেশের ইমেজ অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু যখন দেখা যায়, ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে যারা মারা যায় কিংবা উদ্ধার হয়, তাদের একটা বড় অংশ বাংলাদেশের, তখন ইমেজ নষ্ট হয়।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে বলে ভারতের সংবাদমাধ্যমে যেসব খবর আসছে তাকে প্রচণ্ডভাবে ‘বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা’ হিসেবে অভিহিত করে তৌহিদ হোসেন তা মোকাবেলায় প্রবাসী বাংলাদেশীদের সহায়তা চান। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যেসব ঘটনা ঘটেছে তা রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে হয়েছে, তাদের ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে হয়নি। এসব ঘটনায় সরকার ব্যবস্থা নিলেও ভারতের মিথ্যা প্রচারণায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসও বাদ যাননি।
সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার আগের অনেক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠেছে। গত ছয় মাসে গড়ে রেমিট্যান্স বেড়েছে ২৬ শতাংশ। রফতানি দুই দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে পেঁৗছেছে। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি অনুকূল পরিবেশের ওপর জোর দেন গভর্নর।
ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুল হাই সরকার প্রবাসীদের মধ্যে ঘনঘন বিরোধ ও সঙ্ঘাত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এটি একটি দুঃখজনক পরিস্থিতি, যা সমাধান করা প্রয়োজন। একই সাথে প্রবাসে যাওয়ার আগে শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা