১২ জানুয়ারি ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১, ১১ রজব ১৪৪৬
`

কিছু মানুষ এই ঐক্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করছেন : মির্জা ফখরুল

রাজধানীতে এ বি পার্টির কাউন্সিলে বিভিন্ন দলের নেতারা : নয়া দিগন্ত -

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের দেশেরই কিছু মানুষ এই ঐক্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করছেন। আমি জানি, সে চেষ্টা সফল হবে না। আমরা অবশ্যই সম্মিলিতভাবে আমাদের লক্ষ্যে পেঁৗছাতে সক্ষম হবো বলে আমি বিশ্বাস করি।
গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, বৈষম্য দূর করতে তরুণদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একটা নতুন বাংলাদেশ দেখতে চাই। এখানে আমাদের কোনো বিভেদ নেই। বাংলাদেশকে নতুন করে নির্মাণ করার যে স্বপ্ন আমরা দেখছি, সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের একটু ধৈর্য ধারণ করতে হবে। হঠকারিতা করে, ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে, ভুল পদক্ষেপ নিয়ে সেই সম্ভাবনাকে বিনষ্ট না করি, সেটা আমাদের সবসময় লক্ষ্য রাখতে হবে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, এখন যেটা প্রয়োজন, সব উসকানির পরও আমরা যেন সিদ্ধান্তে অটল থাকি। একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যেতে চাই, বৈষম্য দূর করতে চাই, বাংলাদেশের তরুণদের হাতে হাত মিলিয়ে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একটা নতুন বাংলাদেশ দেখতে চাই। এখানে আমাদের কোনো বিভেদ নেই।
দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব ভালো নয়। রাজনৈতিক দিক দিয়ে ভঙ্গুর অবস্থায় আছে। আমরা সেটাকে একসাথে লড়তে (মোকাবেলা করতে) চাই। সবাই মিলে এই সমস্যাগুলোকে সমাধান করতে চাই।
নির্বাচনের পরে বিএনপি একটা ঐক্যবদ্ধ জাতীয় সরকার গঠন করতে চায় জানিয়ে ফখরুল বলেন, সবাই মিলে রাজনৈতিক সমস্যাগুলোর সমাধান করতে চাই। যারা অন্যান্য দলে আছেন তারা অবশ্যই এটা ভাববেন ও চিন্তা করবেন। তারা তাদের যে মতামত সেটা দেবেন।
তিনি বলেন, সংস্কারের কথা আমরা (বিএনপি) আগেই বলেছি, আবারো বলছি আমরা সংস্কার চাই। কিছু কিছু মানুষ আছেন, তারা একটু বুঝানোর চেষ্টা করেন যে, আমরা সংস্কারের আগেই নির্বাচন চাই বা নির্বাচনের জন্য অস্থির হয়ে গেছি। বিষয়টা তেমন না। আমরা যেটা বলছি, নির্বাচন কেন দ্রুত চাই? এই কারণে দ্রুত চাই যে, নির্বাচনটা হলেই আমাদের শক্তি আরো বাড়বে। সরকার থাকবে, সংসদ থাকবে। যে সঙ্কটগুলো সৃষ্টি হয়েছে সেগুলো দূর হয়ে যাবে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমান সরকারকে আমরা সমর্থন দিয়েছি, দিয়ে যাচ্ছি। তাদের পক্ষে সম্ভব্য আমরা একটা পথ খুঁজে পাবো, যে পথে আমরা সবাই এগিয়ে যেতে পারবো।’
তিনি বলেন, ‘৫ মাস পরে অনেকেই জিজ্ঞেস করছেন আমাদের অর্জন কী? অর্জন হচ্ছে আজকে আমরা এখানে দাঁড়িয়ে নিঃসংকোচে, নির্ভয়ে কথা বলতে পারছি। এটাই আমাদের একটা বড় বিজয় বলে মনে করি। এখানে এবি পার্টিরও একটা বড় ভূমিকা আছে।’
এর আগে গত শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) এবি পার্টির নতুন চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের ভোট গ্রহণ চলে। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সকাল ৯টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। সারা দেশ থেকে আসা কাউন্সিলররা সশরীরে ও অনলাইনের মাধ্যমে ভোট দেন।
জানা যায়, দেশ-বিদেশে অবস্থানরত প্রায় ২ হাজার ৮০০ জন কাউন্সিলর এই নির্বাচনে ভোট দেন। দেশের কাউন্সিলররা সশরীরে উপস্থিত হয়ে এবং প্রবাসী ও অসুস্থতাজনিত কারণে অনুপস্থিত কাউন্সিলররা অনলাইনে ভোট দেন। কাউন্সিলরদের ভোটে এবি পার্টির নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন মজিবুর রহমান মঞ্জু এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।
এবি পার্টির নতুন চেয়ারম্যান মজিবুর, সেক্রেটারি আসাদুজ্জামান
বাসস জানায়, আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) প্রথম জাতীয় কাউন্সিলে দলের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু। জেনারেল সেক্রেটারি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন আইনজীবী আসাদুজ্জামান ফুয়াদ। তারা আগামী তিন বছর দায়িত্ব পালন করবেন।
গতকাল দুপুরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এবি পার্টির প্রথম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করে দলটির অভ্যন্তরীণ নির্বাচন কমিশন। এবি পার্টির জাতীয় কাউন্সিল উদ্বোধন করেন একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহত ব্যক্তিরা। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
গত শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এবি পার্টির চেয়ারম্যান পদে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। সারা দেশের কাউন্সিলররা সেখানে ভোট দেন। প্রবাসী ও অসুস্থ কাউন্সিলররা ভোট দেন অনলাইনে।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তারা হলেন দলের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী, প্রতিষ্ঠাতা সদস্যসচিব মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু ও যুগ্ম আহ্বায়ক কর্নেল (অব:) দিদারুল আলম। মোট ২ হাজার ৮০৬ ভোটারের মধ্যে ভোট দেন ১ হাজার ৬৮৯ জন। এর মধ্যে ৪৫টি ভোট বাতিল হয়। চেয়ারম্যান পদে ১ হাজার ৪০০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু; তার প্রতিদ্বন্দ্বী এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী পেয়েছেন ২১১ ভোট; দিদারুল আলম পেয়েছেন ৩৩ ভোট।
এর আগে গতকাল চেয়ারম্যান পদে ভোট গ্রহণের পর রাতে জেনারেল সেক্রেটারি পদে নির্বাচনের আয়োজন করা হয়। সেখানে ভোটার ছিলেন গত মাসের শেষে নির্বাচিত এবি পার্টির নির্বাহী কমিটির ২১ সদস্য। তবে জেনারেল সেক্রেটারি পদে অন্য কোনো প্রার্থী না থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন আসাদুজ্জামান ফুয়াদ। আজ চেয়ারম্যান ও সেক্রেটারি পদের ফলাফল ঘোষণার পাশাপাশি ২১ জন নির্বাহী পরিষদ সদস্যেরও নাম ঘোষণা করা হয়।


আরো সংবাদ



premium cement