০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ২৫ পৌষ ১৪৩১, ৮ রজব ১৪৪৬
`
বিভিন্ন কার্যকরী প্রকল্প বাস্তবায়ন

তুরস্ক-বাংলাদেশ সম্পর্ক গভীর হচ্ছে

-


টিকা ২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশে ৬০টিরও বেশি দেশে অফিস নিয়ে কাজ করছে। এখানে ‘টিকা’র কর্মকর্তারা বলেন, সংস্থার বহুমুখী প্রকল্পগুলো টেকসই উন্নয়ন উৎসাহিত করতে এবং বাংলাদেশের সাথে তার অংশীদারিত্ব জোরদার করতে তুরস্কের প্রতিশ্রুতি প্রতিফলন। তারা বলেন, সংস্থার কাজ দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব এবং একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির ওপর গুরুত্ব আরোপ করে।

তুরস্কের রাষ্ট্র পরিচালিত সাহায্য সংস্থা টার্কিশ কো-অপারেশন অ্যান্ড কো-অর্ডিনেশন এজেন্সি (টিকা) ২০২৪ জুড়ে বাংলাদেশের উন্নয়নে একটি রূপান্তরমূলক ভূমিকা রেখেছে। ‘টিকা’র ঢাকা প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সেভকি মের্ত বারিস গতকাল বাসসকে বলেন ‘২০২৪ সাল ছিল বাংলাদেশের জন্য একটি অপ্রত্যাশিত ও বিস্ময়কর বছর। সরকারি চাকরিতে কোটা সংরক্ষণের প্রতিবাদে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলন সফল গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়ার পর দেশটি একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার দিকে অগ্রসর হয়েছে। এরপরে আগস্টে একটি প্রলয়ঙ্করী বন্যা ৫০ লক্ষাধিক লোককে ক্ষতিগ্রস্ত করে।’
তিনি বলেন, এই প্রেক্ষাপটে ‘টিকা’ বিভিন্ন চাহিদাসংবলিত প্রকল্পের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে জরুরি চাহিদা মোকাবেলায় কাজ করেছে। বারিস বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি ও মানবিক সহায়তাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কার্যকরী প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে ‘টিকা’ কেবল আর্থসামাজিক অগ্রগতিই নয়, বরং তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরো গভীর করেছে।

ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শিক্ষার অগ্রগতি : ‘টিকা’ ফেনীতে আতাতুর্ক মডেল হাই স্কুলের সংস্কারের মাধ্যমে শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি এবং অবকাঠামো উন্নয়নে মনোনিবেশ করেছে। ১৯৩৯ সালে আধুনিক তুরস্কের স্থপতি মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের নামে প্রতিষ্ঠিত এ স্কুলটি সংস্কার করে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে এখন এক হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে।
‘টিকা’ ক্রমবর্ধমান ও সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্পের জন্য দক্ষতা বৃদ্ধিকে অগ্রাধিকার দিয়ে কক্সবাজার সিটি কলেজে একটি প্রশিক্ষণ কিচেন ও একটি কমন স্পেস চালু করেছে। এ উদ্যোগের লক্ষ্য হলো এই ক্রমবর্ধমান খাতে ১২ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে কর্মসংস্থানের সুযোগ গ্রহণের উপযোগী করে গড়ে তোলা। এ ছাড়া সংস্থা প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষার সুযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে স্কুল বাস চালু করেছে।

স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা শক্তিশালী করা : বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে অবদান রাখার জন্য সংস্থা ঢাকা শিশু (শিশু) হাসপাতালে ফিজিওথেরাপি বিভাগের আধুনিকায়ন করেছে, যেখানে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার ৫০০ শিশুর চিকিৎসা করা হয়।
শরীয়তপুর ও রাঙ্গামাটিতে দু’টি নতুন ‘বি’ শ্রেণীর স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু করা হয়েছে এবং ফেনী ও নোয়াখালীর বন্যাকবলিত এলাকায় সেবায় নিয়োজিত মোবাইল ক্লিনিকগুলো শিশু, নারী ও বৃদ্ধসহ ১০ হাজার মানুষকে চিকিৎসা প্রদান করেছে।

এ ছাড়া ‘টিকা’ অভ্যন্তরীণ ওষুধ এবং দাঁতের সেবায় জোর দিয়ে কক্সবাজারে প্রায় দুই হাজার রোহিঙ্গা রোগীকে বিশেষ সেবা প্রদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব স্পেশাল এডুকেশন অ্যান্ড গাইডেন্সের (বিআইএসইজি) সাথে অংশীদারিত্ব করেছে।
জলবায়ুবান্ধব কৃষির প্রচার : ‘টিকা’ খুলনার জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ কয়রা অঞ্চলে ২০ জন নারী ও যুবককে চটের বস্তায় বাগান এবং উলম্ব চাষাবাদের মতো স্মার্ট চাষবাদ কৌশল প্রশিক্ষণ দিয়েছে। ‘জলবায়ুবান্ধব কৃষি প্রযুক্তি প্রকল্প’-এর দ্বিতীয় পর্যায়ে ৮০ জন নারী কৃষককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে, যা এলাকাটিকে টেকসই কৃষির একটি মডেল গ্রামে রূপান্তরিত করেছে। এ ছাড়া ‘টিকা’ গবেষণার সক্ষমতা বাড়াতে বাংলাদেশ তুলা উন্নয়ন বোর্ডে একটি আণবিক জীববিজ্ঞান পরীক্ষাগার প্রতিষ্ঠা করে কৃষি উদ্ভাবনের প্রতি তার প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন ঘটিয়েছে।

সঙ্কটকালে মানবিক সহায়তা : টিকা আগস্টে ভয়াবহ বন্যার সময়, ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীতে তিন হাজার পরিবারকে খাদ্য, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট এবং স্বাস্থ্যসামগ্রীসহ প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছে। সংস্থার ভ্রাম্যমাণ ক্লিনিকগুলো বন্যাদুর্গতদের গুরুতর চিকিৎসাসেবা প্রদান করেছে। টিকা রমজান মাসে নিম্ন আয়ের পরিবার, এতিম ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে দুই হাজার ৫০০ প্যাক খাদ্য বিতরণ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সহায়তা দিয়েছে এবং কক্সবাজার শরণার্থী শিবিরে এক হাজার পরিবারকে দৈনিক গরম ইফতার পরিবেশন করেছে।

এ ছাড়া পাবনায় ১০০ জন গ্রামীণ নারীকে তাদের আয়ের উৎস সৃষ্টি এবং জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে সক্ষম করে তুলতে ৫০টি সেলাই মেশিন ও ৫০টি দুধেল গাভী প্রদান করেছে।
রোহিঙ্গাদের সহায়তা : কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের জন্য ‘টিকা’র উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে- ক্যাম্পের ৫ নম্বর সেক্টরে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত খেলার মাঠ সংস্কার এবং ১৬ নম্বর ক্যাম্পে একটি বহুমুখী শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা। সংস্থাটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে একটি গ্রন্থাগারের পাশাপাশি বাঁশের কাজ, কাঠের কাজ, ইলেকট্রনিক্স ও সেলাই কাজের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে। মনোবল বাড়ানোর প্রয়াসে টিকা আরাকান ফুটবল লীগ উদ্বোধনে সহায়তা করেছে, যা ২০ হাজার দর্শককে আকর্ষণ করেছে এবং উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীর মধ্যে সৌহার্দ্যরে মেলবন্ধন সৃষ্টি করেছে।
ভাসানচরে উন্নয়ন : ‘টিকা’ ভাসানচর দ্বীপে স্থানান্তরিত ৩৪ হাজার রোহিঙ্গা বাসিন্দার জন্য জরুরি স্বাস্থ্যসেবার দ্রুত অ্যাক্সেস নিশ্চিত করতে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো একটি সামুদ্রিক অ্যাম্বুলেন্স চালু করেছে। এখানকার মূল প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে- খাদ্য নিরাপত্তা উন্নয়নে একটি গবাদিপশুর শস্যাগার, হাঁস-মুরগির খামার ও সবজি বাগান এবং দ্বীপের শিশুদের জন্য একটি খেলার মাঠ প্রকল্প।
‘টিকা’ ভাসানচরে শিশু মৃত্যু রোধে পুকুরের চার পাশে বেড়া দেয়ার মতো নিরাপত্তাব্যবস্থাও বাস্তবায়ন করেছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
সাভারে দুর্ঘটনায় নিহত ৪ জনের পরিচয় মিলল চাদে প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে হামলায় নিহত ১৯ দাবানল ছড়িয়ে পড়ায় বাইডেনের ইতালি সফর বাতিল গ্রিনল্যান্ড দখলের হুমকি নিয়ে ট্রাম্পকে সতর্ক করল জার্মানি-ফ্রান্স ২২৭৬ নেতাকর্মীকে ক্রসফায়ার, ১৫৩ জনকে গুমের অভিযোগ বিএনপির দিনাজপুরে শীতের তীব্রতা বেড়েই চলছে মাঠে আদালত স্থাপনের প্রতিবাদে স্থানীয় ও ঢাকা আলিয়ার শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ রাজশাহীসহ ৫ জেলার ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বিস্তৃত হতে পারে ইউক্রেনে রাশিয়ার বোমা হামলা, নিহত ১৩ হালুয়াঘাটে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে মোটরসাইকেলের ধাক্কা, নিহত ২ জামায়াত নেতা আজহারের মৃত্যুদণ্ডের রিভিউ শুনানি ২৩ জানুয়ারি

সকল