এনসিটিবির লট বিভ্রাটে পাঠ্যবই মুদ্রণে বিলম্ব
মার্চের আগে সব বই পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা- শাহেদ মতিউর রহমান
- ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:১৩
একটি শ্রেণীর একাধিক বই মিলে তৈরি হয় পৃথক পৃথক লট। আবার প্রেস মালিকদের যখন বই মুদ্রণের টেন্ডার বা কার্যাদেশ দেয়া হয় তখন এই লট অনুযায়ীই কাজ দেয়া হয়। ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের বেশ কিছু বইয়ের পাণ্ডুলিপি নতুন করে তৈরি করায় এবং জুলাই-আগস্টের স্মৃতিকথার কনটেন্ট কয়েকটি শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ে যুক্ত করায় এ বছর পাঠ্যপুস্তক ছাপায় বিলম্ব হচ্ছে। তবে যেসব ক্লাসের পাঠ্যবইয়ে নতুন কোনো কনটেন্ট যুক্ত হয়নি কিংবা যেসব শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ে ন্যূনতম কোনো পরিবর্তনও আসেনি সেই বইও এবার ছাপায় বিলম্ব হয়েছে। প্রকৃত অর্থে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) এই লটের বিভ্রাটের কারণেই বই ছাপতে দেরি হয়েছে বলে জানিয়েছে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের সাথে জড়িতরা।
এ দিকে এ বছর পাঠ্যবই ছাপার কাজে বিলম্ব হওয়ার এমন বাস্তবতা মেনে নিয়েই আগামী মার্চ পর্যন্ত সব শ্রেণীর সব বই পাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের অপেক্ষা করতে বলেছেন স্বয়ং শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। গতকাল তিনি বলেছেন, আগামী মার্চের আগে সব শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই পৌঁছানো সম্ভব হবে না। বিগত সময়েও মার্চের আগে পুরোপুরি বই দেয়া হয়নি। আর এ বছর আমরা কার্যক্রমও শুরু করেছি দেরিতে। এ ছাড়া আমাদের বেশ কিছু বই পরিমার্জন করতে হয়েছে। বইয়ের সিলেবাস, কারিকুলাম নতুনভাবে করতে হয়েছে। বইয়ের সংখ্যাও আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে। সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
অপর দিকে পাঠ্যবই মুদ্রণের সাথে সম্পৃক্ত কয়েকজন কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে বলেন, এবার কিছু বইয়ের কনটেন্ট পরিমার্জন করা হয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ বইয়ের কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। বিশেষ করে প্রাথমিকের পাঁচটি শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ের কোনোটিতেই কোনো পরিবর্তন আসেনি। তাহলে প্রাথমিকের বইগুলো ছাপতে এত দেরি হচ্ছে কেন? বছরের শুরুর দিনে প্রথম দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শ্রেণীর কিছু বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া সম্ভব হলেও চতুর্থ এবং পঞ্চম শ্রেণীর সব বই এখনো স্কুলে স্কুলে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।
আবার মাধ্যমিকের ক্যারিয়ার গাইডলাইন, গণিত, গার্স্থস্থ্য বিজ্ঞান, শরীর চর্চা, শারীরিক শিক্ষা বিজ্ঞান, ধর্মীয় শিক্ষা এসব বইয়েও কোনো পরিবর্তন আসেনি। এসব বইয়ে পরিমার্জনের কোনো উপাদানও ছিল না। এই বইগুলো আগেই ছাপার সিদ্ধান্ত নেয়া হলে জানুয়ারি মাসের আগেই অর্ধেক বই ছাপা সম্ভব ছিল। কিন্তু যেহেতু বই মুদ্রণের কাজ এবং টেন্ডার প্রক্রিয়াটিও এনসিটিবির নিয়ম মতে লট অনুযায়ী করতে হয় তাই এককভাবে কোনো বইয়ের মুদ্রণের কার্যাদেশ দেয়ার সুযোগ ছিল না। অন্য দিকে বাংলা, ইতিহাস, সামাজিক বিজ্ঞান এই ধরনের বইয়ে পরিবর্তন পরিমার্জন করাও দরকার ছিল। কিন্তু এনসিটিবি যেভাবে লট বিভাজন করেছে সেখানে এই ধরনের ভাগ বা বিভাজনের জন্য চিন্তা করা হয়নি। ফলে কোনো একটি লটের কাজ বিলম্ব হলে ঐ লটের সব বইয়ের মুদ্রণের কাজেই বিলম্ব হয়েছে।
২০২৫ শিক্ষাবর্ষে এনসিটিবি প্রণীত নতুন পাঠ্যপুস্তকের পরিমার্জনের কাজে শুরু থেকেই সম্পৃক্ত ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ রাখাল রাহা। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কথা তার সাথে। পাঠ্যবই মুদ্রণে বিলম্ব এবং লট বিভ্রাটের বিষয়ে তিনি এই প্রতিবেদকে বলেন, বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিতেও এসেছে। আমরা উপদেষ্টাও বিষয়টি জানিয়েছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও নতুনভাবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার চিন্তাভাবনা করছে।
তিনি জানান, আগামী বছর থেকে যেসব বই আগে প্রয়োজন হবে সেগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আগেই ছাপার বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হবে। এ ছাড়া এনসিটিবিকেও বইয়ের লট এভাবে সাজাতে হবে যাতে শিক্ষার্থীদের চাহিদা এবং মৌলিক বইগুলো আগে ছাপার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া যায়।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, এ বছর আমরা দায়িত্ব নেয়ার আগেই এই লট বিভাজন হয়ে গিয়েছিল। ফলে আমরা শেষ সময়ে এসে লটের এই বিভাজন পুনর্বিন্যাস করতে পারিনি। তবে আমরা চেষ্টা করবো আগামী বছর লটের এই বিভাজন নতুনভাবে সাজাতে।
তিনি আরো বলেন, অতি গুরুত্বপূর্ণ বই এবং মৌলিক বইগুলোর সমন্বয়ে লট পুনর্বিন্যাস করা হবে। একইভাবে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য যে বই দরকার হয় এমনকি বিদেশী মিশনগুলোতে যেসব বই পাঠাতে হয় সেগুলো যাতে আগে প্রিন্ট করা যায় সেভাবেই লটের আকার ও ধরন নির্ধারণ করা হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা