০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১, ৭ রজব ১৪৪৬
`
বিএসইসি-আইসিবির চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি

সংস্কার শেষে ভালো অবস্থানে যাবে শেয়ারবাজার : অর্থ উপদেষ্টা

-

অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সংস্কারের কারণে শেয়ারবাজার সাময়িকভাবে খারাপ অবস্থায় আছে। সংস্কারকাজ শেষে শেয়ারবাজার ভালো অবস্থানে ফিরবে। গতকাল রাজধানীর নিকুঞ্জে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ভবনে শেয়ারবাজার অংশীদারদের সাথে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
প্রথমবারের মতো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পরিদর্শন করেন অর্থ উপদেষ্টা। এ সময় তিনি বলেন, দীর্ঘ মেয়াদে অর্থায়নে ব্যাংকের সাথে শেয়ারবাজার সামঞ্জস্য রাখা হবে। ভালো সরকারি ও বেসরকারি কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করা হবে। প্রাকৃতিকভাবে ভালো শেয়ারের মাধ্যমে শেয়ারবাজার দীর্ঘমেয়াদে ভালো হবে।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, শেয়ারবাজার বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানোর জন্য যথেষ্ট সহায়তা করছে সরকার। এ জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাকে সাপোর্ট দেয়া হচ্ছে। আইসিবিকে ৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে। শেয়ারবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতেই এসব করা হয়েছে। পৃথিবীর বড় বড় দেশগুলোতে ইন্ডাস্ট্রিগুলোর জন্য লং টার্ম ফাইন্যান্সিং শেয়ারবাজার থেকে আসে। ব্যাংকের টাকা হলো জনগণের জমা করা টাকা। তাই বড় এবং দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের জন্য ব্যাংকের ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে। আমরা শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট সবার কাছ থেকে তাদের সুবিধা-অসুবিধাগুলো শুনেছি। ইতোমধ্যে এগুলোর মধ্যে কিছু সমস্যা সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, শেয়ারবাজার শুধু সূচক বেড়ে ৯ হাজার পয়েন্ট হওয়া ভালো কিছু নয়, সেটা স্বাভাবিকও না। সেটা কৃত্রিমভাবে বাড়ানো হয়। সেখানে কারসাজির মতো সমস্যা থাকে। উত্থান-পতনের মাধ্যমে স্বাভাবিকভাবে বাজার ভালো করতে হবে। বর্তমানে ব্যাংকে ৮-৯ শতাংশ পর্যন্ত আমানতের সুদ পাওয়া যায়। যেখানে বাজারে ১২ শতাংশ হলেও অনেক আমানতকারী সেটা নিরাপদ মনে করে সেখানে যায়।
তিনি বলেন, শেয়ারবাজার অনেক সংস্কার হচ্ছে। এ জন্য সাময়িক সময় কিছু সমস্যা মেনে নিতে হবে। শেয়ারবাজারের সাথে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্পর্ক আরো মজবুত করতে আজকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে আসা হয়েছে। আমাদের দেশে বেশির ভাগ ব্যবসা করে ব্যাংক থেকে। ভালো কোম্পানিগুলো শেয়ার ছাড়তে চায় না। ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে আরেকটা সুবিধা আছে, সেটা হচ্ছে, টাকা নিয়ে ফেরত দেয়া লাগে না। ব্যবসার ক্ষেত্রে ঋণ আর শেয়ারের বিষয়ে সমন্বয় না করলে বাজার ভালো হবে না। এ জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া এবং শেয়ারবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের ক্ষেত্রে সামঞ্জস্য করতে হবে। সে ক্ষেত্রে বাজারে ভালো কোম্পানি আনতে হবে, যেটা বাংলাদেশে হয় না।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বাজারের মধ্যস্থতাকারীরা শেয়ারবাজারের অংশ। তারা খারাপ নাকি ভালোভাবে ব্যবসা করবে, সেটা তাদের ওপর নির্ভর করে। এতে বাজার ভালোও হতে পারে, খারাপও হতে পারে। এটা গত ১৫ বছরে দেখে এসেছেন। এখন বাজার ভালো করার সময় এসেছে। গত ১৫ বছরে এ সুযোগ পাওয়া যায়নি। তাই শেয়ারবাজার ভালো করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের সবাই আগ্রহী। তার জন্য প্রয়োজনে নীতি পরিবর্তন করা হবে। তবে সেটা দ্রুত করতে হবে। এ সরকার দীর্ঘ মেয়াদে থাকবে না। কিন্তু বাজারকে দীর্ঘ মেয়াদে ভালো রেখে যেতে হবে। এ জন্য দ্রুত কাজ করতে হবে।

ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের উদ্যোগে আয়োজিত এ আলোচনা সভায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই), ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ), বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ), সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল), সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিসিবিএল), ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি), ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বিএসইসি-আইসিবির চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ
এ দিকে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ এবং ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদের পদত্যাগ দাবিতে বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্বে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন।
গতকাল রাজধানীর নিকুঞ্জে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ভবনের সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের দৃষ্টি আকর্ষণের লক্ষ্যে ডিএসইর সামনে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন দাবি উপস্থাপন করেন বিনিয়োগকারীরা।

মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের সমন্বয়ক নুরুল ইসলাম মানিক। এ সময় বিনিয়োগকারীরা বলেন, শেয়ারবাজারে দরপতন অব্যাহত আছে। এ পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এখন বিনিয়োগকারীদের একটাই দাবি বিএসইসির চেয়ারম্যানের পদত্যাগ। নতুন চেয়ারম্যান অযোগ্য। তাকে দিয়ে এ শেয়ারবাজারে ভালো কিছু আশা করা যায় না। তার প্রতি বিনিয়োগকারীদের কোনো আস্থা নেই। আমাদের টাকা ও মান-সম্মান গেছে।
বিনিয়োগকারিরা আরো বলেন শেয়ারবাজারে ধারাবাহিক দরপতনের ফলে প্রতিদিন বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ফোর্সড সেল করা হচ্ছে। এতে প্রতিদিনই কোনো না কোনো বিনিয়োগকারী নিঃস্ব হচ্ছেন। দুই মাসে টানা দরপতনের ফলে আমাদের বিনিয়োগকৃত অর্থের ৭০ শতাংশ কমে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজার বিনিয়োগকারীদেরকে বাঁচাতে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের দৃষ্টি আকর্ষণ ও হস্তক্ষেপ কামনা করেন।


আরো সংবাদ



premium cement