০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১, ৭ রজব ১৪৪৬
`

মাতৃগর্ভেই বাবা হারান শহীদ শাহজাহানের ছেলে ওমর ফারুক

-

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে গত ১৬ জুলাই ঢাকায় পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান ওমর ফারুকের বাবা শাহজাহান। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পাপোশ বিক্রেতা শাহজাহানের সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া সন্তান ওমর ফারুক ছিল তখন (৪ মাসের) মায়ের গর্ভে। শাজাহানকে ঢাকার আজিমপুর গোরস্থানে দাফন করা হয়। এরপর থেকে শাহজাহানের স্ত্রী ফাতেহা ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলার ছোটধলি গ্রামে দরিদ্র বাবার বাড়িতে আশ্রিত আছেন। ২৭ ডিসেম্বর বিকেলে ভোলা শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে জন্ম হয় শহীদ শাহজাহানের ছেলে ওমর ফারুকের। ওমর ফারুকের পৃথিবীতে আগমনকে ঘিরে স্বজনদের মধ্যে আনন্দ উচ্ছ্বাস বয়ে যায়। মায়ের আদর সোহাগ পেলেও ওমর ফারুক পেল না বাবা শাহজাহানের আদর। মায়ের কোল আলোকিত করে আসা ওমর ফারুককে ঘিরে হাসপাতালে উচ্ছ্বাস দেখা দিলেও নবজাতকের ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশার কথা জানান ওমর ফারুকের দাদী আয়েশা বেগম।
তিনি জানান, আমি আমার সন্তান শাহজাহানকে হারিয়েছি কিন্তু আমার নাতি ওমর ফারুককে হারাতে চাই না। ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে ৫৫ নং ওয়ার্ডের চান মসজিদ এলাকার বাসিন্দা আয়েশা বেগম। আয়েশা বেগমের তিন সন্তানের মধ্যে জুলাই বিপ্লবে শহীদ হওয়া শাহজাহান তার মেজো সন্তান। এ ছাড়াও তার মো: শাওলিন ও শাওন নামের দু’টি ছেলে এবং হাফসা নামের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে।

গতকাল ৭ জানুয়ারি ঢাকার কামরাঙ্গীরচরের চান মসজিদ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, আয়েশা বেগমের ছোট সংসার। নিজে সেলাই কাজ করেন এবং কয়েকজন মানুষকে রান্না করে খাওয়ানোর মাধ্যমে যে টাকা পান তা দিয়ে তার সংসার চলে। বড় ছেলে শাওলিনের বয়স ২৮ বছর। পেশায় রিকশাচালক। অন্য ছেলে শাওন কাজ করে সামান্য আয় করেন। মেয়ে হাফসা একই মহল্লায় স্বামীকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকেন।
আয়েশা জানালেন, তার ছেলে শাহজাহান খুব কর্মঠ ছিলেন। সবসময়ই কিছু না কিছু করার চেষ্টা করত। জুলাই আন্দোলনের সময় কাজের ফাঁকে ফাঁকে ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে অংশগ্রহণ করত। ১৬ জুলাই ২০২৪ বিকেল ৪টায় ছাত্রদের সাথে মিছিলে থাকা অবস্থায় পুলিশের ছোড়া গুলি এসে তার ছেলে শাহজাহানের বুকে লাগে। ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়ে যায়। ছাত্ররা প্রথমে তাকে উদ্ধার করে ধানমন্ডি পপুলার হাসপাতালে নিয়ে যায়। পপুলার হাসপাতালে ভর্তি করতে না পারায় পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। একই দিন সন্ধ্যায় তিনি জানতে পারেন তার ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। লাশ ঢাকা মেডিক্যালের মর্গে রয়েছে। পরে তিনি মর্গে গিয়ে অনেকগুলা লাশের মধ্যে থেকে তার সন্তান শাহজাহানের লাশ শনাক্ত করেন। পুলিশ প্রথমে লাশ দিতে না চাইলে পরে এলাকার লোকজন নিয়ে হাসপাতালের ভিতরে আন্দোলন শুরু করেন। আন্দোলনের এক পর্যায়ে শাহজাহানের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পুলিশ তার মা আয়েশা বেগমের কাছে হস্তান্তর করতে বাধ্য হয়। পরে তাকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়। আয়েশা বেগম জানান, তিনিই জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে সরকারিভাবে পাঁচ লাখ টাকা অনুদানের ৩০ পারসেন্ট (শহীদ শাহজাহানের মায়ের জন্য) হিসেবে এক লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা পেয়েছেন তার পুত্রবধূ শাহজাহানের স্ত্রী ৭০ শতাংশ হিসাবে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা পেয়েছেন। তবে তিনি তার নাতি ওমর ফারুককে ফেরত চান। নিজের কাছে রাখতে চান। লেখাপড়া করিয়ে মানুষের মতো মানুষ করতে চান। তবে এ দাবি মানতে নারাজ সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া ওমর ফারুকের মা ও জুলাই বিপ্লবে শহীদ হওয়া শাহজাহানের স্ত্রী ফাতেহা বেগম।

ফাতেহা বেগম বর্তমানে ওমর ফারুককে নিয়ে ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলার ছোটধলী গ্রামে বাবার বাড়িতে আশ্রিত আছেন। তিনি বলেন, ওমর ফারুক আমার প্রথম সন্তান। আমার স্বামীর একমাত্র স্মৃতি। শাহজাহানের স্ত্রী জানান, মেঘনার ভাঙনে সব হারিয়ে তারা ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে বসবাস শুরু করেন। আড়াই বছর আগে তার সাথে শাহজাহানের বিয়ে হয়। চার মাসের গর্ভবতী স্ত্রীকে ঘরে রেখে ১৬ জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগদান করেন তিনি। পরে রাজধানীর সায়েন্স ক্লাব এলাকায় পুলিশের গুলিতে শহীদ হন শাহজাহান।
শাহজাহান ফাতেহা দম্পতির প্রথম সন্তান ওমর ফারুক। দরিদ্র ফাতেহা স্বামীর অনুপস্থিতিতে নানা দুঃখ কষ্টের দরিয়া পাড়ি দিয়ে সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখান এখন শঙ্কা ছেলেকে কিভাবে বড় করে তুলবেন?
ফাতেহা জানান, ক্ষুদ্র পাপোশ ব্যবসায়ী স্বামী টাকা পয়সা বা সম্পদ কিছুই রেখে যেতে পারেননি। ঘরবাড়িও নেই। বর্তমানে বাবার পরিবারে থাকেন। ছেলেকে বড় করে তোলা, পড়াশোনাসহ ভরণপোষণ নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন।
ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রাহিম ইসলাম ও কামরুন নাহার এনি জানান, শহীদ শাহজাহানের স্ত্রী সন্তানের পুনর্বাসনের জন্য সরকারের পাশাপাশি তারাও এগিয়ে আসবেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement