খড়ের বিছানায় অজগরের আয়েশি শীতনিদ্রা
- রাশিদুল ইসলাম
- ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:০৭
ঢাকার মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানায় সরীসৃপদের শীতনিদ্রা চলছে। অন্তত না খেয়ে মাস ছয়েক ঘুমে কাটাবে সাপ, কুমীরসহ বিভিন্ন প্রজাতির সরীসৃপ। চিড়িয়াখানায় অজগরের খাঁচায় গিয়ে দেখা গেল চারটি বিশাল আকারের অজগর খড়ের বিছানায় গাদাগাদি করে কুণ্ডলী পাকিয়ে শীতনিদ্রায় ব্যস্ত। নড়ন চড়ন নাওয়া খাওয়া নেই। সিনিয়র সাইন্টিফিক অফিসার সঞ্জীব কুমার বিশ্বাস জানালেনÑ প্রচলিত অর্থে হাইবারনেশন বা শীতনিদ্রা শুরু হয়ে গেছে সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীগুলোর। আবার ব্রুমমেশনও চলছে।
গ্রীষ্মে সরীসৃপগুলো খাদ্য সঞ্চয় করে রাখে শরীরে। মানে যথেষ্ট পরিমাণ খাবার খেয়ে মোটাতাজা হয়ে থাকে কঠিন শীত পাড়ি দিতে হবে বলে। আসলে সরীসৃপগুলোর রক্ত শীতল। শীতে রক্তের তাপমাত্রা যাতে আরো কমে এসব প্রাণী মারা না যায় তাই এগুলো শীতনিদ্রায় চলে যায়। একটু নিরাপদ আড়ালে ঘাপটি মেরে থাকা আর কি! পানি পর্যন্ত স্পর্শ করবে না প্রাণীগুলো এবং কম অক্সিজেন পেলেও তারা টিকে থাকতে পারে।
আদতে হাইবারনেশন হলো ঋতুভিত্তিক বৈষম্য, যা নি¤œ শরীরের-তাপমাত্রা, ধীর শ্বাস-প্রশ্বাস, হৃদস্পন্দন এবং নি¤œ বিপাকীয় হার যা দিয়ে প্রাণীদের চিহ্নিত করা হয়। পর্যাপ্ত খাবার না পাওয়া গেলে হাইবারনেশন শক্তি সংরক্ষণের কাজ করে। এই শক্তি সঞ্চয় অর্জনের জন্য, শীতল রক্তের প্রাণী তার বিপাকীয় হার এবং এর ফলে তার শরীরের তাপমাত্রা হ্রাস করে। হাইবারনেশন দিন, সপ্তাহ বা মাস স্থায়ী হতে পারে-প্রজাতি, পরিবেষ্টিত তাপমাত্রা, বছরের সময় এবং প্রাণীর শরীরের অবস্থার ওপর নির্ভর করে। হাইবারনেশনে যাওয়ার আগে প্রাণীদের তাদের সুপ্ত সময়কাল ধরে স্থায়ী হওয়ার জন্য যথেষ্ট শক্তি সঞ্চয় করতে হয়, সম্ভবত পুরো শীতকাল পর্যন্ত। বড় প্রজাতি হাইপারফেজিক হয়ে যায়, প্রচুর পরিমাণে খাবার খায় এবং চর্বি জমার আকারে তাদের শরীরে শক্তি সঞ্চয় করে। অনেক ছোট প্রজাতিতে, খাদ্য ক্যাশিং খাওয়া এবং মোটা হয়ে যাওয়া প্রতিস্থাপন করে।
কিন্তু ব্রুমেশন? সঞ্জীব কুমার বিশ্বাস বলেন, এটা হচ্ছে সরীসৃপগুলোর হালকা ঘুমের অভ্যাস। সজীব বা সক্রিয় না থেকে তারা খেতেও পারে নাও পারে। কোনো কোনো সাপ বা কুমীর ব্রুমেশনে খেলেও স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে পাঁচ ভাগের একভাগ খায় মাত্র। বিশেষ করে বড় কুমীরগুলো খেতে চায় না। কিন্তু ছোটগুলো মানে যেগুলো বেড়ে উঠছে তারা ব্রুমেশনে মাঝে মধ্যে খায়। এমনিতে একটি কুমীর সপ্তাহে একবার দুই-চার কেজি গোশত খায় মাত্র। কুমীরের জিহ্বা নেই। প্রাণীটি হা করে খাবার গিলে খায়। নিঃশব্দে চলাচলে ওস্তাদ কুমীর। হা করে রোদ তাপায়। তার মানে হা করে রোদ থেকে প্রাণীটি তার শরীরে তাপ চালান করে দেয় যা তার শীতল রক্তকে গরম করতে সাহায্য করে। একে বাসকিং বলে। মানুষ মিনিটে ১৬ থেকে ১৮ বার শ্বাস-প্রশ্বাস নিলেও কুমীর মিনিটে মাত্র ১ থেকে ৪ বার শ্বাসপ্রশ্বাস নেয়।
অনেক সময় মরার মতো কুমীর পড়ে থাকে বলে চিড়িয়াখানায় দর্শকরা মনে করে প্রাণীগুলো দুর্বল। ঠিকমতো খাবার পায় না। হয়তো হা করে প্রাণীটি কয়েক কেজি গোশত খেয়ে পড়ে থাকলেও কোনো কোনো দর্শক মন্তব্য করেন এত অল্প খাবারে কি হয়, আস্ত এক গরু দেয়া দরকার!
ব্যাঙ শীতনিদ্রার সময় গাছের ফাঁক ফোকরে বা গর্তে চলে যেতে অভ্যস্ত। অজগরের খাঁচায় যেয়ে দেখা গেল খড়ের বিছানায় আয়েশী শীতনিদ্রা চলছে। শীতের শেষে এক-একটি অজগর এপ্রিল নাগাদ ২০ থেকে ৩৫টা পর্যন্ত ডিম দেবে। এরপর কুণ্ডলী পাকিয়ে ডিমে তা দেয়ার ৫৫ দিনের মাথায় ডিমগুলো প্রাণীটি সরিয়ে নেবে। এর পাঁচ দিনের মাথায় ডিম ফুটে বাচ্চা অজগর বের হলে মা অজগরের সাথে তার সম্পর্ক চিরদিনের মতো বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সাধারণত বাচ্চাগুলো সরিয়ে বিশেষ যতেœ বড় করে তোলা হয় চিড়িয়াখানায়।
কিছু প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী গর্ভধারণের সময় হাইবারনেট করে। স্ত্রী কালো ভাল্লুক তাদের সন্তান জন্ম দেয়ার জন্য শীতের মাসগুলোতে শীতনিদ্রায় চলে যায়। স্থল কাঠবিড়ালি, অন্যান্য ইঁদুর, ইউরোপীয় হেজহগ এবং অন্যান্য কীটপতঙ্গ, মনোট্রেম এবং মার্সুপিয়াল শীতনিদ্রায় অভ্যস্ত। হাইবারনেশনের সময় ভাল্লুক তাদের প্রোটিন ও প্রস্রাব পুনর্ব্যবহার করতে সক্ষম, মানে তারা কয়েক মাস প্রস্রাব করে না। তারা বিপাকীয় পানি দিয়ে হাইড্রেটেড থাকে যা ভালুকের পানির চাহিদা মেটাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে উৎপাদিত হয়। তবে পাখিরা শীতনিদ্রায় না গেলেও শীতে বেশ কিছুটা অলস হয়ে পড়ে। একে টর্পোর বলে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা