০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১, ৭ রজব ১৪৪৬
`
সীমান্তে ফেলানী হত্যার ১৪ বছর

ভারতীয় আগ্রাসন বন্ধ ও সীমান্ত হত্যা বন্ধের দাবিতে সমাবেশ

-

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে ফেলানী খাতুন নিহত হওয়ার ১৪ বছর হয়ে গেলেও থেমে নেই সীমান্ত হত্যা। সবশেষ গত বছরে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সীমান্ত এলাকায় বিএসএফের গুলিতে প্রাণ হারান আরেক কিশোরী স্বর্ণা দাস। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান মতে, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বিএসএফের গুলিতে ও নির্যাতনে অন্তত ৬০৭ জন বাংলাদেশী নিহত হয়েছে। সীমান্তে বিএসএফের হত্যাকাণ্ড এবং ভারতীয় আগ্রাসন বন্ধের দাবি তুলেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা।
গতকাল বিকেলে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সামনে জাতীয় নাগরিক কমিটির ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানার প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে এ দাবি তোলা হয়। সমাবেশে নাগরিক কমিটি কেন্দ্রীয় নেতা ও ঢাকা মহানগরের প্রতিনিধি সীমান্ত হত্যা বন্ধ, বিচার দাবি এবং ভারতীয় আগ্রাসন বন্ধের দাবি তোলেন।

এতে অংশ নেয়া নাগরিক কমিটির মুখপাত্র ও সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ভারত ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকে হাইজ্যাক করে বছরের পর বছর বাংলাদেশের মানুষকে তারা সীমান্তে নির্বিচারে হত্যা করে আসছে। বিষয়টি শুধু সীমন্ত হত্যার মধ্যে নয়, বিষয়টি আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী। এই বাংলাদেশে দিল্লির সেবাদাস কেউ ক্ষমতায় আসবে না। ভারতকে বলব, আপনাদের পলিসি বদলান, ন্যায্যতার সম্পর্ক গড়ুন নতুবা এই নতজানু সম্পর্কের কারণে আপনাদের পস্তাতে হবে। ১৪ বছর আগে শিশু ফেলানীকে গুলি করে ঝুলিয়ে রাখা হয়। যখন সে ঝুলিয়ে ছিল তখনও সে জীবন্ত ছিল, ন্যূনতম মানবিকতা ও শ্রদ্ধাবোধ থাকত তাহলে ফেলানীকে সেখান থেকে নামিয়ে চিকিৎসা করা হতো কিন্তু তারা সেটি করেনি। তাই তো বাংলাদেশের মানুষ বলছে দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা-ঢাকা। গত ১৬ বছর ধরে ৬ শতাধিক মানুষকে পাখির মতো হত্যা করেছেন, আমরা জানতাম ভারতের দালাল সরকার শেখ হাসিনা এসব বিষয়ে কথা বলবে না, তবে এবার আমরা বিশ্বাস করি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সীমান্ত হত্যার প্রতিবাদে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গিয়ে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

এ সময় তিনি বিগত সময়ে ফেলানীসহ সব সীমান্ত হত্যার বিচার, ভারত-বাংলাদেশের সব চুক্তি জনসমক্ষে আনার দাবি এবং যেসব চুক্তি নতজানু ও বাংলাদেশের স্বার্থকে রক্ষা করে না, সেগুলোকে বাতিলের দাবি জানান।
এ দিকে বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশ সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ঢাবির রাজু ভাস্কর্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় বিক্ষোভ সমাবেশ। এতে বক্তব্য রাখেন ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম। তিনি বলেন, ১৪ বছর হয়ে গেছে কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা বিচার পাইনি। শুধু আমাদের আশ্বাস দেয়া হয়েছিল, এই স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা আমাদের চাপে রাখছিল, কোনো কথাই বলতে দেয়নি। বর্তমান সরকারের কাছে অনুরোধ থাকবে যেন আমার ফেলানীর সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার নিশ্চিত করা হয়। নির্মমভাবে কাঁটাতারে ঝুলিয়ে ফেলানীকে কষ্ট দিয়ে হত্যা করা হয়েছে, তাকেও যেন ওইভাবে শাস্তি দেয়া হয়। আমি চাই, আর যেন কারো মায়ের বুক খালি না হয়। সবাই মিলে রুখে দাঁড়ান যেন সীমান্ত হত্যা বন্ধ হয়। তিনি আরো বলেন, ১৪ বছর ধরে আমি আমার ফেলানীর বিচারের জন্য কাঁদতেছি, এখনো বিচার পাইনি! এখন নতুন সরকার আসছে; এবার আশা করি, আমি বিচার পাবো।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মাহিন সরকার বলেন, ভারত সরকারের সেই দুরভিসন্ধি প্রকাশ পেয়েছে হাসিনাকে আশ্রয় দেয়ার মধ্য দিয়ে। ৫ আগস্ট পর দেশের প্রেক্ষাপট পাল্টিয়েছে, এখন ভারতের সাথে ন্যায্যতার সম্পর্ক। বিশ্বের কোন দেশের সীমান্তে এত লাশ পড়েনি। আমরা চাই, এই সরকার যেন আন্তর্জাতিক আদালতে এসব সীমান্ত হত্যার বিচার নিশ্চিত করে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেয় এবং বক্তব্য রাখেন।


আরো সংবাদ



premium cement