আধুনিক এফডিসির মাস্টারপ্লানের কারিগর জিয়াউর রহমান
১০৫ একর জায়গার তিনটি অংশ লিজ দেয়া হয়েছে- মনিরুল ইসলাম রোহান
- ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:১১
সময়ের পরিক্রমায় নানা রঙ চঙ লাগিয়ে আলোচনায় থাকার চেষ্টা করলেও বাংলাদেশ ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন—বিএফডিসির মাস্টারপ্লানের প্রকৃত কারিগর ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। ১৯৫৯ সালে ঢাকার তেজগাঁওয়ে ইনডোর শুটিংয়ের জন্য ৭ একর জমির ওপর নির্মিত হয় এফডিসি। পরবর্তীতে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে একটি আধুনিক উন্নত ও আন্তর্জাতিকমানের এফডিসি গড়ে তোলার জন্য ১৯৮০ সালে জিয়াউর রহমানের নির্দেশনায় তখনকার তথ্য মন্ত্রণালয় ১০৫ দশমিক ১২ একর বা ৩১৭ দশমিক ৫২ বিঘা জমি বিএফডিসিকে বরাদ্দ দেয়। ঢাকার অদূরে গাজীপুরের কবিরপুরে অবস্থিত এ জায়গাটি ছিল রেডিও বাংলাদেশের। ওই বছরের ১ জুলাই ফিল্ম সিটি নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও এরপর শুধু নাম পরিবর্তনেই কেটে গেছে চার দশকেরও বেশি সময়। দীর্ঘ এ সময়ে সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে ফিল্ম সিটির নামও পরিবর্তন হয়েছে দফায় দফায়, কিন্তু ফিল্ম সিটির আধুনিকায়নের কাজ তেমন আর আগায়নি।
১৯৮০ সালে ১০৫ একর জমি বরাদ্দ পাওয়ার পর এফডিসির পক্ষ থেকে ঘোষণানুযায়ী ‘জিয়া ফিল্ম সিটি’ নামে দ্রুত কাজ শুরুর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ওই প্রকল্প শেষ হওয়ার সময়সীমা ছিল ১৯৮৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত। পরবর্তীকালে নানা অজুহাতে বার বার প্রকল্পটির কাজ পিছিয়ে যায়। বর্তমানে ওই জমির মধ্যে তিনটি অংশ— লেক, খেজুর গাছ ও ৬০ বিঘা জমি স্বদেশ এন্টারপ্রাইজকে লিজ দেয়া হয়েছে। ওই কোম্পানি গত তিন বছর ধরে ভোগদখল করছে। আগামী জুন মাসে তাদের লিজের চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। জুলাই থেকে নতুন করে বরাদ্দ দেয়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের চিন্তাভাবনায় রয়েছে বলে বিএফডিসি সূত্রে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে জানান, গত ২০ বছর ধরে কয়েকটি কোম্পানিকে ধাপে ধাপে লেক, খেজুর গাছ ও ৬০ বিঘা জমি— এই তিনটি অংশ লিজ দেয়া হচ্ছে। সর্বশেষ লিজের চুক্তি অনুযায়ী প্রতি বছর ৬ লাখ ১০ হাজার টাকা পাচ্ছে এফডিসি। এফডিসির একটি আয় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় যদি মনে করে, আধুনিক এফডিসি বিনির্মাণে এটা ব্যাঘাত ঘটছে তাহলে এক মাসের নোটিশে তাদের সাথে চুক্তি বাতিল করার সুযোগ রয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে ‘জিয়া ফিল্ম সিটি’র নাম পরিবর্তন করে ‘বঙ্গবন্ধু ফিল্ম সিটি’ নাম দিয়ে এর কাজ শুরু করে। ওই প্রচেষ্টাও থেমে যায়। সর্বশেষ ২০০২ সালের ২৮ জুন এফডিসির তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক অভিনেতা ওয়াসিমুল বারী রাজীব ‘জিয়া চলচ্চিত্র নগরী’ নামে প্রকল্পটির নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। সে সময় কিছু গাছ ও ১৫ কক্ষের একটি আবাসন ভবন নির্মাণ করা হয়। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে এ প্রকল্পের নতুন নামকরণ করে ‘বাংলাদেশ ফিল্ম সিটি’। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয়বার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসে ২০১৫ সালে আবারো নাম পরিবর্তন করে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফিল্ম সিটি’ হিসেবে প্রকল্পের কাজ শুরু করে। তিনটি ফেজে পুরো ফিল্ম সিটির কাজ শেষ করার জন্য জিয়াউর রহমানের আমলের মাস্টার প্লানের ওপর ঘষামজা করে নতুন আরেকটি মাস্টারপ্লানও করা হয়। প্রথম ধাপে ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সীমানা প্রাচীর ও কিছু অবকাঠামো নির্মাণসহ অন্যান্য কাজে একনেক অনুমোদিত ১৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে বলে এফডিসি সূত্রে জানা গেছে। ২০২৩ সালে দ্বিতীয় ধাপের কাজের জন্য একনেক সভায় ৩৮০ কোটি টাকা অনুমোদন দেয়া হয়। যদিও পরবর্তীতে ৫০৭ কোটি টাকা সংশোধিত ব্যয় ধরে নতুন করে একনেকে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপের ওই অর্থ এখন একনেকের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানা গেছে।
এফডিসি সূত্র বলছে, ছাত্র—জনতার গণ—অভ্যুথানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিএফডিসি কতৃর্পক্ষ গাজীপুরের কবিরপুরে অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ এই ফিল্ম সিটির নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব দেয়। ওই প্রস্তাবের আলোকে গত নভেম্বরে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফিল্ম সিটি’র নাম পরিবর্তন করা হয় এবং বর্তমানে এটি ‘বাংলাদেশ ফিল্ম সিটি’ নামে পরিচিতি লাভ করছে। এ প্রসঙ্গে বিএফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারাহ শাম্মী গতকাল নয়া দিগন্তকে জানান, যখন ফিল্ম সিটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়, তখন এ নামই ছিল। ২০১৫ সালে থেকে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফিল্ম সিটি’ রাখা হয়েছিল। তিনি বলেন, পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফিল্ম সিটির খালি জায়গাটা লিজ দেয়া আছে। ফিল্ম সিটি ঢেলে সাজানোর জন্য সরকারের একটা প্লান আছে। সেটা বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। এটা প্রক্রিয়াধীন। অনুমোদন পাওয়া গেলে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির সাংস্কৃতিক শাখা জাতীয়তাবাদী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) সদস্যসচিব জাকির হোসেন রোকন নয়া দিগন্তকে বলেন, ১৯৮০ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান একটি আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলার জন্য ১০৫ একর জায়গা বরাদ্দ দিয়েছিলেন। আমরা যতটুকু জানি, এই ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে জিয়াউর রহমানের একটি আলাদা মাস্টারপ্লানও ছিল। সেসময় ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনসহ কিছু কাজও এগিয়েছিল। কিন্তু আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য তিনি নিহত হওয়ার পর আর কাজ আগায়নি। তিনি বলেন, সময়ের সাথে সাথে সরকারও পরিবর্তন হয়েছে, যে সরকার এসেছে তাদের ইচ্ছেমতো পরিকল্পনা করে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেছে। এক সময় ১/১১ এর সরকার আসে, সর্বশেষ আওয়ামী লীগ সরকার দীর্ঘদিন ক্ষমতায় ছিল। তারা ওই ইন্ডাস্ট্রির নামই পরিবর্তন করে নিজেদের দখলে রেখেছিল। আশা করি, নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে এবং বিএফডিসিকে ঢেলে সাজানোর মাধ্যমে জিয়াউর রহমানের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা হবে।
এ প্রসঙ্গে কবিরপুরের আন্দারমানিকে অবস্থিত বাংলাদেশ ফিল্ম সিটির ইনচার্জ মো: নাসির উদ্দিন নয়া দিগন্তকে বলেন, তিনটি অংশের বাইরে আরেকটি অংশ ৬০ বিঘা উঁচু জমি মাসখানেক আগে লিজ দেয়া হয়েছে। সকল রুলস ফলো করে দরপত্রের মাধ্যমেই লিজগুলো দেয়া হয়েছে। তবে এর বেশি কিছু তিনি জানাতে রাজি হননি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা