০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১, ৭ রজব ১৪৪৬
`
সুপ্রিম কোর্টে সংবর্ধনায় ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক

আমাকে গ্রেফতারের অনুমতি দিয়েছিল শেখ হাসিনা

জুডিশিয়ারি রক্ষা করতে পারলে অনেক লিডারকে দেশ ছাড়তে হতো না
-


স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ১১ বছর কেন আমি বাইরে থাকলাম। ২০১৩ সালে আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি হলো। দেশের অবস্থা বেশি খারাপ। আমাদেরকে বেশি ঘরের বাইরে থাকতে হচ্ছে। চিন্তা করলাম মাত্র দুই সপ্তাহের জন্য লন্ডন যাবো। ১৮ তারিখ সকালে আমি লন্ডনে নামলাম। হঠাৎ করে দুপুরে জানতে পারলাম আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আমি নাকি ঢাকার রাস্তায় ছিলাম। পুলিশের ওপর বোম মেরেছি। এর কিছুদিন পরে আমি জানতে পারলাম উচ্চ পর্যায়ের এক দেশের কুটনৈতিক সোর্স থেকে। শেখ হাসিনা আমাকে গ্রেফতার করার অনুমতি দিয়েছেন, আইসিটির অধীনে। কিছুই আমি জানতাম না। সুতরাং এটা আল্লাহর মেহেরবানি। পাঁচ বছর পুলিশ আমাকে অত্যন্ত জ্বালাতন করেছে। ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বর পুলিশ আমার বাসায় গিয়েছে; কিন্তু আল্লাহর সিদ্ধান্ত বিদেশে চলে গেলাম। ফিরতে ১১ বছর লেগেছে। ১১ বছর আমি ইংল্যান্ডে থেকে প্র্যাকটিস করেছি।

সোমবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক এসব কথা বলেন। জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার, প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো: আসাদুজ্জামান, হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন, ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, সিনিয়র আইনজীবী এস এম শাহজাহান, মোহাম্মদ হোসেন, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, ব্যারিস্টার বেলায়েত হোসেন বদরুদ্দোজা বাদল প্রমুখ। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক অ্যাসোসিয়েটস এ সংবর্ধনার আয়োজন করে। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন চৌধুরী ইশরাক আহমেদ সিদ্দীকি।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, একটা জিনিস যদি রক্ষা করতে পারতাম , জুডিশিয়ারি। অনেক লিডারকে দেশ ছাড়তে হতো না। অনেকের জেলে যেতে হতো না। ১৯৩৫ সালের ব্রিটিশ সরকার থেকে গত সরকার পর্যন্ত আমরা অলমোস্ট আমাদের জুডিশিয়ারি স্বাধীন ছিল, প্রেস স্বাধীন ছিল। মানুষের স্বাধীনতা ছিল। কিন্তু এই স্বাধীনতাকে গত সরকার হরণ করেছিল। সুতরাং জুডিশিয়ারিকে যদি আমরা বাঁচাতে পারতাম, পারতাম কি না আমি জানি না, তাহলেও এই জাতি অনেক আগে এই ডিক্টেটরশিপের হাত থেকে রক্ষা পেত। আজকে বার বেঞ্চ, আপামর জনসাধারণ সবার একটা লক্ষ্য হওয়া উচিত, আমরা আমাদের জুডিশিয়ারিকে কোনো সময়ই পরাধীন হতে দেবো না। সাথে সাথে আমরা একটা স্বাধীন বার গড়ে তুলব।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আরো বলেন, আমরা যদি সত্যিকারার্থে এই বাংলাদেশকে তার নিজের জায়গায় নিয়ে যেতে চাই সবধরনের ইন্টারেস্ট থেকে বারকে মুক্ত করতে হবে। আমরা স্বাধীন বার চাই। আমরা স্বাধীন জুডিশিয়ারি চাই। যদি এগুলো নিশ্চয়তা প্রদান করতে পারি তাহলে সত্যিকারার্থে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হবে। মানুষের ঋণ শোধ করতে পারব। আমার আহ্বান হবে আমরা বাইরে রাজনীতি করব; কিন্তু এখানে (বার) মেম্বারস অব দ্য বার। উই আর লাকি দ্যাট উই হ্যাভ গট ভেরি কম্পিটেন্ট, এডুকেটেড, অনেস্ট চিফ জাস্টিস। উই শুড ট্রাই টু স্টেনদেন হিজ হ্যান্ড সো দ্যাট হি ক্যান রিয়েলি সেপারেট দ্য জুডিশিয়ারি ফ্রম দি এক্সিকিউটিভ। তিনি বলেন, আপনি ইংল্যান্ডে একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রভাবিত করতে পারবেন না। কোনো উপায় নেই। আর এখানে কী চলছে আমরা সবাই জানি। আসুন সবাই একমত হই।
সভাপতির বক্তব্যে ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, এখানে যারা আইনজীবী আছেন তারা প্রশাসনে যাবেন। আপনারা যদি শক্তশালী হয়ে থাকেন আজ হোক কাল হোক দেশ ভালো হতে বাধ্য। তিনি বলেন, আমরা সমাজকে দিয়ে যাবো, কী দিয়ে যাবো। আমরা যদি আমাদের সন্তানদের জ্ঞান দিয়ে যেতে পারি। তিনি বলেন, ব্রিটিশরা আমাদের শাসন—শোষণ করেছে; কিন্তু তারাও আইনকে সম্মান করত; কিন্তু একজন রাজনীতিক রাস্তা দিয়ে যাবে আর তাকে উধাও করে দেয়া হবে। এমন উধাও করে দেয়াটা অতীতে ছিল না।
অ্যাটর্নি জেনারেল মো: আসাদুজ্জামান বলেন, ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ১১ বছর পরে দেশে ফিরে এসেছেন, এ জন্য আমি আনন্দিত। একই সাথে আমি মনে করি, আগামীর বাংলাদেশে, বৈষম্যহীন বাংলাদেশে এক অনবদ্ধ মানুষ হিসেবে, আইনজীবী হিসেবে তিনি ভূমিকা রাখবেন। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আইনজীবী তার মক্কেলের পক্ষে কথা বললে, আইনি সহায়তা করলে, সেই আইনজীবীকে বাংলাদেশের বাইরে অবস্থান করতে হয় ১১ বছর, সেটি ব্যারিস্টার রাজ্জাককে দেখলে বোঝা যায়। আমি মনে করি ব্যারিস্টার রাজ্জাক যে একটি প্রতিষ্ঠান, তিনি যে ক্ষণজন্মা পুরুষ সেটি বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার মনের অজান্তে প্রমাণ করে গেছে।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক সম্পর্কে বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, স্বৈরাচারী সরকার যখন দেখল উনাকে আর দেশে চলতে দেয়া যায় না তখন উনার পেছনে লেগে গেল। উনি দেশ ছেড়ে যান। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক (আইনের) ধারালো অস্ত্র ধরে রাখতেন বলে স্বৈরাচারী সরকার চিন্তা করেÑ তাকে দেশে থাকতে দেয়া যায় না। আল্লাহ উনাকে আবার ফিরিয়ে দিয়েছেন।
জয়নুল আবেদীন বলেন, ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক খুবই অসুস্থ ছিলেন। মহান আল্লাহ তাকে আবারো আমাদের মাঝে ফিরিয়ে এনেছেন। আমরা আশা করব, তিনি আবারো আইন পেশায় ফিরে আসবেন। বিগত দিনে তিনি জ্ঞানের আলো দান করেছেন। তাকে আমরা আবার ফিরে পাবো।
মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের ১১ বছর আগে চলে যাওয়া আবার ফিরে আসা আমার কাছে আলৌকিক মনে হয়। তিনি বলেন, ৫ আগস্টের আগে কেউ মনে করেনি শেখ হাসিনার মতো দুর্দান্ত প্রতাপশালী শাসক এভাবে পালিয়ে যাবে। বাংলাদেশের মানুষের জীবনে এর চেয়ে বড় অর্জন আর কিছু হতে পারে না। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া এই দিন তিনি মানুষকে দেখিয়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement