ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে ভারত থেকে ধরে এনে বিচার করতে হবে : মাহমুদুর রহমান
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:১০
আমার দেশ সম্পাদক প্রকৌশলী ড. মাহমুদুর রহমান বলেছেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে ভারত থেকে ধরে এনে ২৪—এর গণহত্যার বিচার করতে হবে। দেশে গত ১৬ বছর ধরে চালানো সব গুম খুন জুলুম নির্যাতনের বিচার করতে হবে।
গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে রুহুল আমিন গাজী স্মৃতি ফাউন্ডেশন উদ্বোধন উপলক্ষে এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে আরো বক্তৃতা করেনÑ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, নিউ নেশনের সাবেক সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আব্দুল লতিফ মাসুম, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি মো: শহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, বিএফইউজের সহসভাপতি মুহাম্মদ খায়রুল বাশার, কোষাধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক এরফানুল হক নাহিদ, ডিইউজের সহসভাপতি খন্দকার হাসনাত করিম পিন্টু, রুহুল আমিন গাজীর স্ত্রী লুৎফুন নাহার মিনু ও ছেলে আফফান আবরার আমিন প্রমুখ। সভা সঞ্চালনা করেন, ডিইউজের কোষাধ্যক্ষ খন্দকার আলমগীর হোসেন।
মাহমুুদুর রহমান বলেন, ট্রেড ইউনিয়ন নেতা গাজী ভাইয়ের সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা ২৫ বছর ধরে। আমিও পেশাজীবী আন্দোলনে জড়িত ছিলাম। চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে পেশাজীবীদের সমাবেশে সরকারের বাধা উপেক্ষা করে সফলভাবে আমরা সম্মেলন করেছিলাম। গাজী ভাইয়ের দৃঢ় অবস্থানের কারণেই সে দিন প্রশাসনের বাধা উপেক্ষা করা সম্ভব হয়েছিল। সেই সমাবেশে বেগম খালেদা জিয়া বক্তব্য দিয়েছিলেন। গাজী ভাইয়ের সাথে আমরা একটি লংমার্চ করেছিলাম টিপাইমুখী বাঁধের অভিমুখে। দ্বিতীয় লংমার্চ করেছিলাম আখাউড়ায় তিতাস নদীতে বাঁধের প্রতিবাদে। আমরা তিতাসের বাঁধ কেটে ফেলি। তিনি বলেন, ইন্ডিয়ান হেজেমনিকে আর বাংলাদেশ নিয়ন্ত্রণ করতে দেবো না আমরা। পলাতক ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে গণহত্যার জন্য বিচার করতে হবে। শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট শাসনকালে জাহাজ বাড়িতে ২১ জনকে ডিবি হেফাজত থেকে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আমরা সেটি আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশ করি।
আমার দেশ পত্রিকা সম্পাদক আরো বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনকালে চারজনকে কারাগারে হত্যা করা হয়েছে। এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। নাসির উদ্দীন পিন্টুকে বিনা চিকিৎসায় হত্যা করা হয়েছে। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে হত্যা করা হয়েছে। আব্দুর রহিমকে অক্সিজেন না দিয়ে আইসিইউতে হত্যা করা হয়েছে। রুহুল আমিন গাজী ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিল তাকে সঠিক চিকিৎসা না দিয়ে হত্যা করেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মরহুম সভাপতি রুহুল আমিন গাজী ছিলেন আপসহীন সাংবাদিক নেতা। সাংবাদিকদের রুটি—রুজির আন্দোলনে তিনি সবসময় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। রুহুল আমিন গাজীর মতো এমন সাহসী নেতৃত্ব সাংবাদিক জগতে বিরল। দেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা—সার্বভৌমত্ব যখনই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে তখনই তিনি বুক চিতিয়ে প্রতিবাদ করেছেন। সর্বশেষ ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সময় অসুস্থ থাকার পরও তিনি রাজপথে নেমে সাংবাদিকদের সাহস জুগিয়েছেন। তার মৃত্যু সাংবাদিকতা জগতে একটি শূন্যতা সৃষ্টি করেছে। এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, গাজী ভাই দীর্ঘ দিন কারাগারে ছিলেন। মাহমুদুর রহমান ভাইও দীর্ঘ দিন কারাগারে ছিলেন এবং বিদেশে থাকতে হয়েছে স্বৈরাচারের কারণে। গাজী ভাই পেশাজীবীদের অনেক প্রোগ্রাম সফল করেছেন। মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য এবং পেশাজীবীদের জন্য অনেক আন্দোলন করেছেন।
ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, রুহুল আমিন গাজী ভাই নেই, বিশ্বাস করতেও কষ্ট হয়। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় থেকেই তাকে চিনি। তিনি ছিলেন একজন অসীম সাহসী নেতা। প্রতিকূল পরিবেশেও তিনি সাহসের পরিচয় দিয়েছেন। সর্বশেষ ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের পতনের আগের দিনও তিনি অসুস্থ অবস্থায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে পেশাজীবীদের আন্দোলনে রাজপথে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, একটি রাষ্ট্রের মূল শক্তি হলো সার্বভৌম শক্তি। এই শক্তিকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ভারতের কাছে দিয়ে দিয়েছিল। তিনি আরো বলেন, গত ১৬ বছর গণতান্ত্রিক আন্দোলনে গাজী ভাই ছিলেন। পেশাজীবী হিসেবে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সাংবাদিকদের অনেক ভূমিকা ছিল। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ সাংবাদিকদের পেশাবিরোধী সব কালাকানুনের বিরুদ্ধে তিনি প্রতিবাদ করেছেন। এ জন্য তাকে ১৭ মাস কারাগারে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। তার পরিবারকে মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিকদের অন্যতম সর্বোচ্চ এই নেতার মারাত্মক কিডনির সমস্যা ছিল। এরপরও ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকার তাকে গ্রেফতার করে ১৭ মাস জেলে রাখে। সেখানে তাকে উপযুক্ত চিকিৎসার সুযোগ দেয়া হয়নি। চিকিৎসায় অবহেলা করে তাকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে।
ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম বলেন, রুহুল আমিন গাজী দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে সাংবাদিকদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। শুধু এটিই নয় তিনি গণতন্ত্র রক্ষা ও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন। একটি দিনের জন্যও তিনি বিরতি দেননি।
রুহুল আমিন গাজীর ছেলে আফফান আবরার আমিন বলেন, আমি ও আমার পরিবার বাবার মতো দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। আমার বাবাকে যেভাবে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়েছে তাতে আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। তিনি খুবই দেশপ্রেমিক ছিলেন। সবসময় দেশের মানুষের কথা ভাবতেন।
অনুষ্ঠানে স্ত্রী লুৎফুন নাহার মিনুকে চেয়ারম্যান করে রুহুল আমিন গাজী স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাত সদস্যের একটি কমিটি এবং আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে প্রধান করে একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা