দেশী—বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীরা বিডিআর হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে : কমিশন প্রধান
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:০৮
দেশী—বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীরা মিলে পিলখানায় হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গঠিত জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রধান মেজর জেনারেল (অব:) আ ল ম ফজলুর রহমান। তিনি বলেন, এটা কোনো বিদ্রোহ নয়, এটি কর্মকর্তাদের হত্যার ষড়যন্ত্র ছিল।
গতকাল রাজধানীর মহাখালীতে রাওয়া ক্লাবে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন বিডিআর হত্যাকাণ্ডের শহীদ পরিবারের সদস্যদের সাথে ‘জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন’ এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। সভায় রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (রাওয়া) প্রতিনিধি, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তিদের স্বজন, জীবিত ফিরে আসা কর্মকর্তা এবং তখন সেনাবাহিনীতে কর্মরত ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
তদন্ত কমিশনের প্রধান আরো বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আমরা যাদের সন্দেহ করি, বিশেষ করে শেখ হাসিনা, তিনি ভারতে অবস্থান করছেন। আমরা ভারতীয় হাইকমিশনের সাথে যোগাযোগ করে হয় তাকে এক্সট্রাডাইট (প্রত্যর্পন) করতে বলব কিংবা আমাদের দল সেখানে গিয়ে তার সাক্ষাৎকার নেবো। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বা সরাসরি যেটা আমাদের জন্য আইনসিদ্ধ হয়, সেটা করব।
ফজলুর রহমান বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের শিকার প্রতিটি শহীদ পরিবারের কাছে আমাদের সহযোগিতার আবেদন থাকবে। এ ঘটনায় যেসব কর্মকর্তা বেঁচে আছেন, নিগৃহীত ও চাকরিচ্যুত হয়েছেন, তাদের সাথেও আমরা বসব, কথা বলব। গত ১৫ বছরে অনেক প্রমাণ নষ্ট হয়ে গেছে। তবু আমরা কোনো জিনিস গোপন রেখে কিছু করতে চাই না। যা হবে, খোলাখুলি হবে। গণমাধ্যমের মাধ্যমে সব বিষয় আমরা জাতিকে জানাব।
তিনি বলেন, জাতীয় দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এই তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে। এই হত্যাযজ্ঞের পেছনে যেই সরকারকে (আওয়ামী লীগ সরকার) আমরা সন্দেহ করি, জাতি সন্দেহ করে, তারা বিতাড়িত হয়েছে। আমি সবাইকে অনুরোধ করব, আমাদের ওপর বিশ্বাস ও আস্থা রাখুন। এই কমিশন একটি কোর্ট হিসেবে কাজ করছে। সুতরাং এই ধারণা হওয়া উচিত নয়, এই কমিশনের কোনো মূল্য নেই। এটি একটি জাতীয় স্বাধীন কমিশন। আমরা যে মন্তব্য ও সুপারিশ দেবো, আদালত সেটি আমলে নেবেন। আমরা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে চাই।
কমিশন প্রধান বলেন, নির্ধারিত তিন মাসের মধ্যেই আমরা তদন্ত শেষ করার চেষ্টা করব। এরপরও সময় বাড়ানোর প্রয়োজন হলে তার আশ্বাস দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। এই তদন্তের দু’টি অংশ আছে। একটি আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ এবং আরেকটি বহির্দেশের। তদন্তে অভ্যন্তরীণ বিষয়টিকে আমরা দুই মাসের মধ্যে শেষ করতে চাই।
ফজলুর রহমান বলেন, কর্মপরিধিতে আমাদের দুই বিষয়ে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। তবে যাদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে, সেসব বিষয়ে তদন্তের কথা এতে বলা হয়নি। প্রধান উপদেষ্টার কাছে আমরা লিখেছি, এখানেও যেন আমরা কাজ করতে পারি।
তিনি বলেন, পদুয়া—রৌমারী যুদ্ধে আমি ছিলাম কমান্ডার। সেই যুদ্ধে ভারত পরাজিত হয়েছে। এরপর সাড়ে চার বছর চাকরি থাকা সত্ত্বেও আমাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। কোন সরকার আমাকে চাকরিচ্যুত করেছিল, সেটা বলতে চাই না, আপনারা জানেন। কেন চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল, সেটি আমরা জানার চেষ্টা করব।
পদুয়া—রৌমারী যুদ্ধে ভারতকে পরাজিত করায় যে সরকার আমাকে চাকরিচ্যুত করেছিল, সেটা কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার নয়। আওয়ামী লীগ সরকার আমাকে পদচ্যুত করে বিডিআরের মহাপরিচালক থেকে ১১ ডিভিশনের জিওসি করেছিল। সরকার পরিবর্তনের পর আমাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। কাজেই তদন্তের বাইরে কেউ থাকবে না।
তদন্তের প্রয়োজনে কমিশনকে তথ্য দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বিডিআরের সাবেক এ মহাপরিচালক বলেন, অনেকে বলেছে, বিডিআর হত্যাকাণ্ডে ভারত জড়িত, অন্যান্য জেনারেল জড়িত। শুধু বললে হবে না। তার সপক্ষে প্রমাণ হাজির করতে হবে। আমরা চাইব আপনারা প্রমাণ দিন। ছোট, বড়, গুরুত্বপূর্ণ বা অগুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ যা আছে, আমাদেরকে দিন। এটি বিশাল তদন্তের বিষয়। এ জন্য যত দূর যাওয়া প্রয়োজন আমরা যাবো।
তদন্ত কমিশনের প্রধান বলেন, এ ঘটনা নিয়ে এখন পর্যন্ত জাতীয়ভাবে দুটো তদন্ত হয়েছে। আমরা সেগুলো দেখব। কোথায় কোথায় গ্যাপ আছে, সেগুলো জানার চেষ্টা করব। সেনাপ্রধানের সাথে সাক্ষাৎ করে সেনাবাহিনীর ওই সময়ের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে সহযোগিতা চাইব।
সাবেক এই সেনাকর্মকর্তা বলেন, আমি মনে করি না এটা বিডিআর বিদ্রোহ ছিল বা কোনো দাবির জন্য সৈনিকেরা নির্মমভাবে সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করতে পারে। আমরা জানার চেষ্টা করছি, ওই সময়ে কার কখন বিডিআরে পদায়ন করা হয়েছিল।
একজন কর্মকর্তা ৭ দিন, ১০ দিন, ১৫ দিন বা এক মাস আগে গিয়ে কী এমন করতে পারে, যে তাকে মেরে ফেলতে হবে। এটা কোনো বিদ্রোহ নয়, এটি কর্মকর্তাদের হত্যার ষড়যন্ত্র ছিল। এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বিডিআরকে দুর্বল করা হয়েছে, তার নাম বদল করা হয়েছে। সেনাবাহিনী ও দেশকে দুর্বল করা হয়েছে। আমরা এমন সুপারিশ করতে চাই, যেন বাংলাদেশে কোনো দিন ২৫ ফেব্রুয়ারির মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা