সেন্টমার্টিন রক্ষায় বিশ্বমানের উদ্যোগ

- চালু হচ্ছে প্লাজমা রিয়েক্টর
- কমবে দূষণ
- রক্ষা পাবে জীববৈচিত্র্য

দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন রক্ষায় বিশ্বমানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার (প্লাজমা রিয়েক্টর) যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে সেন্টমার্টিন। এছাড়া দ্বীপে প্লাস্টিক বোতলের পানির পরিবর্তে বিকল্প উপায়ে খাবার পানি নিশ্চিত করা হচ্ছে। এতে করে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিক থেকে তৃতীয় দেশ হিসেবে তালিকায় স্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশ। দ্বীপের সার্বিক পরিবেশ ঠিক রাখতে সেন্টমার্টিনে মল স্লাজ ও সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম নির্মাণ নামের এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর। পরিবেশবাদীরা মনে করছেন, সরকারের এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দ্বীপের পরিবেশ দূষণ যেমন কমে আসবে, তেমনি পরিবেশ-প্রতিবেশের পাশাপাশি প্রবালসহ সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যও রক্ষা পাবে।

বিভিন্ন সমীক্ষা বলছে, পর্যটন মৌসুমের তিন মাসে সেন্টমার্টিনে প্রতিদিন দুই হাজার পর্যটকের চার হাজার প্লাস্টিকের বোতল, চিপসহ অন্যান্য প্লাস্টিক-পলিথিনের প্যাকেটজাত নিত্যপণ্যের বর্জ্য সৃষ্টি হচ্ছে। এসব বর্জ্যরে কারণে সেন্টমার্টিনের পরিবেশ-প্রতিবেশ এবং সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য সঙ্কটে পড়েছে। তাই দ্বীপের সার্বিক পরিবেশ ঠিক রাখতে সেন্টমার্টিনে মল স্লাজ ও সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম নির্মাণ নামের একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পটিকে দুই ভাগে ভাগ করে টেন্ডারের মাধ্যমে টার্ন বিল্ডার্স, গ্রিন ডট লিমিটেড ও ওয়াটার বার্ডস লিমিটেড নামের তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশও দেয়া হয়েছে। সরকারের উদ্যোগে সেন্টমার্টিনের পরিবেশ-প্রতিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বিশেষ এই প্রকল্প বিশ্বব্যাংকের অনুদানে বাস্তবায়ন হচ্ছে।
প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে রেইন ওয়াটার, গ্রাউন ওয়াটার ও সারফেস ওয়াটার পরিশোধন করে সেন্টমার্টিন দ্বীপে বাসিন্দাদের মধ্যে খাবার পানি সরবরাহ করা। এতে করে দ্বীপে প্লাস্টিক বোতলের ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব হবে। তবে এই পানি সরবরাহ করতে প্রতিদিন যে ব্যয় হবে তা পানি গ্রহণকারীদের কাছ থেকে নেয়া হবে। পানি গ্রহীতারা এটিএম কার্ডের আদলে বিশেষ কার্ডের মাধ্যমে ন্যূনতম ধার্যকৃত মূল্য দিয়ে নিজেদের ইচ্ছে মতো খাবার পানি নিতে পারবেন।

কক্সবাজার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, সেন্টমার্টিন দ্বীপে বর্তমানে বসবাসরত ১৭ শ’ পরিবারের ছোট-বড় আট হাজার মানুষের প্রতিদিন দুই টন করে মনুষ্য বর্জ্য ও দুই টন কঠিন বর্জ্য সৃষ্টি হচ্ছে। পাশাপাশি পর্যটন মৌসুমের তিন মাসে প্রতিদিন দুই হাজার পর্যটকের চার হাজার প্লাস্টিকের বোতল, চিপসহ অন্যান্য প্লাস্টিক-পলিথিনের প্যাকেটজাত নিত্যপণ্যের বর্জ্যও সৃষ্টি হচ্ছে। এসব বর্জ্যরে কারণে সেন্টমার্টিনের পরিবেশ-প্রতিবেশ এবং সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য সঙ্কটে পড়েছে। তাই দ্বীপের সার্বিক পরিবেশ ঠিক রাখতে সেন্টমার্টিনে মল স্লাজ ও সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম নির্মাণ নামের একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর। ইতোমধ্যে প্রকল্পটিকে দুই ভাগে ভাগ করে টেন্ডারের মাধ্যমে টার্ন বিল্ডার্স, গ্রিন ডট লিমিটেড ও ওয়াটার বার্ডস লিমিটেড নামের তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশও দেয়া হয়েছে।

কক্সবাজার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের সহকারী প্রকৌশলী আবুল মনজুর সাংবাদিকদের জানান, এই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে রেইন ওয়াটার, গ্রাউন ওয়াটার ও সারফেস ওয়াটার পরিশোধন করে সেন্টমার্টিন দ্বীপে বাসিন্দাদের মধ্যে খাবার পানি সরবরাহ করা। এতে করে দ্বীপে প্লাস্টিক বোতলের ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব হবে। তবে এই পানি সরবরাহ করতে প্রতিদিন যে ব্যয় হবে তা পানি গ্রহণকারীদের কাছ থেকে নেয়া হবে। পানিগ্রহীতারা এটিএম কার্ডের আদলে বিশেষ কার্ডের মাধ্যমে ন্যূনতম ধার্যকৃত মূল্য দিয়ে নিজেদের ইচ্ছে মতো খাবার পানি নিতে পারবেন। এই পানির মান যাচাইয়ের জন্য থাকবে বিশেষ ল্যাবরেটরি। নির্মাণ করা হবে ইট, সিমেন্ট ও লোহার রড ছাড়া পরিবেশবান্ধব অপারেশন বিল্ডিং ও আন্তর্জাতিক মানের দু’টি পাবলিক টয়লেট। এ ছাড়াও মানব বর্জ্য, মেডিক্যাল বর্জ্য, কঠিন বর্জ্য ও প্লাস্টিক বর্জ্য মিলেই থাকবে সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (প্লাজমা রিয়েক্ট)। এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশে দ্বিতীয়। এই প্রকল্পের মধ্য দিয়ে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিক থেকে তৃতীয় দেশ হিসেবে তালিকায় স্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশ। প্রকল্পটি আগামী জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজারের সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে সেন্টমার্টিনে যখন সর্বত্র পরিবেশ ধ্বংসের কার্যক্রম চলছে ঠিক এই সময়ে সরকারের এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয়। আশা করি সরকারের পরিবেশবান্ধব এই প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়ন হবে।
সেন্টমার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সর্বশেষ ২০২০ সালের আগস্টে সেখানে প্রথম পর্যটক নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। সরকারের তরফ থেকে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসেসকে (সিইজিআইএস) একটি সমীক্ষা করার দায়িত্ব দেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটি গবেষণা শেষে জানায়, দ্বীপটিতে কোনোভাবেই পর্যটকদের রাতে থাকার অনুমতি দেয়া ঠিক হবে না। শীতে পর্যটন মৌসুমে দিনে এক হাজার ২৫০ জনের বেশি পর্যটক যেতে দেয়া ঠিক হবে না।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেন্টমার্টিনের সুরক্ষায় নানা সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নভেম্বর মাসে পর্যটকরা সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণে যেতে পারবেন। তবে রাত যাপন না করে দিনেই ফিরে আসতে হবে। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি এই দুই মাস পর্যটকরা সেন্টমার্টিন ভ্রমণ ও সেখানে রাত যাপনের সুযোগ পাচ্ছেন। তবে পর্যটকের সংখ্যা দৈনিক দুই হাজার নির্ধারণ করে দেয়া হয়।