সরবরাহ বাড়লেও কাটেনি গ্যাসসঙ্কট
- খালিদ সাইফুল্লাহ
- ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৫০
বন্ধ থাকা এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে বলা হলেও গ্রাহক পর্যায়ে সঙ্কট আগের মতোই। টিম টিম করে জ্বলা চুলায় রান্নাসহ আনুষঙ্গিক কাজে ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে রাজধানীবাসীকে। ভোর থেকে প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ থাকে না বেশির ভাগ এলাকায়। তবে গ্যাস সরবরাহ আগের চেয়ে বেড়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে।
গ্রাহকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীতে গত দুই সপ্তাহ ধরে তীব্র গ্যাসসঙ্কট চলছে। গ্যাসের চাপ অনেক স্থানে আগে থেকে কম থাকলেও গত বুধবার থেকে গ্যাসসঙ্কট ভয়াবহ আকার ধারণ করে। বাসাবাড়িতে গ্যাস ছিল না বললেই চলে। কারণ হিসেবে জানা যায়, মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি পরিচালিত একটি এলএনজি টার্মিনাল মেরামতের কাজ চলছিল বলে সঙ্কট বেড়েছিল।
পেট্রোবাংলা জানিয়েছে, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য কক্সবাজারের মহেশখালীতে এক্সিলারেটথএনার্জি পরিচালিত এলএনজি ফ্লোটিং স্টোরেজ রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) থেকে গত ১ জানুয়ারি সকাল ৯টা থেকে ৪ জানুয়ারি সকাল ৯টা পর্যন্ত মোট ৭২ ঘণ্টা আরএলএনজি সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। এ সময়ে অপর এফএসআরইউ (মহেশখালী ভাসমান এলএনজি) দিয়ে দৈনিক প্রায় ৫৭০-৫৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত থাকলেও বিদ্যুৎ খাতে দৈনিক ১৫০-১৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ হ্রাস পায়। এ ছাড়াও অন্যান্য খাতে দৈনিক প্রায় ৫০-৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় দেশের কোনো কোনো এলাকায় গ্যাসের স্বল্প চাপ বিরাজ করে।
বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশনের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইনস) প্রকৌশলী মো: রফিকুল ইসলাম গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, মেরামত কাজ শেষে এলএনজি গ্যাস সরবরাহ আবার শুরু হয়েছে। এখন আগের মতোই দৈনিক ৭৮০-৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে।
তিতাসের ডিএমডি (অপারেশন্স) কাজী সাইদুল হাসান বলেন, শনিবার সন্ধ্যা থেকে গ্যাস সরবরাহ বেড়েছে। যেহেতু তিন দিন সরবরাহ কম ছিল, এজন্য সরবরাহ বাড়লেও সঙ্কট কাটতে কিছুটা সময় লাগছে। তিনি জানান, গ্যাসের সঙ্কট পুরোপুরি কাটাতে হলে বিদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে এলএনজি কিনতে হবে। সরকার উদ্যোগ নিলেই এটি করা সম্ভব।
জানা যায়, বর্তমানে দেশে প্রতিদিন চার হাজার ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। এর বিপরীতে বিভিন্ন কূপ থেকে আড়াই হাজার ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি দেশের দুটো এলএনজি টার্মিনাল থেকে ১১০০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহের সক্ষমতা রয়েছে। তবে প্রয়োজনীয় এলএনজির অভাবে সরবরাহ করা হচ্ছে আরো কম ৭৮০ থেকে ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট। অর্থাৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে ৩০০-৩২০ এমএমসিএফডি গ্যাসের ঘাটতি আছে এখনো। এলএনজি আমদানি না বাড়ালে শিগগিরই এ সঙ্কটের সুরাহা হবে না বলে পেট্রোবাংলা ও তিতাসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এই কোম্পানির এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, চলতি জানুয়ারিতে দুটো এলএনজি টার্মিনালের জন্য অন্তত ১০টি কার্গো দরকার। কিন্তু সরবরাহের জন্য এ পর্যন্ত সাতটি কার্গো নিশ্চিত করা হয়েছে।
গ্যাস সরবরাহ আগের থেকে কিছুটা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন রাজধানীর মীর হাজিরবাগ এলাকার বাসিন্দা সানজিদা শওকত। নয়া দিগন্তকে তিনি বলেন, বিগত সরকারের আমল থেকেই এ এলাকায় গ্যাসের সঙ্কট। তবে গত দুই সপ্তাহ গ্যাসসঙ্কট আরো বেড়েছিল। আর গত তিন দিন ধরে গ্যাস প্রায় ছিলই না। তবে গতকাল সকাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বাড়তে থাকে। বিকেলের পর গ্যাস আরো কিছুটা বেড়েছে। তবে এখনো স্বাভাবিক হয়নি।
মুগদা ব্যাংক কলোনির বাসিন্দা খন্দকার মতিউর রহমান মুন্না নয়া দিগন্তকে বলেন, মুগদা, মদিনাবাগ, মানিকনগর, মান্ডা এলাকায় গত দুই সপ্তাহ ধরেই গ্যাসসঙ্কট চলছে। সর্বশেষ কয়েকদিন প্রায় বন্ধই ছিল। এখন কোনো রকম বেড়েছে। ৩০ শতাংশের মতো গ্যাস সরবরাহ বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, গ্যাসসঙ্কটের কারণে গত কয়েকদিন এলাকার প্রতিটি পরিবারেই সঙ্কট দেখা দেয়। অনেকে ভয়ে সিলিন্ডার গ্যাস কিনতে চান না। এজন্য দোকান থেকে খাবার কিনে খেয়েছেন। অনেকে রান্নার অভাবে ঠিকমতো খাবারও খেতে পারেননি।
মুগদা এলাকার আরেক বাসিন্দা আহমেদুল কবির জাকির নয়া দিগন্তকে বলেন, গ্যাসের সরবরাহ খুবই কম বেড়েছে। কোনো রকমে চায়ের পানি গরম করা যায়। রান্না ঠিকমতো করা যাচ্ছে না। গত দুই সপ্তাহ ধরেই সঙ্কট চলে আসছে বলে তিনি জানান।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা