যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যেই গাজায় ইসরাইলের বর্বরতা
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৫০
- ৫ মারকাভা ট্যাংক ধ্বংস কাসসাম ব্রিগেডের
- বন্দীর নতুন ভিডিও প্রকাশ হামাসের
- ২৪ ঘণ্টায় আরো ৮৮ ফিলিস্তিনিকে হত্যা
গাজায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দীদের মুক্তির বিষয়ে কাতারে হামাসের সাথে আবার আলোচনা শুরু হয়েছে ইসরাইলের। যুদ্ধবিরতির এই আলোচনার মধ্যেই গাজায় নতুন করে ইসরাইলি বোমাবর্ষণে গতকাল রোববার আরো ৮৮ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকর্মীরা। গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত শনিবার ভোরে গাজা নগরীর আল-গৌল পরিবারের বাড়িতে বিমান হামলায় ১১ জন নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে সাতটি শিশুও রয়েছে। এএফপি, আলজাজিরা, রয়টার্স ও মেহের নিউজ।
গত তিন দিনের মধ্যে ছিটমহলটিতে ১০০ বারের বেশি বোমা হামলা চালিয়ে ২০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে দখলদার বাহিনী, যার মধ্যে বেশির ভাগই নারী ও শিশু। এসবের মধ্যেই ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সংগঠন হামাস তাদের হাতে বন্দী এক ইসরাইলি তরুণীর সাড়ে ৩ মিনিটের ভিডিও প্রকাশ করেছে। হামাসের সামরিক শাখা ইজ্জুদিন আল-কাসসাম ব্রিগেড এই ভিডিও প্রকাশ করেছে। তারিখবিহীন ভিডিওটিতে দেখা যায়, ১৯ বছর বয়সী আলবাগ হিব্রু ভাষায় ইসরাইল সরকারকে তার মুক্তি নিশ্চিত করতে বলছেন।
অন্য দিকে শনিবার গাজায় ইসরাইলের চলমান হামলার মধ্যেই দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাৎজ কাতারে হামাসের সঙ্গে বন্দী মুক্তির বিষয়ে আলোচনা পুনরায় শুরু হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন। তাছাড়া রোববার জরুরি বৈঠক ডেকেছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। কাৎজের কার্যালয় থেকে বলা হয়, হামাসের হাতে বন্দী ইসরাইলের নারী সেনাসদস্য লিরি আলবাগের স্বজনদের মন্ত্রী বলেছেন, বন্দীদের মুক্ত করে আনার চেষ্টা চলছে।
বন্দী মুক্তি নিয়ে আলোচনার জন্য গত শুক্রবার ইসরাইলের একটি প্রতিনিধিদল কাতার গেছে বলেও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে। চলমান আলোচনার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বিস্তারিত দিকনির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন কাৎজ। এ ছাড়া বন্দীর ভিডিও প্রকাশের পর তার পরিবার নেতানিয়াহুর কাছে একটি আবেদন করেছেন। তারা বলেন, ‘আপনার নিজের সন্তানেরা সেখানে আছে, এমনটা ধরে নিয়ে এখনই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন।’
গাজায় এখনো ৯৬ জন ইসরাইলি বন্দী রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। প্রায় ১৫ মাস ধরে গাজা যুদ্ধ চলছে। কয়েক মাস ধরে কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনা চলছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সাফল্য আসেনি।
এক পরিবারের ১১ জন নিহত : এ দিকে গাজার চিকিৎসা কর্মীরা ও দমকল বাহিনী জানিয়েছে, গাজা সিটির আল-গৌল পরিবারের বাড়িতে চালানো ইসরাইলি হামলায় একই পরিবারের অন্তত ১১ জন সদস্য নিহত হয়েছেন, এদের মধ্যে সাতজনই শিশু। এ হামলায় আল-গৌল পরিবারের বাড়িটি ধ্বংস হয়ে যায়। আহমদ আয়ান নামের এক প্রতিবেশী বলেন, ‘রাত প্রায় ২টার দিকে প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দে আমাদের ঘুম ভেঙে যায়। ওই বাড়িতে ১৪ থেকে ১৫ জন লোক ছিল। তাদের অধিকাংশই শিশু ও নারী।
পরে গাজা সিটির আরেকটি বাড়িতে হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী। এ হামলায় আরো পাঁচজন নিহত হয়। ফিলিস্তিনি দমকল পরিষেবা জানিয়েছে, বাড়িটির ধ্বংসস্তূপের নিচে অন্তত ১০ জন আটকা পড়ে আছেন। গাজার উত্তরাঞ্চলীয় জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে আরেকটি হামলায় আরো পাঁচজন নিহত হন। এর পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনুসে একটি গাড়িতে ইসরাইলি বাহিনীর বোমা হামলায় ছয় ফিলিস্তিনি নিরাপত্তা রক্ষী নিহত হন। নিহত রক্ষীরা মানবিক ত্রাণ সরবরাহ ও বিতরণে নিরাপত্তা দিতে কর্মরত ছিলেন।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুক্রবারের পর থেকে শুরু হওয়া দিনভর হামলায় রোববার পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২০০ জনে দাঁড়িয়েছে। এর আগে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জানায়, তাদের বাহিনী চলতি সপ্তাহেও গাজার উত্তর প্রান্তের শহর বেইত হানুনে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। সেখানে তারা হামাসের ব্যবহার করা একটি সামরিক কমপ্লেক্স ধ্বংস করেছে। ইসরাইলি বাহিনী এই বেইত হানুন শহরে টানা তিন মাস ধরে অভিযান চালাচ্ছে।
৫ মারকাভা ট্যাংক ধ্বংস : ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের সামরিক শাখা কাসসাম ব্রিগেড এক দিনে ইসরাইলের পাঁচটি মারকাভা ট্যাংক ধ্বংস করেছে। এক বিবৃতিতে শনিবার কাসসাম ব্রিগেড জানিয়েছে, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে তারা এসব ট্যাংক ধ্বংস করে। সংগঠনটি জানিয়েছে, তারা প্রথমে জাবালিয়া শহরের পশ্চিমাঞ্চলে একটি ট্যাংক ধ্বংস করে। পরে একই শহরের পশ্চিমাঞ্চলে হামাস যোদ্ধারা আরো চারটি ট্যাংক ধ্বংস করতে সক্ষম হয়।
নতুন ভিডিও প্রকাশ : এ দিকে ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সংগঠন হামাসের প্রকাশিত ভিডিওতে ১৯ বছর বয়সী ইসরাইলি বন্দী লিরি বলেছেন, তাকে ৪৫০ দিনেরও বেশি সময় ধরে আটকে রাখা হয়েছে। সাড়ে তিন মিনিটের ভিডিওটির তারিখ ছিল না। তবে ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের বলেই মনে করা হচ্ছে। কাতারের দোহায় শুক্রবার থেকে যুদ্ধবিরতি এবং বন্দী মুক্তি নিয়ে হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে পুনরায় আলোচনা শুরু হয়েছে। এমন সময়ে বন্দীর ভিডিও প্রকাশ করে ইসরাইলি প্রশাসনের ওপর চাপ তৈরি করেছে হামাস।
লিরির বাবা-মা প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং সরকারের কাছে বন্দীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য আবেদন করে বলেছেন, ‘মনে করুন আপনার সন্তানরাও সেখানে আছেন’। এক বিবৃতিতে পরিবার বলেছে, হামাসের পাঠানো ভিডিওটি তারা দেখে নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। এতে নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, লিরি বেঁচে আছে এবং তাকে আমাদের মধ্যে জীবিত ফিরিয়ে আনতে হবে। এটা শুধু আপনার (নেতানিয়াহুর) উপর নির্ভর করে।
মিসরের ব্লিনকেন : মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন এবং মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদলি আতিয়া গাজায় যুদ্ধবিরতি আলোচনার বিষয়ে ফোনে নতুন করে কথা বলেছেন। উপত্যকায় বর্তমানে কায়রো, দোহা এবং ওয়াশিংটন মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির চেষ্টা চলছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা ‘গাজায় যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর চলমান প্রচেষ্টার সর্বশেষ অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করেছেন যা বন্দীদের মুক্তি নিশ্চিত করে, গাজায় মানবিক সহায়তার প্রবাহ বৃদ্ধি করে এবং যুদ্ধের অবসান ঘটায়’।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা