যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি চায় হামাস
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:৫১
- ইসরাইলি ট্যাঙ্ক হেলিকপ্টারে হামাসের হামলা
- ৭২ ঘণ্টায় আরো ১৬৮ ফিলিস্তিনিকে হত্যা
- দ্রুত গণহত্যা বন্ধ করতে বলল রাশিয়া
গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে একটি নতুন পরোক্ষ আলোচনার ধাপ গত শুক্রবার কাতারের দোহায় আবারো শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। দলটির সিনিয়র কর্মকর্তা বাসেম নাইম বলেছেন, চুক্তিতে পৌঁছানোর ব্যাপারে তাদের পক্ষ থেকে যত দ্রুত সম্ভব সমঝোতার জন্য আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। নতুন আলোচনায় একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও ইসরাইলি বাহিনীর প্রত্যাহার নিয়ে আলোচনা হবে বলে যোগ করেন তিনি। খবর : আরব নিউজ ও আলজাজিরা।
মধ্যস্থতাকারী কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্র বিবদমান ইসরাইল এবং হামাসের মধ্যে মাসব্যাপী আবারো আলোচনা করছে। তবে গাজায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান ধ্বংসাত্মক সংঘাতের অবসান ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। চুক্তির একটি প্রধান বাধা হলো স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে ইসরাইলের অনীহা। এর আগে গত বৃহস্পতিবার ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর অফিস জানিয়েছে, তিনি দোহায় আলোচনার জন্য ইসরাইলি আলোচকদের অনুমোদন দিয়েছেন।
গত ডিসেম্বরে কাতার আশাবাদ প্রকাশ করেছিল যে যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী বিজয়ের পর আলোচনায় গতি ফিরে আসছে। তবে যুদ্ধবিরতি বিলম্বে এরপর একে অন্যকে দোষারোপ করে হামাস ও ইসরাইল। হামাস জানায়, ইসরাইল নতুন শর্ত আরোপ করেছে। শুক্রবারের বিবৃতিতে হামাস জানিয়েছে, তারা একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ, ইতিবাচক মনোভাব এবং স্থিতিশীল ও প্রতিরোধশীল জনগণের আকাক্সক্ষা ও লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
২০২৩ সালের নভেম্বরে কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে সাত দিনের একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছিল। চুক্তির আওতায় হামাস শতাধিক ইসরাইলি বন্দীকে মুক্তিও দেয়। তবে এখনো তাদের হাতে ৯৬ জন বন্দী রয়েছে। ইসরাইলের তথ্যমতে, তাদের মধ্যে ৬২ জন জীবিত রয়েছে।
৭২ ঘণ্টায় নিহত ১৬৮ : এ দিকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় গত ২ দিনে ইসরাইলি বিমান হামলায় ১৪০ জনের প্রাণহানির পর গতকাল শনিবার হামলার সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছে দখলদার বাহিনী। শনিবার ইসরাইলি হামলায় উপত্যকাজুড়ে আরো ২৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে বার্তাসংস্থা আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে। খবরে আরো বলা হয়, গাজায় গত ২ দিনে ইসরাইলে বিমান হামলায় প্রায় ১৪০ জন মারা গেছেন। যাদের মধ্যে শুক্রবার ৬১ জন ও বৃহস্পতিবার ৭৭ জন মারা গেছেন।
অ্যামেনিস্ট ইন্টারন্যাশনালের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, কামাল আদওয়ান হাসপাতালের পরিচালক ডা: হুসাম আবু সাফিয়াকে ইসরাইলের আটক করা গাজার স্বাস্থ্যসেবা খাতকে ‘নিশ্চিহ্ন’ করার বৃহত্তর প্রচেষ্টায় ‘গণহত্যার অভিপ্রায়’ এর প্রতীক।
হামাসের হামলা : অন্য দিকে হামাসের সামরিক শাখা কাসেম ব্রিগেড জানিয়েছে, তারা গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি বাহিনীর চারটি মারকেভা ট্যাঙ্ক এবং হেলিকপ্টারে হামলা চালিয়েছে। এ ছাড়া জাবালিয়া এলাকায়ও হামলা চালানো হয়েছে। এক বিবৃতিতে কাসেম ব্রিগেড দাবি করেছে যে, তারা একটি ইসরাইল হেলিকপ্টারের দিকে রকেট দিয়ে হামলা চালিয়েছে। এর আগে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনুসের কাছে একটি যানবাহনে হামলা চালায় ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। এতে কমপক্ষে পাঁচজন নিহত হয়। বেশ কিছু ফুটেজ থেকে ধারণা করা হচ্ছে যে, ইসরাইলি বাহিনী ড্রোন হামলা চালিয়েছে।
জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক বলেছেন, গাজার ২৭টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ১৩৬টি ইসরাইলি হামলা রেকর্ড করা হয়েছে। এর ফলে সেখানে ধ্বংসস্তূপ তৈরি হয়েছে এবং বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এক বছরের বেশি সময় ধরে গাজায় ইসরাইলি হামলায় ৪৫ হাজার ৭১৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছে আরো এক লাখ ৮ হাজার ৮৫৬ জন।
গণহত্যা বন্ধের দাবি রাশিয়ার : জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় অবিলম্বে ইসরাইলি হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে রাশিয়া। জাতিসঙ্ঘে নিযুক্ত রাশিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেছেন, গাজায় ইসরাইলি বর্বর হামলায় মানবিক বিপর্যয়, চিকিৎসা ব্যবস্থা ধ্বংস এবং গণহারে বাস্তুচ্যুত করছে সেখানকার বাসিন্দাদের।
নেবেনজিয়া বলেন, গাজার বেসামরিক স্থাপনাগুলোতে ইসরাইলের বর্বর হামলার বিষয়ে আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। গাজা উপত্যকায় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে, সেখানে লাখ লাখ মানুষ ইসরাইলি হামলায় বাড়িঘর হারিয়ে এখন খোলা আকাশের নিচে তীব্র শীতে কষ্ট করছেন। ঠাণ্ডায় অনেক শিশু মারা যাচ্ছে।
জাতিসঙ্ঘে এ রুশ কূটনীতিক বলেন, আমি দক্ষিণ গাজায় রোগীদের সরিয়ে নেয়ার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রস্তাবকে সমর্থন করি। রাশিয়া ‘দ্বিজাতি তত্ত্বের’ ফর্মুলার প্রতি তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া জোর দিয়ে বলেন, ইসরাইলের নিরাপত্তা কেবল পূর্ব জেরুসালেমকে রাজধানী করে ১৯৬৭ সালের সীমানা অনুযায়ী একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই নিশ্চিত হতে পারে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা