লন্ডনে টিউলিপকে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট দেন আওয়ামী ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী মোতালিফ
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:৫০
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস, ডেইলি মেইলসহ একাধিক ব্রিটিশ মিডিয়ায় লন্ডনের কিংস ক্রস এলাকায় দেশটির মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিককে বিনামূল্যে একটি ব্যয়বহুল ফ্ল্যাট দেয়া নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে। এসব প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, সেন্ট্রাল লন্ডনে ওই ফ্ল্যাটটি দিয়েছিলেন আবদুল মোতালিফ নামের একজন আবাসন ব্যবসায়ী। আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মোতালিফ। লন্ডনে আবাসন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। টিউলিপকে বিনামূল্যে ফ্ল্যাট হস্তান্তরের তথ্য উঠে এসেছে যুক্তরাজ্যের ভূমি নিবন্ধনসংক্রান্ত নথিপত্রে।
টিউলিপ সিদ্দিক বর্তমানে ব্রিটেনের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টার (ইকোনমিক সেক্রেটারি)। আবদুল মোতালিফ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এবং টিউলিপের খালা বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে মোতালিফের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল।
যুক্তরাজ্যের ভূমি নিবন্ধনসংক্রান্ত নথির বরাত দিয়ে ব্রিটিশ মিডিয়ার প্রতিবেদনগুলোতে বলা হচ্ছে, বিনামূল্যে পাওয়া ওই ফ্ল্যাট লন্ডনের কিংস ক্রস এলাকার কাছে অবস্থিত। ২০০৪ সালে ফ্ল্যাটটি তাকে দেয়া হয়। এর আগে ২০০১ সালে সেটি ১ লাখ ৯৫ হাজার পাউন্ড দিয়ে কেনা হয়। ফ্ল্যাটটির বর্তমান দাম নথিতে উল্লেখ করা হয়নি। তবে একই ভবনের আরেকটি ফ্ল্যাট গত আগস্টে ৬ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ডে বিক্রি হয়েছে।
ব্রিটেনের ভোটার নিবন্ধন সংশ্লিষ্ট নথি থেকে জানা গেছে, চলতি শতকের শুরুর দিকে কিংস ক্রসের ওই ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন টিউলিপ সিদ্দিক। এর পর বেশ কয়েক বছর সেখানে তার ভাই-বোনেরা ছিলেন। পার্লামেন্টের সদস্য হিসেবে টিউলিপের দাখিল করা আর্থিক বিবরণীতে দুটি ফ্ল্যাট থেকে ভাড়া পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর রাখেন এমন এক ব্যক্তি বলেছেন, আবাসন ব্যবসায়ী আবদুল মোতালিফের দুর্দিনে তাকে আর্থিক সহায়তা করেছিলেন টিউলিপের মা-বাবা। তাই কৃতজ্ঞতাস্বরূপ নিজের মালিকানায় থাকা ‘একটি সম্পদ’ টিউলিপকে দিয়েছিলেন।
বর্তমানে ৭০ বছর বয়সী আবদুল মোতালিফ দক্ষিণ-পূর্ব লন্ডনে বসবাস করেন। ভোটার নিবন্ধন সংশ্লিষ্ট নথি থেকে জানা গেছে, ওই এলাকায় মোতালিফের ঠিকানায় মজিবুল ইসলাম নামের আরেক ব্যক্তি বসবাস করেন। মজিবুলের বাবা ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন।
আবদুল মোতালিফ ফিন্যান্সিয়াল টাইমস-এর কাছে কিংস ক্রসের ওই ফ্ল্যাট কেনার কথা স্বীকার করেছেন। তবে পরে সেটি নিয়ে কী করেছেন, তা নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে চাননি। আর টিউলিপের ওই ফ্ল্যাট পাওয়ার সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতার খবর ‘ভুল’ বলে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস-এর কাছে দাবি করেন তার (টিউলিপ) একজন মুখপাত্র।
টিউলিপকে বিনামূল্যে এই ফ্ল্যাট দেয়ার খবর এমন সময় সামনে এলো যখন বাংলাদেশে ৯টি প্রকল্পে ৮০ হাজার কোটি টাকা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে টিউলিপ, শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা ও সজীব ওয়াজেদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
ডেভেলপার আবদুল মোতালিফ ২০০৪ সালে সেন্ট্রাল লন্ডনে দুই বেডরুমের ফ্ল্যাট মিসেস সিদ্দিককে দান করলেও ব্রিটিশ মিডিয়াগুলো বলছে কোনো অর্থ প্রদান না করেই টিউলিপ এত বড় সম্পদ নেন এবং তিনি তার খালা বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে মোতালিফকে বিশেষ কোনো সুযোগ পাইয়ে দিয়েছেন কি না সে নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কারণ টিউলিপ গত মাসে ব্রিটেনে দুর্নীতিবিরোধী কাজ থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বানের মুখোমুখি হন যখন বাংলাদেশে তার পরিবারকে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে ৪ বিলিয়ন পাউন্ড আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। টিউলিপ এ জন্য প্রভাব খাটাতে শেখ হাসিনা, তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে ২০১৩ সালে মস্কো সফর করেন এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করেন। টিউলিপ সিদ্দিক তখন একজন শ্রম কাউন্সিলর ছিলেন। বাংলাদেশে রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র নির্মাণ চুক্তিটি তখনই রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি রোসাটমের সঙ্গে স্বাক্ষরিত হয়।
ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ব্রিটেনের আর্থিক নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের কার্যালয়- যেটি টিউলিপ সিদ্দিকের তত্ত্বাবধান, ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধের জন্য বেশ কয়েকজন ব্যক্তিসহ রুশ কোম্পানি রোসাটমের বিরুদ্ধে অন্তত ৪৫টি ব্যবস্থা আরোপ করেছে। ব্রিটিশ মিডিয়াগুলো বলছে, হ্যাম্পস্টেডের সংসদ সদস্য টিউলিপ সিদ্দিকের, রোসাটমের সহযোগী সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপগুলো নিয়মিত পর্যালোচনা করা উচিত।
বাংলাদেশের উচ্চ আদালত বলছে টিউলিপ সিদ্দিক, ১০ বিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের পারমাণবিক প্ল্যান্ট চুক্তির ‘দালালি’ করতে সাহায্য করেছিল। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বলছে, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ওই চুক্তিতে কথিত দুর্নীতি হয়েছিল। দুদক টিউলিপ সিদ্দিকের মা, তার খালা শেখ হাসিনা এবং অন্য দুই আত্মীয়ের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে। তাদের বিরুদ্ধে ভুয়া কোম্পানি ও মালয়েশিয়ার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ৩.৯ বিলিয়ন পাউন্ড পাচার হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভোটার তালিকার তথ্য দেখায় যে মোতালিফ মঈন গনি নামে একজন আইনজীবী যিনি মিসেস হাসিনার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন, তাকে মিসেস সিদ্দিক কিংস ক্রসের ফ্ল্যাটে থাকার অনুমতি দিয়েছিলেন। মোতালিফ ২০১৪ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে আওয়ামী লীগের একজন সাবেক এমপির ছেলে মজিবুল ইসলামের সাথে একটি ঠিকানাও শেয়ার করেছিলেন, যা হাসিনা সরকারের সাথে তার সংযোগের ইঙ্গিত দেয়।
একটি সূত্র ডেইলি মেইলকে বলেছে যে, সম্পত্তিটি টিউলিপ সিদ্দিকের কাছে কৃতজ্ঞতাস্বরূপ হস্তান্তর করা হয়েছিল যখন তার বাবা-মা মিস্টার মোতালিফকে ‘জীবনের একটি চ্যালেঞ্জিং সময়ে’ আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছিলেন। লেবার এমপি হওয়ার আগে টিউলিপ সিদ্দিকের আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নিয়ে ইতোমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। তিনি দলটির ইইউ এবং ব্রিটেনে ‘লবিং ইউনিট এবং নির্বাচনী কৌশল দলের’ জন্য কাজ করেছেন বলে মনে করা হয়।
এ দিকে টিউলিপ ২০২২ সাল থেকে, আওয়ামী লীগের ব্রিটেন শাখার সদস্য আব্দুল করিমের মালিকানাধীন ২.১ মিলিয়ন পাউন্ডের বাড়ি ভাড়া নেন। গত মাসে, তিনি নতুন পারমাণবিক প্ল্যান্ট চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশী এবং রুশ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তার পরও টিউলিপের প্রতি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর আস্থা আছে বলে দাবি করেননি ১০ জন। ট্রেজারির ইকোনমিক সেক্রেটারি হিসেবে, টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটেনে আর্থিক বাজারে দুর্নীতি মোকাবেলার দায়িত্ব পালন করেন। টিউলিপের একজন মুখপাত্র বলেছেন, টিউলিপ সিদ্দিকের এই সম্পত্তির মালিকানা বা অন্য যেকোনো সম্পত্তি আওয়ামী লীগের সমর্থনের সাথে সম্পর্কিত মনে করা ভুল হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা