০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ২২ পৌষ ১৪৩১, ৫ রজব ১৪৪৬
`

শীতে কাঁপছে দেশ সূর্যের দেখা নেই

আরো ৩ দিন থাকতে পারে কুয়াশা
হাড় কাঁপানো শীত ও ঘন কুয়াশায় কাবু দেশ। রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে তোলা। - ছবি : নাসিম সিকদার

হুল ফোটা শীতে কাঁপছে দেশ, নেই সূর্যালোক। বিপর্যস্ত অবস্থায় জনজীবন। কুয়াশায় মানুষের কাজের গতিও কমে গেছে। সন্ধ্যার আগেই বেশির ভাগ মানুষ ঘরে ঢুকে যাচ্ছেন। আবার পরদিন একটু দেরি করেই ঘর থেকে বের হচ্ছেন। একটু রাত বাড়লেই রাজধানীর রাস্তা ফাঁকা হয়ে যাওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ছে, রাত ১০টার পর কারফিউ অবস্থা মনে হয়।

অন্যান্য বারের চেয়ে এবার কুয়াশাসিক্ত শীতের দিনের সাথে এবারের দিনের বেলাটা বেশ পার্থক্য করা যায়। এবার দিনের বেলার কোনো এক সময়ও সূর্য দেখা যাচ্ছে না। অপর দিকে ঘন কুয়াশায় দিন দিন তাপমাত্রা শুধুই কমছে। গত সাত দিনে সারা দেশেই তাপমাত্রা কমে গেছে ৫ থেকে ৮ থেকে ডিগ্রি সেলসিয়াস। কুয়াশা এত বেশি ঘন যে, সকালে বৃষ্টির মতো বিন্দু বিন্দু পানির মতো ফোটা পড়তে দেখা যায়।

ঘন কুয়াশায় বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নদী পরিবহন ও সড়ক যোগাযোগ এবং রেল যোগাযোগ সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে বলে আবহাওয়া বিভাগ সতর্ক করেছে। আজ শনিবার সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে। তা সত্ত্বেও রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা, নওগাঁ ও কুষ্টিয়ায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় তেঁতুলিয়ায় ৮.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, জানুয়ারিতে এমনিতেই প্রচণ্ড শীত পড়ে। ২০১৩ সালে ৯ জানুয়ারি দিনাজপুরে তাপমাত্রা নেমেছিল ৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। তখন ৪৫ বছরের মধ্যে ওই তাপমাত্রাই ছিল সর্বনিম্ন। এবারো এমন অথবা এর কাছাকাছি তাপমাত্রা নেমে আসতে পারে।

ধোঁয়াটে কুয়াশায় দৃষ্টিসীমা এত সামনে চলে এসেছে যে, ১০০ গজ সবকিছুই ঝাপসা দেখা যায়। সামনের রাস্তা দেখা যায় না বলে রাতে দূর পাল্লার যানবাহনে যাত্রী চলাচল কমে গেছে। বাধ্য না হলে এই সময়ে অনেকেই রাতে দূরে কোথাও যেতে চায় না। দেশের দরিদ্র মানুষ কষ্টে আছে, বিশেষ করে শহরের বস্তিতে ও খোলা আকাশে রাতযাপনকারীরা। গ্রামের মানুষ ভালো নেই শহরের চেয়ে গ্রামে শীতের মাত্রা বেশি হু হু করে বাতাসে কুঁড়ে ঘরে বসবাসকৃত মানুষের রাতে ঘুম হয় না। হিমেল হাওয়ায় রাত বিভীষিকা মনে হয়। খড়-কুটোতে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করেন তারা।

আবহাওয়া দফতর বলছে, আরো দুই থেকে তিন দিন এ ধরনের ঘন কুয়াশা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী সোমবার অথবা মঙ্গলবারের দিকে কিছুটা বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টি হলেই কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে কুয়াশা। কারণ এই কুয়াশা ভূপৃষ্ঠ থেকে ওপরের দিকে অর্ধেক কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত।

আবহাওয়াবিদ মো: বজলুর রশীদ গতকাল রাতে বলেন, এই কুয়াশা স্থানীয়ভাবে তৈরি জলীয় বাষ্প থেকে হচ্ছে এবং আরব সাগর থেকে ওঠে আসা জলীয় বাষ্পের সাথে যোগ হয়ে দিল্লি, উত্তর প্রদেশ বিহার, পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশে আসছে। প্রায় এক হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃতি। ওপরের আকাশে এই জলীয় বাষ্প শুষ্ক হয়ে যাচ্ছে বলে মেঘ হতে পারছে না বলে বৃষ্টিও হচ্ছে না। যেহেতু ভারতের দিক থেকে আসছে, সেখানকার কোথাও বৃষ্টি হলেই কেটে যাবে এটা। মো: বজলুর রশীদ বলেন, দিনের বেলা সূর্যালোক পাওয়া যায় না বলে উচ্চ তাপমাত্রার সাথে নিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমে গেছে। যেমন, আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ স্যাটেলাই চিত্র বিশ্লেষণ করে বলছেন, গতকাল রংপুর ও রাজশাহী বিভাগীয় অঞ্চল ছাড়া দেশের অন্যত্র কুয়াশায় ঢাকা ছিল আকাশ।

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ ছাড়া দেশের অন্যত্র কুয়াশার পরিমাণ আরো ঘন হতে থাকবে। আজ শনিবারও ঢাকা, বরিশাল, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের সব জেলার আকাশ ঘন থেকে খুবই ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকার প্রবল আশঙ্কা করা হচ্ছে। আজো দেশের অধিকাংশ স্থানে সূর্যের আলো দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। সন্ধ্যার পর থেকে সারা রাত ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-বরিশাল, ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কগুলো ঘন থেকে খুবই ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকতে পারে।

উল্লেখিত মহাসড়কে দূর পাল্লার যানবাহনগুলোকে খুবই সাবধানে চালাতে হবে। এ ছাড়া রাতে পদ্মা ও মেঘনাসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের নদীগুলোতে প্রচণ্ড রকমের ঘন কুয়াশার আশঙ্কা রয়েছে। নদীপথে দৃষ্টিসীমা ১০০ মিটারে নেমে আসার প্রবল আশঙ্কা করা যাচ্ছে। এত ঘন কুয়াশায় নৌযানগুলো চলাচল না করলেই ভালো হয়। যদি একান্তই চলাচল করার প্রয়োজন হয় তাহলে নৌযানগুলোর গতিসীমা ১০ থেকে ২০ কিলোমিটারে নামিয়ে চলাচল করতে হবে। দুর্ঘটনা ঘটলে নৌযান অথবা যাত্রী অথবা এর চালনার সাথে সংশ্লিষ্টরাই নয়, দুর্ঘটনা ঘটলে প্রভাব পারিবারিক, সামাজিক এমনকি রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও পড়ে থাকে। সে কারণে সাবধানে চলাচল করে নিরাপদে পৌঁছানোর সব চেষ্টা করতে হবে।

দরিদ্র মানুষের শীত নিবারণের জন্য অন্যান্যবারের মতো রাষ্ট্রীয়ভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ কমূর্সচি পালন করা উচিত। কারণ দরিদ্র মানুষের কাছে এর আগে অনেক শীতবস্ত্র বিতরণ করলেও তারা সেগুলো শেষ পর্যন্ত রাখতে পারেন না অভাবের তাড়নায়। অনেকেই বিক্রি করে পেটের ক্ষুধা মিটিয়ে থাকেন। সে কারণে দ্রুততার সাথে শীতবস্ত্র বিতরণ করা উচিত।

শৈত্যপ্রবাহে চুয়াডাঙ্গায় জীবন-জীবিকায় টান
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, বছরের শুরুতে দ্বিতীয় দফায় শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়েছে চুয়াডাঙ্গা। এক দিনের ব্যবধানে জেলার তাপমাত্রা ২-৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন শীতার্ত মানুষ। এর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে কর্মজীবী মানুষের ওপর। হাড়কাঁপানো শীত ও কুয়াশার মধ্যেই তাদের কর্মস্থলে ছুটতে হচ্ছে। আলুক্ষেত ও ধানের বীজতলা রক্ষায় বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে জেলার কৃষি বিভাগে। গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টায় তাপমাত্রা হয়েছে এই জেলায় ১০.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এ নিয়ে চলতি মৌসুমে অন্তত চার দিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে জেলাটিতে। গত বুধবার একই সময়ে জেলার সর্বনিম্নœ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ এক দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা কমেছে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান বলেন, মাঝে কিছুদিন বিরতি দিয়ে জেলার ওপর দিয়ে আবারও শৈত্যপ্রবাহ বইতে শুরু করেছে। এ অবস্থা আরো কয়েক দিন চলতে পারে।

তীব্র ঠাণ্ডায় ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না, বললেন চুয়াডাঙ্গা সরদারপাড়ার বাসিন্দা ও মৎস্য শ্রমিক আশিক সরদার। তিনি বলেন, কয়েক দিন ধরে যেভাবে শীত পড়ছে, মাছ ধরতে পারছি না। পেটের দায়ে পুকুরে নামতে হচ্ছে। ভ্যানচালক টোকেন আলী বলেন, শীতের মধ্যে ঘর থেকে বাইরে বের হতে মন চায় না। কিন্তু ঘরে বসে থাকলে তো আর পেট চলবে না। তাই বাইরে বের হতে হচ্ছে। কিন্তু রাস্তাঘাটে লোকজন নেই। যাত্রী পাচ্ছি না।

এ দিকে শীতের কারণে কয়েক দিন ধরেই জেলার হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বেসরকারি হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষের ভিড় বেড়েছে। বিশেষ করে শিশু, ডায়রিয়া ও মেডিসিন বিভাগে রোগীদের উপচে পড়া ভিড়ের কারণে চিকিৎসক-নার্সদের হিমশিম অবস্থা।

গত কয়েক দিনের ঘন কুয়াশার কারণে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর আলুক্ষেত ও বোরো ধানের বীজতলা রক্ষায় বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে।

অধিদফতরের উপপরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, ধানের বীজতলা বিকেলে সেচ দিয়ে পরের দিন সকালে পানি বের করে দিতে হবে। এ ছাড়া সকালে চারার ওপর থেকে শিশির সরিয়ে দেয়া, সম্ভব হলে রাতের বেলা ঢেকে দিতে হবে। বীজতলা চাল হলে জিপসাম ও ইউরিয়া সার দেয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আলুক্ষেতে আগামধসা ও নাবিধসা ছত্রাক যাতে না লাগে, সে জন্য ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে বলা হয়েছে। সার্বিক বিষয় দেখভাল করতে মাঠপর্যায়ে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা সতর্কতার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন।

লালমনিরহাটে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা, ঠাণ্ডায় অজ্ঞাত ব্যক্তির মৃত্যু
লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, লালমনিরহাটে একটানা ঘন কুয়াশা, হিমেল বাতাস আর কনকনে ঠাণ্ডায় জবুথবু হয়ে পড়েছে জনজীবন। গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না, রাতে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো শীত পড়ায় কাহিল বয়স্ক শিশু ও অসুস্থ মানুষ। গতকাল শুক্রবার সকালে সাত জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঠাণ্ডায় কাবু হয়ে জেলার তুষভাণ্ডার রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রী ছাউনিতে ঘুমন্ত অজ্ঞাত এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।

শীতার্তরা বলছেন, প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের অভাবে শীতার্ত দুস্থ মানুষের ভরসা খড়কুটোর আগুন। একসাথে বসে আগুন জ্বালিয়ে শরীরে তা দিচ্ছেন ঠাণ্ডার দাপট থেকে রক্ষা পেতে।

রাজারহাট আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, লালমনিরহাটের আজ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তাপমাত্রা আরো কমে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ঠাণ্ডা বৃদ্ধি ও স্থায়ী হওয়ার কারণে জেলার সদর হাসপাতালসহ ৪ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও অ্যাজমাজনিত রোগীর সংখ্যা। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা আক্রান্ত হচ্ছে বেশি।

বিগত বছরের তুলনায় এ বছর শীতের পোশাক বিতরণের তৎপরতা অনেক কম বলে অভিযোগ করেছেন জেলার শীতার্ত মানুষেরা। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, ঠাণ্ডার কারণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছিন্নমূল মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি চলমান রয়েছে আমাদের।

রংপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস
বাসস জানায়, জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ৩ দিন পর গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টার পর একটু সূর্যের দেখা মিললেও হিমেল হাওয়া ও শেত্যপ্রবাহের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অনেকে ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। শীত বস্ত্রের অভাবে কষ্টে দিন কাটছে অসহায় দরিদ্র মানুষগুলোর। আঞ্চলিক সড়ক মহাসড়কে দিনের বেলায় হেডলাইট জ্বালিয়ে যান চলাচল করছে। শীতের দাপটে গ্রামাঞ্চলের অনেকেই খড়কুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টাও করছেন।
তবে জেলা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল ৯টায় জেলায় ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গত এক মাস ধরে এই অঞ্চলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। আগামীতে আরো তাপমাত্রা কমে এ জেলায় শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানায় আবহাওয়া অফিস ।

রংপুর বিভাগের পঞ্চগড় জেলায় আগামী কয়েক দিনের মধ্যে তাপমাত্রা ৪-৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যেতে পারে বলে মনে করেন আবহাওয়া অধিদফতর।

রংপুরসহ বিভিন্ন জেলায় ফুটপাথ দখল করে শীতের পোশাক বিক্রি করা হচ্ছে। চলতি মাসে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল ও নদ-নদী অববাহিকায় মাঝারি বা ঘনকুয়াশা এবং অন্যান্য স্থানে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে আসতে পারে, এতে শীতের অনুভূতি বাড়তে পারে।

জেলা শহরের জুম্মাপাড়া এলাকার শাহিনুর রহমান জানান, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শীত আর কুয়াশা পড়ছে। তবে তিন দিন ধরে শীত বাড়ছে। আবার সকালে ঘন কুয়াশা হিমেল হাওয়ার ঠাণ্ডা বাতাস বইছে।

লক্ষ্মীপুরে কুয়াশায় নষ্ট হচ্ছে বীজতলা
বাসস জানায়, কয়েক দিনের তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত জেলার জনজীবন। কুয়াশার কারণে নষ্ট হওয়ার উপক্রম বোরোর বীজতলা। এতে করে ব্যাহত হতে পারে বোরো ধানের আবাদ। যদি এভাবে কুয়াশা ও তীব্র শীত অব্যাহত থাকে, তাহলে মাঠের বীজতলা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। চলতি মৌসুমে লক্ষ্মীপুর জেলায় প্রায় ৩৭ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ধানের আবাদ শুরু করা হয়েছে। পাশাপাশি বীজতলা রয়েছে প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমিতে।
সদর উপজেলার যাদৈয়া এলাকার কৃষক ওসমান গনি ও দিদার হোসেন জানান, ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে বোরো ধানের বীজতলা নষ্ট হচ্ছে। চারা লালচে হয়ে মরে যাচ্ছে। যদি এইভাবে কুশায়া ও শীত পড়তে থাকে, তাহলে বোরো আবাদে বীজের সঙ্কট দেখা দেবে।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: ইমাম হোসেন বলেন, ঘন কুয়াশা ও শীতের প্রভাবে কিছু বীজতলা নষ্ট হয়েছে। পাশাপাশি বীজতলা যেন নষ্ট না হয়, সে বিষয়ে কৃষকদের নানা পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় বীজতলায় পানি দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। সকালে ওই পানি বীজতলা থেকে নামিয়ে দিলে ক্ষতির আশঙ্কা থাকবে না।

ঘন কুয়াশার কারণে লক্ষ্মীপুর-ভোলা নৌরুটে ব্যাহত হচ্ছে ফেরিচলাচল। এতে দুর্ভোগে পড়েছে হাজারো যাত্রী। মজুচৌধুরীর হাট ফেরিঘাট বিআইডব্লিউটির সহকারী ম্যানেজার মো: আতিকুজ্জামান বলেন, কয়েক দিন ধরে ঘন কুয়াশার কারণে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

এ দিকে ঠাণ্ডায় জেলাজুড়ে বাড়ছে নিউমোনিয়া, ডায়েরিয়া ও শাসকষ্টজনিত রোগ। গত এক সপ্তাহে সদর হাসপাতালেই ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে প্রায় ৪ শতাধিক রোগী। তাদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি। একই অবস্থা রায়পুর, রামগতি, কমলনগর ও রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে। বাড়ছে ঠাণ্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা।

সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর আত্মীয় আবদুল মালেক ও জিয়ান জানান, প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় ডায়েরিয়া ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি। কিন্তু বেড পাচ্ছি না। প্রতিটি বেডে দুই থেকে তিনটি শিশু ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। এতে দুর্ভোগ বাড়ছে কয়েকগুণ।

বিপর্যস্ত কুড়িগ্রামে তাপমাত্রা নেমেছে ৯.৫ ডিগ্রিতে
ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে তীব্র শীতের কামড়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রার ক্রমাগত পতন ঘটছে, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে। আজকের তাপমাত্রা নেমে এসেছে ৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা এই মৌসুমে এখন পর্যন্ত সর্বনিম্ন।

শীতের প্রকোপ এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কুয়াশার চাদরে ঢেকে থাকে গোটা এলাকা। দিনের বেলাতেও সূর্যের দেখা নেই, রাস্তাঘাট ঘন কুয়াশায় আচ্ছাদিত। যানবাহনগুলো বাধ্য হয়ে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। শ্রমজীবী মানুষের পক্ষে এই তীব্র ঠাণ্ডায় কাজ করা দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পশ্চিম ধনীরাম চর এলাকার দিনমজুর সাহেব আলী বলেন, ‘এমন শীতে কাজ করতে পারছি না, বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। গরম কাপড়ের অভাবে খুব কষ্ট হচ্ছে।’

প্রচণ্ড ঠাণ্ডার কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন শিশু ও বৃদ্ধরা। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্রের অভাবে অসংখ্য মানুষ বিভিন্ন ধরনের শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে যারা খোলা আকাশের নিচে বা জরাজীর্ণ ঘরে বসবাস করেন, তারা শীত নিবারণের জন্য সংগ্রাম করছেন। অনেকেই রাতে একসাথে গাদাগাদি করে কম্বলের নিচে রাত কাটাচ্ছেন।

শীতের প্রভাবে কৃষিকাজেও স্থবিরতা নেমে এসেছে। কৃষকদের মাঠে কাজ করতে অসুবিধা হচ্ছে, যার ফলে শস্য উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

কুড়িগ্রাম আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, ‘এ বছরে আজকের দিনটি কুড়িগ্রামের জন্য সবচেয়ে শীতল দিন ছিল। তাপমাত্রা নেমে এসেছে ৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এই শীত আরো কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে।’

 


আরো সংবাদ



premium cement