১ বছরের ব্যবধানে বিদেশে ৩ লাখ কর্মী কম গেছে
মালয়েশিয়াগামী প্রতারিত সোয়া ৩ হাজার শ্রমিকের অভিযোগ- মনির হোসেন
- ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০৫
বাংলাদেশ থেকে ২০২৩ সালে কর্মসংস্থানের জন্য বৈধভাবে সৌদি আরব, দুবাই, কাতার, কুয়েত, ইতালি, ফ্রান্সসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গেছেন ১৩ লাখ শ্রমিক। এটাই ছিল বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি কর্মীর বিদেশে যাওয়ার রেকর্ড। ২০২৪ এ ওই সংখ্যা কমে ১০ লাখে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ গত এক বছরে প্রায় তিন লাখ শ্রমিক বিদেশে কম গিয়েছে। অবশ্য বিদেশে শ্রমিক কম যাওয়ার পেছনে জনশক্তি ব্যবসায়ী ও অভিবাসন বিশ্লেষকরা নানা ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করছেন।
কেউ বলছেন, ২০২৩ সালে বাংলাদেশের বৃহৎ শ্রমবাজার মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণ উন্মুক্ত হওয়ার কারণে সেখানেই রেকর্ডসংখ্যক প্রায় পৌনে পাঁচ লাখ শ্রমিক যায়। ২০২৪ সালের মাঝামাঝি মালয়েশিয়া সরকার হঠাৎ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়া বন্ধ করলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে শ্রমবাজারের ওপর। একইভাবে বিশ্বের শ্রমবান্ধব অন্য দেশগুলোতেও কর্মী যাওয়ার পথ বন্ধ হওয়ার কারণেও বিদেশে শ্রমিক যাওয়ার হার কমে যায় বলে মনে করছেন তারা। পুরনো শ্রমবাজারের পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকার নতুন শ্রমবাজার না খুলতে পারলে জনশক্তি রফতানি অন্য দেশের হাতে চলে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে ১০ লাখ ১১ হাজার ৮৫৬ জন কর্মসংস্থানের উদ্দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। এর মধ্যে ছয় লাখ ১৫ হাজার ৫২৩ জনই গেছে সৌদি আরবে। মালয়েশিয়ায় গেছে ৯৩ হাজার ৬৩১ জন শ্রমিক। তারপরের স্থানে ইউরোপের দেশ পর্তুগালে ৭৩ হাজার ৯৭৩ জন।
বিদেশগামীদের অনেকে বিদেশ গিয়ে, আবার অনেকে বিদেশ যাওয়ার আগেই মালিক এবং দালালদের হাতে প্রতারিত হয়েছেন। বিশেষ করে মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, জর্দান এবং পশ্চিম ও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে যাওয়ার জন্য টাকা দিয়েও হাজার হাজার মানুষ প্রতারিত হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই শ্রমিকদের পক্ষ থেকে তাদের স্বজনরা ২০২৪ সালের বিভিন্ন সময়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোতে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। তার মধ্যে শুধু মালয়েশিয়ায় গিয়ে এবং সবকিছু হওয়ার পরও যেতে না পারা শ্রমিকের পক্ষ থেকে তিন হাজার ৩৮১টি লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে বলে জনশক্তি কর্মসংস্থান ব্যুরো সূত্রে জানা গেছে। এর মধ্যে অনেকগুলো অভিযোগের সমস্যার সমাধান ব্যুরো থেকে শুনানি শেষে সমাধান করে কর্মীদের কাছে ক্ষতিপূরণ তুলে দেয়া হয়েছে। এরপরও অনেক অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে। অনেক প্রতারিত শ্রমিক এখনো মালয়েশিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে টেলিফোনে জনশক্তি ব্যুরোতে নিয়োগকারী কোম্পানি এবং সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে চুক্তি অনুযায়ী কাজ এবং বেতন না দেয়ার অভিযোগ করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং বিএমইটিতে মোট তিন হাজার ৩৮১টি অভিযোগ জমা পড়ে। এর মধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে ১০৮৫টি, বিএমইটি থেকে ৬৭৮টি, ১৭ অক্টোবর-২০২৪এ ৪৭টি, ২৩ অক্টোবর ৩ ধাপে ১৩৮০টি, ১৯ অক্টোবর ৫৬টি এবং ৬১০ নম্বর স্মারকে ১৩৫টি অভিযোগ জমা পড়ে। এর মধ্যে সালিশ মধ্যস্থতা সংক্রান্ত সাধারণ আদেশ অনুযায়ী নিষ্পত্তি করা হয়েছে ১০৪টি অভিযোগ। ফোন বন্ধ, মোবাইল নম্বর সঠিক না, দালালের মোবাইল নম্বর দিতে পারেনি এমন অভিযোগ সমাধান হয়েছে ৮১১টি। মোট অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে ১১৫টি।
গতকাল জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিচালক (কর্মসংস্থান) মো: মাসুদ রানার সাথে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, আমরা প্রতিদিন যেসব অভিযোগ পাচ্ছি সেগুলোর তদন্ত এবং শুনানি করছি। আমাদের মূল কাজই হচ্ছে শ্রমিকের স্বার্থ দেখা। একই সাথে যাদের গাফিলতি পাচ্ছি তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশসহ পাঠাচ্ছি।
গতকাল কাকরাইলের একজন জনশক্তি রফতানিকারক নয়া দিগন্তকে আপেক্ষ করে বলেন, ২০২৪ সালে ১০ লাখ শ্রমিক গিয়েছে। অথচ এর আগের বছর গিয়েছিল (২০২৩) ১৩ লাখ শ্রমিক। কমার কারণ কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, মালয়েশিয়া, ওমান, বাহরাইন, লিবিয়া, লেবাননসহ অনেকগুলো দেশে লোক পাঠানো বন্ধ হয়ে আছে। সর্বশেষ গত ৩১ মে বন্ধ হয় মালয়েশিয়া। একমাত্র সৌদি আরব ছাড়া আর কোনো দেশেই তো শ্রমিক যাওয়ার সুযোগ দেখছি না। এর মধ্যে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে কয়েক মাস শ্রমিক প্রেরণের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়। এই সময় বিদেশগামী অনেকেই আবার প্রতারিত হয়। এখন ইউরোপের নামে অসংখ্য মানুষ প্রতারিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। আমাদের অন্তর্বর্তী সরকারকে এখন নতুন নতুন বাজার খোলার পাশাপাশি কর্মীরা যাতে প্রতারিত না হয় সেদিকে বেশি জোর দেয়া উচিত। নতুবা আমাদের শ্রমবাজারগুলো পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা