০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ পৌষ ১৪৩১, ৪ রজব ১৪৪৬
`

নানা উদ্যোগেও শেয়ারবাজারে আসছে না বহুজাতিক কোম্পানিগুলো

-

বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো ব্যবসা করে প্রতি বছর বড় অঙ্কের মুনাফা করছে। এসব মুনাফার বড় একটি অংশ তারা বৈদেশিক মুদ্রায় নগদ আকারে নিজ নিজ দেশে নিয়ে যাচ্ছে। তবে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত না হওয়ার কারণে দেশের বিনিয়োগকারীরা তেমন সুফল পাচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা নানা উদ্যোগ নিচ্ছে, তবুও তারা পুঁজিবাজারে আসছে না। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও নিয়মের বেড়াজালের কারণে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারে আসতে বাধা সৃষ্টি করছে বলে তারা মনে করছেন।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশে ৪০০টি বেশি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ব্যবসা পরিচালনা করছে। এদের মধ্যে মাত্র ১৩টি বহুজাতিক কোম্পানি দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো, বার্জার পেইন্টস (বাংলাদেশ) লিমিটেড, রেকিড বেনক্লিজার (বাংলাদেশ) লিমিটেড, গ্লাক্সোস্মিথকাইন (বাংলাদেশ) লিমিটেড, লিন্ডে (বাংলাদেশ) লিমিটেড, বাটা সু, ম্যারিকো (বাংলাদেশ) লিমিটেড, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, গ্রামীণফোন, সিঙ্গার (বাংলাদেশ) লিমিটেড, লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট, ফু-ওয়াং সিরামিকস এবং ফু-ওয়াং ফুডস।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, তালিকাভুক্ত বহুজাতিক ১৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অধিকাংশেরই কোম্পানিরই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য শেয়ারের সংখ্যা সামান্য। তালিকাভুক্ত ১৩টি কোম্পানির মধ্যে ফু-ওয়াং সিরামিকস এবং ফু-ওয়াং ফুডস ছাড়া বাকি ১১টি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেকটির শেয়ারের পরিমাণ ২০ শতাংশেরও কম সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অর্থাৎ এসব প্রতিষ্ঠান শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হলেও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সুযোগ দিচ্ছে সামান্য।
ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ নয়া দিগন্তকে বলেন, দেশের শেয়ারবাজারের ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্তির কথা সামনে আসলেই বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কথা উল্লেখ করতে হয়। বাংলাদেশে বছরের পর বছর বহুজাতিক কোম্পানিগুলো ব্যবসা পরিচালনা করছে। তবে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হচ্ছে না। গত দুই দশকে তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, নামমাত্র কয়েকটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, আমার জানামতে অনেক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও হয়েছে মাত্র কয়েকটি। দেশের শেয়ারবাজারের বড় সমস্যা এখানে ভালো কোম্পানির মারাত্মক অভাব। এ সঙ্কট দূর করার জন্য বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করতে হবে। বর্তমানে এই প্রেক্ষাপটে শেয়ারবাজারের গভীরতা বাড়ানোর জন্য বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তালিকাভুক্ত করার বিকল্প নেই বলে তিনি মনে করেন।
আবু আহমেদ বলেন, কোনো কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হলে কিছু নিয়মকানুন পালন করতে হয়। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হলে ব্যবস্থাপনাতে পরিবর্তন আনতে হয়। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে বছরে চারবার আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হয়। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো এসব নিয়মকানুন পালন করতে চায় না। তাই তারা শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী নয় বলে তিনি মনে করেন।
বহুজাতিক কোম্পানি বা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি এমন একটি করপোরেট প্রতিষ্ঠান যেটি তাদের নিজের দেশের বাইরেও এক বা একাধিক দেশে পণ্য ও সেবা উৎপাদন পরিচালনা করে। কোনো কোম্পানি বা গ্রুপ যদি দেশের বাইরে থেকে তাদের মোট লভ্যাংশের ২৫ শতাংশ অর্জন করে তবে তাকে বহুজাতিক কোম্পানি বলা যায়। বহুজাতিক কোম্পানিকে মাল্টিন্যাশনাল করপোরেশন, মাল্টিন্যাশনাল বা বহুজাতিক এন্টারপ্রাইজ, ট্রান্সন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজ, আন্তর্জাতিক কোম্পানি, ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন ইত্যাদি বলেও অভিহিত করা যায়। তবে বহুজাতিক কোম্পানি ও আন্তর্জাতিক কোম্পানির মধ্যে সূক্ষ্ম কিছু পার্থক্য বিদ্যমান।
বাংলাদেশ গত ৬০ বছর যাবত ব্যবসা করছেন নেদারল্যান্ডসভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিলিভার বাংলাদেশ। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানটিতে ৪০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে বাংলাদেশ সরকার। প্রতিষ্ঠানটিকে দেশের শেয়ারবাজারে আনতে নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও তারা তালিকাভুক্ত হচ্ছে না। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন বাংলাদেশে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো অনাগ্রহী। এসব প্রতিষ্ঠান ভালো ব্যবসা করলেও তালিকাভুক্ত হচ্ছে না। এসব প্রতিষ্ঠান বছর শেষে বিপুল পরিমাণ মুনাফা করলেও দেশর মানুষকে ভাগ দিতে চান না।
শেয়ারবাজার পর্যালোচনায় দেখা যায় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা গত ১৪ বছরে ১২৭টি প্রতিষ্ঠানকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য অনুমোদন করেছে। এর মাধ্যমে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে পাবলিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। তবে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর ভালো ফল বয়ে আনতে পারেনি। কারণ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর এসব প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগেরই ব্যবসার গতি হারিয়েছে। গত ১৪ বছরে অনুমোদিত ১২৭ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে আছে মাত্র ৫২টি, ‘বি’ ক্যাটাগরিতে ৪৩টি। এ ছাড়া, ৩২টি প্রতিষ্ঠানকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নামিয়ে আনা হয়েছে।
তথ্যে দেখা যায়, তালিকাভুক্তির পর ৪০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান ‘এ’ ক্যাটাগরির মর্যাদা ধরে রেখেছে এবং ৬০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান তা পারেনি। নিয়মানুযায়ী কোনো প্রতিষ্ঠান ১০ শতাংশের কম বার্ষিক লভ্যাংশ দিলে তাকে ‘বি’ ক্যাটাগরি ধরা হয়। ‘এ’ ক্যাটাগরির প্রতিষ্ঠানকে কমপক্ষে ১০ শতাংশ হারে লভ্যাংশ দিতে হয়। কোনো প্রতিষ্ঠান পর পর দুই বছর লভ্যাংশ দিতে না পারলে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নামিয়ে দেয়া হয়। ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নেমে যাওয়ার কারণগুলোর মধ্যে আছে নিয়মিত বার্ষিক সাধারণ সভা আয়োজনে ব্যর্থ হওয়া, ছয় মাসের জন্য উৎপাদন বন্ধ রাখা বা প্রতিষ্ঠানটির পরিশোধিত মূলধনের চেয়ে সঞ্চিত লোকসানের পরিমাণ বেশি হওয়া।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলো যখন দেখে তালিকাভুক্ত হলে বিশেষ কোনো লাভ নেই। তখন তারা শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এ ক্ষেত্রে যেসব বিদেশী কোম্পানি দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত তাদের তুলনায় অতালিকাভুক্ত বিদেশী কোম্পানির কর হার আরও বাড়ানো যেতে পারে। এতে অতালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী হবে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
একই সাথে যেসব বিদেশী কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয়, তাদের নগদ লভ্যাংশের ওপর বর্ধিত হারে করারোপ করা যেতে পারে। এতে কোম্পানিগুলোর ওপর এক ধরনের চাপ তৈরি হবে। অন্য দিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে আগ্রহী করে তুলতে ট্যাক্স হলিডে প্রদানসহ বিভিন্ন সুবিধা দেয়া যেতে পারে। এ ছাড়া কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে নিয়ে আসতে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা যেতে পারে সংশ্লিষ্টরাও মনে করেন।
বাংলাদেশে ব্যবসা করার জন্য কোম্পানিগুলোকে আরজেএসসি থেকে নিবন্ধন সনদ নিতে হয়। এ নিবন্ধনের সময় শর্তারোপ করে বিদেশী কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তির ব্যাপারে বাধ্য করা যেতে পারে। কোম্পানির মূলধনের একটি নির্দিষ্ট অংশ শেয়ারবাজার থেকে পাবলিক অফারের মাধ্যমে সংগ্রহের শর্ত আরোপ করা যেতে পারে। এ ছাড়া বহুজাতিক কোম্পানিগুলো কোনো না কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এদের মাধ্যমে কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে চাপ তৈরি করা যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।


আরো সংবাদ



premium cement
রাতের ভোটের ৩০ জেলা প্রশাসক গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচনের তারিখ নির্ভর করছে সংস্কার কতটা তার ওপর জটিলতা না থাকলে মঙ্গলবার বিদেশ যাচ্ছেন খালেদা জিয়া ধ্বংসস্তুপ থেকে অর্থনীতি টেনে তোলার চ্যালেঞ্জে অন্তর্বর্তী সরকার সম্মিলিত কল্যাণমুখী সরকার দেশের কল্যাণ আনবে : ডা: শফিক ছাত্রদলকে পড়ায় মনোযোগী হতে বললেন মির্জা ফখরুল বিএফআইইউ প্রধান হতে এস আলম ও আ’লীগের সুবিধাভোগীদের দৌড়ঝাঁপ পদ ছাড়াই রূপালী ব্যাংকে ঢালাও পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু ভারতে প্রশিক্ষণ নিতে যাচ্ছেন নিম্ন আদালতের ৫০ বিচারক দুপুরে সূর্য উঁকি দিলেও রাত কেটেছে প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সকল