০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ পৌষ ১৪৩১, ৪ রজব ১৪৪৬
`

ভারতে পর্যটকধস, সর্বোচ্চ পর্যটক ২১ লাখ বাংলাদেশী

-

ভারতে বিদেশী নাগরিকদের আগমন ও প্রস্থান নিয়ে এক বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে দেখা গেছে, এপ্রিল ২০২৩ থেকে মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত ভারতে মোট ৯৮ লাখ ৪০ হাজার ৩২১ জন বিদেশী ভ্রমণ করেছেন। এই সময়কালে ভারতে সর্বাধিক বিদেশী পর্যটক এসেছেন বাংলাদেশ থেকে মোট ২১ লাখ। এরপর তালিকায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র (১৭ লাখ) ও যুক্তরাজ্য (৯ লাখ)। এ ছাড়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, জার্মানি, নেপাল ও সিঙ্গাপুর থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পর্যটক এসেছেন। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, এই ১০টি দেশ থেকে আসা পর্যটকরা মোট বিদেশী আগমনের ৭০.২৭ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে।
ভারতীয় মিডিয়া দ্য প্রিন্টের এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, শুধু বাংলাদেশ নয় অন্যান্য দেশ থেকে ভারতে পর্যটক আসা কমছে। গত এক দশক ধরে, ভারতে বিদেশী ভ্রমণকারী ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। এমনকি ভারতীয়রাও ক্রমশ দেশটির পর্যটন স্থানগুলোকে এড়িয়ে যাচ্ছে। কারণ ভারতীয়রা নিজের দেশের চেয়ে অনেক কম ব্যয়বহুল এবং ভারতের চেয়ে বেশি মজাদার স্থান বেছে নিচ্ছে। শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপে ভারতীয়রা যাচ্ছেন সহজেই। সোশ্যাল মিডিয়া অনুসরণ করে দেখা গেছে ভারতের গোয়ায় বিদেশী ও দেশী পর্যটক হ্রাস পাচ্ছে। ভারতের পর্যটক লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ২০৪৭ সালের মধ্যে দেশটিতে ১০০ মিলিয়ন বিদেশী পর্যটক নেয়া। বিশ্বের অন্য দেশগুলোর তুলনায়, এ লক্ষ্যমাত্রা তেমন বড় নয়। ২০১৯ সালে, ৯০ মিলিয়ন পর্যটক ফ্রান্সে গিয়েছিলেন। ২০২৩ সালে, স্পেন ৮৫ মিলিয়ন আগমন রেকর্ড করেছে। সুতরাং, ভারতের পক্ষে আরো ২০ বছরে সেই ১০০ মিলিয়ন লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্পূর্ণভাবে সম্ভব হওয়া উচিত। এ জন্য বিদেশী পর্যটকদের আগমন বছরে ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি করতে হবে। কিন্তু সত্য হলো ২০০১ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ভারতে পর্যটক বৃদ্ধি পেয়েছে শুধুমাত্র ৮.৫ শতাংশ। এবং এখন, পর্যটকদের আগমন আসলে কমে আসছে। ২০১৯ সালে ১০.৯ মিলিয়নে পৌঁছানো পর্যটকের হার আর কখনো সেই সংখ্যায় পৌঁছায়নি।
ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি নাইজেরিয়ার নাগরিকদের বহিষ্কার করা হয়েছে। এরপরই রয়েছে বাংলাদেশ ও উগান্ডার নাগরিকরা। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ১ এপ্রিল ২০২৩ থেকে ৩১ মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত পাকিস্তানের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য এক হাজার ১১২টি দীর্ঘমেয়াদি ভিসা (এলটিভি) অনুমোদন করে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, এই সময়কালে মোট দুই হাজার ৩৩১ জন বিদেশী নাগরিককে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর মধ্যে এক হাজার ৪৭০ জন নাইজেরিয়ার, ৪১১ জন বাংলাদেশের এবং ৭৮ জন উগান্ডার নাগরিক। ভারতে যখন কোনো ব্যক্তি বৈধ ভিসা বা প্রয়োজনীয় নথিপত্র ছাড়া দেশে প্রবেশ করে বা ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও অবস্থান করেন, তখন তাকে বহিষ্কার করা হয়। ভারতের ছয়টি নির্দিষ্ট বিমানবন্দরে তিনটি দেশের নাগরিকদের জন্য অন-অ্যারাইভাল ভিসার সুবিধা রয়েছে। দেশগুলো হলো জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
দ্য ইকোনমিস্ট ভারতের পর্যটন ব্যর্থতা সম্পর্কে একটি সাম্প্রতিক নিবন্ধে উল্লেখ করেছে, এমনকি ভারত যখন ১০.৯ মিলিয়ন দর্শনার্থীদের শীর্ষে ছিল, তখন দুবাই, একটি একক শহর, ১৬.৭ মিলিয়ন পর্যটকদের আকর্ষণ করেছিল। দুবাইয়ের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে, ২০১৯ সালের একই সময়ের তুলনায় দুবাই ১১ শতাংশ বেশি পর্যটককে টানতে পেরেছিল। কিন্তু সেই একই সময়ের মধ্যে, ভারত থেকে আসা পর্যটক প্রকৃতপক্ষে ১০ শতাংশ কমেছে। ভারতে পর্যটক হ্রাসে দ্য ইকোনমিস্টের ব্যাখ্যা হচ্ছে, লাল ফিতা, প্রচারের অভাব, দূষণ নিয়ে উদ্বেগ, পরিচ্ছন্নতা সংক্রান্ত সমস্যা ইত্যাদি যার সবই বৈধ কিন্তু ভারতে এর সঠিক মোকাবেলা হচ্ছে না। এর বাইরে বোমা বিস্ফোরণ, নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যভীতিতো রয়েছেই।
ভারতের গোয়া, জয়পুর বা আগ্রাতে বিদেশী পর্যটকের চেয়ে ভারতীয় পর্যটক বেশি থাকলেও এখন ভারতীয়রাও পর্যটন গন্তব্যগুলোকে ক্রমশ এড়িয়ে যাচ্ছে। এর কারণ ব্যাংককের হোটেলগুলো ভারতীয় পর্যটন স্পটের চেয়ে অনেক কম খরচে পর্যটকদের সার্ভিস দিচ্ছে। বিভিন্ন ভারতীয় শহর থেকে অনেক সস্তা ফ্লাইট রয়েছে এবং থাই বাজেটের হোটেলগুলো গোয়ার থেকে ভালো এবং সস্তা। দিল্লি থেকে ব্যাঙ্কক পর্যন্ত বিজনেস ক্লাসের ভাড়া দিল্লি থেকে গোয়ার ভাড়ার তুলনায় কম। শ্রীলঙ্কার মতো, অন্যান্য মাঝারি-দূরত্বের গন্তব্যগুলো আরো সস্তা। ভিয়েতনামে একই কারণে ছুটছে ভারতীয় পর্যটকরা।
যখন সুদূর প্রাচ্যের প্রায় প্রতিটি গন্তব্য ভারতীয় গন্তব্যগুলোর একটি গুরুতর প্রতিদ্বন্দ্বী, মধ্য এশিয়াও হঠাৎ করে খুলেছে। ভারতীয়রা উজবেকিস্তান বা কাজাখস্তানে যাচ্ছে বা মধ্য এশিয়া বেছে নিচ্ছে কারণ ফ্লাইটগুলো প্রায় তিন ঘণ্টা সময় নেয়, হোটেলগুলো ভালো এবং সস্তা এবং অন্য সবকিছুর প্রতিযোগিতামূলক মূল্য। থাইল্যান্ড এখন ভারতীয়দের ভিসা ছাড়াই প্রবেশ করতে দেয়।
শুধু টাকা নয়। ট্যাক্সি মাফিয়া, ভয়ানক পরিকাঠামো, দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ ও আমলা, পুলিশ-ঠগ নেক্সাস ইত্যাদি ভারতের পর্যটক কমে যাওয়ার বিবিধ কারণ। অন্যদিকে, ভারতে, জিডিপিতে পর্যটনের অবদান প্রকৃতপক্ষে ২০০২-২০০৩ সালে ৫.৮ শতাংশ থেকে ২০১৯-২০ সালে ৫.২ শতাংশে নেমে এসেছে। এমনকি এখন পর্যন্ত, ভারত কোভিডের সময় পর্যটনে প্রবৃদ্ধিতে ফিরে যেতে পারেনি।


আরো সংবাদ



premium cement
রাতের ভোটের ৩০ জেলা প্রশাসক গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচনের তারিখ নির্ভর করছে সংস্কার কতটা তার ওপর জটিলতা না থাকলে মঙ্গলবার বিদেশ যাচ্ছেন খালেদা জিয়া ধ্বংসস্তুপ থেকে অর্থনীতি টেনে তোলার চ্যালেঞ্জে অন্তর্বর্তী সরকার সম্মিলিত কল্যাণমুখী সরকার দেশের কল্যাণ আনবে : ডা: শফিক ছাত্রদলকে পড়ায় মনোযোগী হতে বললেন মির্জা ফখরুল বিএফআইইউ প্রধান হতে এস আলম ও আ’লীগের সুবিধাভোগীদের দৌড়ঝাঁপ পদ ছাড়াই রূপালী ব্যাংকে ঢালাও পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু ভারতে প্রশিক্ষণ নিতে যাচ্ছেন নিম্ন আদালতের ৫০ বিচারক দুপুরে সূর্য উঁকি দিলেও রাত কেটেছে প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সকল