০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ পৌষ ১৪৩১, ৩ রজব ১৪৪৬
`

শর্ত ভঙ্গ করে ঢাকায় অসংখ্য ভবন, নির্বিকার রাজউক

রাজধানীর বাড্ডা মৌজার ১৬৮৩ সিএস খতিয়ানের এই ভবনটির উপরের অংশ গড়ে উঠেছে রাস্তার ওপর -

শর্ত ভঙ্গ করে ঢাকায় উঠে গেছে অসংখ্য ভবন, দেখার দায়িত্ব থাকলেও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) একেবারেই নির্বিকার। ভবন ব্যবহারের আগে অকুপেন্সি সার্টিফিকেট দেয়ার আগে ভবনটি রাজউক থেকে অনুমোদিত প্ল্যান (নকশা) অনুযায়ী করা হয়েছে কি না তা দেখা বাধ্যতামূলক হলেও রাজউকের এই ধারাটি কাগুজে ধারায় পরিণত হয়েছে। বড় ধরনের নকশা ত্রুটি নিয়েও রাজউকের আওতাধীন এলাকায় কয়েক হাজার ভবন দাঁড়িয়ে আছে। ত্রুটিযুক্ত প্ল্যানে তৈরি স্থাপনাগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায় জানা সত্ত্বেও রাজউক এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। এ ব্যাপারে স্থপতি, সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, ঠিকাদার এবং সম্প্রতি ভবন নির্মাণ করেছেন এমন বাড়িওয়ালাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীতে কোথায় কোন ভবন নির্মাণ হচ্ছে বা হয়েছে এর প্রত্যেকটির খবর রাজউকের পরিদর্শকদের জানা থাকে। এদের চোখের সামনেই রাজউক থেকে অনুমোদিত প্ল্যানের শর্ত ভঙ্গ করে ভবন মালিকরা ভবন তৈরি করে থাকেন। ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮ অনুযায়ী, ভবনের সামনে ২০ ফুটের রাস্তা না থাকলে বহুতলতো দূরের কথা ছয়তলা ভবনও তোলা যায় না। এর বাইরে ভবনের চারদিক থেকে নির্দিষ্ট জায়গা ছেড়ে দিতে হয়। কিন্তু ঢাকার বিভিন্ন স্থানে প্রচুর নির্মাণাধীন বহুতল ভবন দেখা যাচ্ছে যেগুলোর সামনে ১০ ফুট রাস্তাও নেই।
রাজধানীর মেরুল বাড্ডা এলাকার লোকজন এ ধরনের কিছু অভিযোগ নিয়ে নয়া দিগন্তে এসেছিলেন। তারা জানান, মেরুল বাড্ডা এলাকায় প্রচুর অনুমোদিত নকশা অনুসরণ না করে অনেক বাড়ি হচ্ছে। তাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মেরুল বাড্ডা এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে এমন অনেক বাড়ি খুঁজে পেয়েছে যেখানে বহুতল ভবন উঠে গেছে কিন্তু সামনে যথেষ্ট রাস্তা নেই। দেখা গেছে, আনন্দনগরের তোবা গার্মেন্টসের পাশের রাস্তাগুলো ক্রমশই সরু হয়ে গেছে। মূল রাস্তাটি ১৬ ফুট হলেও তা থেকে ১০ ফুট রাস্তার পাশেই গড়ে উঠছে অনেক ভবন।
এমনই একটি ভবন ১৬৮৩ নম্বর প্লটের (আংশিক) বহুতল একটি বাড়ি। এ পর্যন্ত চতুর্থ তলা উঠে গেছে, এলাকাবাসীর কয়েকজন জানিয়েছেন, শেষ পর্যন্ত ভবনটি ১০ তলা পর্যন্ত উঠবে। জানা গেছে, চাকরিরত কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা ভবনটির মালিক। ভবনটির দ্বিতীয় তলার বারান্দার পুরোটাই রাস্তার ওপর। এলাকাবাসীর কয়েকজন জানিয়েছেন, পুলিশে কর্মরত বলে তাদের কাছে নকশা বিচ্যুতির অভিযোগ করার কেউ সাহস পায়নি। এখন সরকার পরিবর্তনের পর তাদেরই কয়েকজন সাহসী হয়ে সংবাদপত্রের মাধ্যমে রাজউকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। রাজউক যেন ভবনটিকে আর নকশা বিচ্যুতি নিয়ে ওপরে উঠতে না দেয়। নির্মাণাধীন এই ভবনটির চারপাশে পাঁচজনের জায়গা রয়েছে। ১৬৮৩ নম্বর প্লটের এই ভবনটির বারান্দা চারপাশের পাঁচজনের জায়গার ওপর পড়েছে। এই অন্যায়ের প্রতিবিধান চেয়েছেন তারা।
এ ব্যাপারে রাজউকের পরিচালক (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ-২) মো: মনিরুল হক জানান, রাজউকের পক্ষ থেকে প্রায় প্রতিদিনই মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে নকশা বিচ্যুতির বাড়িগুলোর বিরুদ্ধে। তারপরও বাড়ির মালিকরা নকশা অনুসরণ না করে বাড়ি নির্মাণ করছেন। আমরা কোনো ভবনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে আসার পরই আবার বাড়ির মালিকরা আগের মতোই কাজ শুরু করে দেন। এ ব্যাপারে বাড়ির মালিকদের সচেতনতা প্রয়োজন। সবার উচিত অনুমোদিত নকশায় বাড়ি নির্মাণ করা।


আরো সংবাদ



premium cement