রাওয়ার মাধ্যমে প্রশিক্ষিত শক্তিকে দেশের কাজে লাগাতে পারব
- ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৫৪
কর্নেল মোহাম্মদ আবদুল হক পিএসসি (অব:)। সামরিক ও বেসামরিক পরিমণ্ডলে সব ক্ষেত্রে যোগ্যতা ও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, দুঃসাহসী, মটিভেটর এমনকি জুলাই আন্দোলনের সফল সামরিক নেতা তিনি। সামরিক জীবনে তিনি স্টাফ, কমান্ড, প্রশিক্ষক, জাতিসঙ্ঘ মিশনসহ সর্বত্র অত্যন্ত সফলতার পরিচয় দিয়েছেন। ১৯ ইস্টবেঙ্গল, ১৪ বীর, ৪২ ইস্টবেঙ্গল, ব্যানবেট-১০ (আনমিল) এর অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন খুব দক্ষতার সাথে। সামরিক বাহিনীর মেজর ও সমপর্যায়ের অফিসারদের জন্য ল্যান্ড ফোনের প্রাধিকার করেছিলেন তিনি। লেখক হিসেবে ইতোমধ্যে চারটি বই প্রকাশ করেছেন। মোহাম্মদ আবদুল হক এবার রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (রাওয়া) নির্বাচন-২৪ এ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। প্রথমবারের মতো এবার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় রাওয়া ক্লাবের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে মোহাম্মদ আবদুল হক চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই দায়িত্ব পেয়ে সদস্যদের কল্যাণে কাজ শুরু করবেন তিনি। রাওয়ার ভবিষ্যৎ উন্নয়ন ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কর্নেল মোহাম্মদ আবদুল হক পিএসসির (অব.) সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নয়া দিগন্তের সিনিয়র রিপোর্টার এস এম মিন্টু।
নয়া দিগন্ত : নতুন সভাপতি হিসেবে রাওয়া ক্লাবের ভবিষৎ নিয়ে কী ভাবছেন?
আবদুল হক : সর্বপ্রথম আমি মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তার অশেষ রহমত ও বরকতের মাধ্যমে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে আটজন প্রার্থীর মধ্যে তিনি আমাকে নির্বাচিত করেছেন। আস্থা ও বিশ্বাসের মধ্যে থেকে যারা আমাকে ভোট দিয়েছেন তাদের এবং তাদের সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানাই।
যারা ভোট দেন নাই, তাদের প্রতিও আমি কৃতজ্ঞ। রাওয়া তিন বাহিনী, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনীর, বিমান বাহিনী মিলে একটি অর্গানাইজেশন। এখানে যদিও বর্তমান সদস্যের সংখ্যা ৬ হাজারের বেশি, কিন্তু এর সদস্য আরো অনেক বেশি বাইরে আছে, যারা তালিকাভুক্ত হননি, বিভিন্ন কারণে হন নাই বা হতে পারেন নাই। এই একটা বিষয় সুশিক্ষিত, সুপ্রশিক্ষিত সেনা সামরিক অফিসারদের এই সংগঠন বাংলাদেশের মতো দেশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সামরিক অফিসাররা অল্প বয়সেই অবসরপ্রাপ্ত হন। কেননা সামরিক অফিসার থাকতে হলে তাদের শারীরিক সামর্থ্য যুদ্ধ ক্ষেত্রের মতো থাকতে হয়। প্রশাসনের অন্য পদের মতো সামরিক বাহিনী নয়। এই যে হাজার হাজার অফিসার তারা কিন্তু সুপ্রশিক্ষিত, সুশিক্ষিত, সংগ্রামী, জ্ঞানী, বুদ্ধিমান, দেশ, জাতি, রাষ্ট্রনীতি, সমাজনীতি, সব বিষয়ে পড়াশোনা করার লোক আছে সামরিক বাহিনীতে।
ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, যুদ্ধবিদ, লেখক, সাহিত্যিক, কবি সব কিন্তু আছে এখানে। এই কারণে সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত অফিসারদের দেশের কাজে না লাগাতে পারেন তবে এটা হবে এ রকম যে আপনার ঘরে বিশাল সম্পদ আছে কিন্তু সেই সম্পদ আপনি কাজে লাগাতে পারলেন না। এই রাওয়ার মাধ্যমে এই বিশাল শক্তিটাকে দেশের কাজে আমরা লাগাতে পারব।
নয়া দিগন্ত : রাওয়া থেকে ভবিষ্যতে কি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠার চিন্তা আছে?
আবদুল হক : বর্তমানে আমাদের রাজনীতিতে যে দৈন্যদশা, রাজনীতিতে আপনি ভালো লোক খুঁজে পান না। বিশেষ করে মূল্যবোধহীন, অশিক্ষিত, কুশিক্ষিত, যারা অবৈধভাবে টাকা অর্জন করছে, সেসব লোক যদি আইন প্রণেতা হয়, তবে আপনি দেশকে কী দেবেন? তারা তো দেশকে ভালো কিছু দিতে পারবে না। আপনি দেখেন যেসব মিলিটারি অফিসার এসব পদে গেছে, তারা কিন্তু ভালো করেছে। পৃথিবীর সব দেশেই এই অবসরপ্রাপ্ত মিলিটারি অফিসারদের কাজে লাগানো যায়। এই রাওয়ার মাধ্যমে আমরা চেষ্টা করব এই বিশাল কাজটা করার জন্য। এর জন্য আমরা সিভিল মিলিটারি সম্পর্ককে আরো শক্তিশালী করার চেষ্টা করব। যদি আমরা একটি বডি হই, কোনো পার্থক্য থাকবে না। আমরা সিভিলিয়ান আর্মি এটা বলব না। এই ভূখণ্ডে আমরা ভাই ভাই। আমরা ঐক্যের পরিস্থিত সৃষ্টি করব। এটা হবে এ পলিটিক্যাল ইনক্লুসিভ অর্থাৎ, নন পলিটিক্যাল। রাওয়াতে কোনো রাজনীতি হবে না। সব দলের সব মতের লোক এখানে থাকবে। রাজনীতি করবে বাইরে গিয়ে আর রাওয়াতে আসবে, মিলিটারি অফিসার হয়ে। তাই আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই দেশকে আমরা অনেক কিছু উপহার দিবো।
নয়া দিগন্ত : রাওয়া ক্লাবে প্রথমবারের মতো গণতান্ত্রিক পন্থায় ভোট হয়েছে। এতে আপনার ভূমিকা কেমন ছিল?
আবদুল হক : এ ক্লাব বহুদিন পর ফ্যাসিবাদী সরকারের কবল থেকে মুক্ত করা হয়েছে এবং তা গণতান্ত্রিক পন্থায়। এই গণতন্ত্র দেখার মতো গণতন্ত্র ছিল। আপনারা যদি এসে থাকেন তবে দেখেছেন, এখানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাজার হাজার সেনা সদস্য ভোট দিয়েছেন। তাদের পরিবার এসেছে। সরগরম একটা পরিবেশ ছিল। অত্যন্ত সুন্দর শান্ত পরিবেশে ভোটটা হয়েছে। সেখানে জাতীয় নির্বাচনের একজন কমিশনারও ছিলেন এবং তিনি দেখে অবিভূত হয়ে গেছেন।
একটা উদাহরণ সৃষ্টি করেছি রাওয়ার মাধ্যমে। এই রাওয়াকে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে কাজ করতে হবে। অনেক দিন থেকে সামরিক অফিসাররা বঞ্চিত। আমরা সত্যিকার অর্থেই অনেক বঞ্চিত।
আপনাকে একটা কথা মনে রাখতে হবে, একমাত্র সামরিক অফিসাররাই শপথ নেয় জীবন বিলিয়ে দেয়ার জন্য। এটা কিন্তু বাইরের প্রশাসনের লোকেরা করেন না। একজন পুলিশের লোক করেন না, একজন সেক্রেটারি করেন না।
চিন্তা করে দেখুন, যে শপথ নিলো, আমি আমার জীবন উৎসর্গ করে দিবো এবং ২৪ ঘণ্টা দেশের সেবায় নিয়োজিত থাকব। তাহলে তার অবস্থা কী? কী সুযোগ সুবিধা পাওয়া উচিত। আর যে করল না, তার কী হওয়া উচিত। আপনার জন্য যে জীবন দিবে, আর যে জীবন দেবে না, দু’জন কি সমান?
এ জন্য পৃথিবীর সব দেশেই সামরিক অফিসার বা সৈনিকদের মর্যাদা সবসময় আলাদা থাকে। সুতরাং এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা এই কল্যাণমূলক কাজগুলো করব ইনশাআল্লাহ।
নয়া দিগন্ত : বিগত সরকার ক্ষমতায় থেকে বিভিন্ন গুম, খুন, আয়নাঘর তৈরি করেছে। ৫ আগস্টের আগে আপনাদের এখানে যে অবস্থান ছিল সে সম্পর্কে কিছু বলুন।
আবদুল হক : এই ফ্যাসিস্ট সরকার আমার মতো অনেক অফিসারকে চাকরিচ্যুত করেছিল, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার কারণে। আমি প্রথমেই শপথ গ্রহণ করেছিলাম, যেদিন আমি ২৯ এপ্রিল ২০১০ সালে সাভার সেনা স্টেশনের কমান্ডার ছিলাম। সেখানে কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ করে আমাকে চাকরিচ্যুত করে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। এমন আরো অনেক অফিসারকে করা হয়েছে। ভারতের তৈরি করা একটি সরকার যেদিন আমাদের ৫৭ সেনা কর্মকর্তাকে নির্মমভাবে হত্যা করল। এটাকে হত্যাকাণ্ড বললে সঠিক হবে না, এটা নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। হাসিনা যেদিন ক্ষমতায় আসল সেদিনই আমি বুঝতে পেরেছি, প্রতিবেশী দেশের যড়যন্ত্রের মাধ্যমে তারা ক্ষমতায় এসেছে। দেশটাকে ধ্বংস করা জন্য।
২৮ অক্টোবর ২০০৬ সালে যেভাবে নির্মমভাবে এই আওয়ামী লীগ কর্মীরা মানুষকে হত্যা করেছিল, আপনার কি মনে আছে সেই কথা? সেটা ছিল তাদের শুরু। এই দেশকে ভারতের অধীন করার জন্য একটি প্রশিক্ষিত দল হলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার যত সংগঠন আছে।
তারা বাংলাদেশকে চিরতরে ভারতের হাতে তুলে দেয়ার জন্য কাজগুলো করেছে। এই ধারণা আমার আগেই ছিল যে ভারত এ দেশের জনগণকে পছন্দ করে না কখনো। তখন থেকেই আমি সোস্যাল মিডিয়াতে যুদ্ধ করা শুরু করি। আমার একেকটা লেখা বিভিন্ন চ্যানেলে মিলিয়ন মানুষ দেখেছে। হাসিনার বিরুদ্ধে আমি প্রকাশ্যে বলতাম। আমাকে গ্রেফতার করা, গুম করার তিনটি পরিকল্পনা করেছিল। আমি জেনে গেছি আগেই। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাকে সহযোগিতা করেছেন। আমি অনেককে ডেকে এনে দেশে-বিদেশে হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করিয়েছি।
নয়া দিগন্ত : বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আপনার ভূমিকা কী ছিল ?
আবদুল হক : ১৮ জুলাই থেকে আমাদের জোরালো প্রতিবাদ শুরু হয়। ২ আগস্ট যখন আমার বাসা থেকে ২০/৩০ জন অফিসার মিলে ঘোষণা দেই, সেটা আগুনের মতো সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। এটা দেখে আমাদের সিনিয়র অফিসারদের টনক নড়ল। তখন তারা বসে থাকতে পারেনি, ৪ আগস্ট আমাদের রাওয়াতে তারা ঘোষণা দেয়।
সেখানে সাবেক সেনা প্রধান, সাবেক অফিসাররা ছিলেন।
আল্টিমেটলি দেখা যায়, দেশের বিপদের সময় সেনাবাহিনী, সামরিক বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তারা বিশেষ ভূমিকা নেয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা