নববর্ষ উদযাপনে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে আতশবাজি-ফানুস
- আমিনুল ইসলাম
- ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৪০
- পুলিশের নানা পদক্ষেপ
- সতর্ক করতে হবে বাড়িওয়ালাদের
ছোট্ট শিশু তানজিম উমায়ের। মায়ের বুকের মধ্যে থেকেও আতশবাজির ভয়ঙ্কর শব্দে থরথর করে কেঁপে উঠেছিল। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল তার। সন্তানের করুণ অবস্থা থেকে বাজি বন্ধ করতে চিৎকার করছিলেন মা-বাবা। কিন্তু বাজির শব্দের কাছে তাদের চিৎকার পৌঁছেনি। অবশেষে হাসপাতালে নেয়া হয় শিশুটিকে। কিন্তু বাঁচানো সম্ভব হয়নি। ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাতের আতশবাজির শব্দে হৃদরোগে আক্রান্ত হয় উমায়ের। পরদিন ২০২২ সালে ১ জানুয়ারি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিল সে। ইংরেজি নববর্ষ (থার্টি ফার্স্ট নাইট) এলে আতশবাজির ভয়ঙ্কর শব্দ স্মরণ করিয়ে দেয় ছোট্ট উমায়েরের কথা। শুধু উমায়ের নয়, আতশবাজি ও ফানুসের আগুনে হতাহতের ঘটনা আরো রয়েছে। তীব্র শব্দে মৃত্যু হয় অসংখ্য পাখির। ফানুস জড়িয়ে ব্যাহত হয় মেট্রোরেলের চলাচল। আতশবাজি ও ফানুস বন্ধে পুলিশ আগে থেকে নানা ঘোষণা দিলেও বাস্তবিক তেমন কাজে আসে না।
নগরবাসী মনে করেন, পৃথবীর কোনো সভ্যদেশে প্রতি বাড়ির ছাদে এভাবে আতশবাজি ফুটায় না। তারা আনন্দ করেন নির্দিষ্ট কোনো স্থানে। যারা আনন্দ করবেন তারা সেখানে গিয়ে আনন্দ করেন। কিন্তু আমাদের দেশে প্রতি বাড়ির ছাদে শুরু হয় ভয়ঙ্কর উন্মাদনা। তারা মনে করেন প্রতি বাড়ির ছাদে গিয়ে এই উন্মাদনা বন্ধ করা পুলিশের একার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই পুলিশের উচিত প্রতি বাড়ির মালিককে চিঠি দিয়ে সতর্ক করা। নিয়ম অমান্য করে যে বাড়ির ছাদে আতশবাজি ফুটানো বা ফানুস উড়ানো হবে ওই বাড়ির মালিককে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এ ব্যাপারে পুলিশের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে নানা প্রস্তুতি। ইতিমধ্যে অভিযান চালানো হচ্ছে আতশবাজির পাইকারি দোকান এবং অবৈধভাবে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। গ্রেফতারও করা হয়েছে কয়েকজন। অভিযান এখনো চলমান।
প্রতি বছরই ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন করা হয় ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে। কিন্তু সম্প্রতি সেই উদযাপন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। প্রতিটি বাড়ির ছাদে শুরু হয় একধরনের উন্মাদোনা। মুহর্মুহ আতশবাজির শব্দে কেঁপে ওঠে গোটা শহর। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ফানুস উড়াতে থাকে মানুষ। এতে করে বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। অসুস্থ হয়ে পড়েন শিশু, বৃদ্ধসহ নানা বয়সী মানুষ।
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, গত বছর বর্ষবরণে আতশবাজি ও পটকায় রাজধানীসহ দেশের বেশির ভাগ বড় শহরের বায়ু ও শব্দদূষণ তীব্র হয়ে ওঠে। রাতের বেলা রাজধানীতে শব্দের মানমাত্রা ৫০ ডেসিবেলের পরিবর্তে ওই মাত্রা ৭০ ডেসিবেলের ওপরে ছিল। একই সময়ে বায়ুর মান ৩৫ শতাংশ অবনতি হয়। বায়ুতে অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণা ৯১ মাইক্রোগ্রাম বেড়ে যায়। এতে অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেক শিশু ও প্রবীণ। শব্দ ও বায়ুদূষণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয় শহরের পাখিগুল। বর্ষবরণের সে রাতে শুধু ঢাকা শহরে চার প্রজাতির শতাধিক পাখি মারা যায়। অনেক পাখি অসুস্থ হয়ে পড়ে। অনেকগুল ভয় ও আতঙ্কে বাসা থেকে চলে যায়।
এ বছর আতশবাজি ও ফানুস বন্ধে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার উত্তরা থেকে বিপুল পরিমাণ অবৈধ আতশবাজি, পটকা ও বিস্ফোরক উদ্ধার করে ইমরানুল ইসলাম (২৪) ও শাওন (১৮) নামে দুইজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা-বিভাগ। তাদের কাছ থেকে ১৩ কার্টুন অবৈধ আতশবাজি, পটকা ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। ডিবি-লালবাগ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকালে উত্তরা-পূর্ব থানা এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনার সময় ডিবি-লালবাগ বিভাগ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তথ্য পায় উত্তরা পূর্ব থানার ৬নং সেক্টর এসএ পরিবহন কুরিয়ার সার্ভিসের সামনে কয়েকজন অবৈধ আতশবাজি, পটকা ও বিস্ফোরক কেনা-বেচা ও পরিবহনের জন্য অবস্থান করছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান পরিচালনা করে ডিবির টিম। পুলিশের উপস্থিতি বুঝতে পেরে পালানোর সময় ইমরানুল ইসলাম ও শাওনকে ১৩ কার্টুন আতশবাজি ও পটকা (চকোলেট বোমা, ক্লাস্টার বোমা এবং তারাবাতি) সহ গ্রেফতার করা হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, আসন্ন ইংরেজি নববর্ষ-২০২৫ নির্বিঘœ ও নিরাপদে উদযাপনের লক্ষ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্তৃক বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে সকল প্রকার আতশবাজি ও পটকা ফুটানো, ফানুস উড়ানো এবং যে কোনো ধরনের বিস্ফোরকের ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকবে। ইতোমধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ নানা ধরনের প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম শুরু করেছে। বাকি কার্যক্রম সম্পর্কে আজ (মঙ্গলবার) ডিএমপি কমিশনার মহোদয় সাংবাদিকদের সাথে কথা বলবেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা