বছরব্যাপী দূষণে বিশ্বে রেকর্ড ভঙ্গ
সালতামামি- আবুল কালাম
- ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৩৮
বিদায়ী বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এক দিনও দূষণমুক্ত ছিল না ঢাকা। ফলে ১২ মাসের প্রায় প্রতিদিনই দূষণে বিশ্বে রেকর্ড ভেঙেছে ঢাকানগরী। এমনকি গতকাল বছর শেষের একদিন আগেও ঢাকার বায়ুর মান ছিল খুব অস্বাস্থ্যকর। সকাল ৯টার দিকে বিশ্বের ১২৬টি শহরের মধ্যে রাজধানী ঢাকার অবস্থান ছিল তৃতীয়।
ঢাকার বায়ু দূষণের প্রধান উপাদান হলো বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২.৫-এর উপস্থিতি। গতকাল ঢাকার বাতাসে এর উপস্থিতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানমাত্রার চেয়ে ২৬ গুণ বেশি। যার ফলে আইকিউএয়ারের পরামর্শ, ঘরের বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক পরা ও খোলা স্থানে ব্যায়াম না করে ঘরের জানালা বন্ধ রাখা।
এর আগে গত বছর ডব্লিউএইচওর বায়ুমান অনুযায়ী দূষণে শীর্ষে থাকা ৭টি দেশের মধ্যে প্রথম ছিল বাংলাদেশ। এরপর পাকিস্তান, ভারত, তাজিকিস্তান, বুরকিনা ফাসো, ইরাক এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। আর বায়ু দূষণ সবচেয়ে কম ছিল অস্ট্রেলিয়া, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, গ্রানাডা, মরিশাস এবং নিওজিল্যান্ডে।
বিশ্বের একাধিক সংস্থার জরিপে পৃথিবীর বাসযোগ্য শহরের তালিকায় বারবার যোগ্যতা হারাচ্ছে ঢাকা। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট থেকে প্রকাশিত বায়ু দূষণ বিষয়ক এক বৈশ্বিক প্রতিবেদনে বিশ্বে সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশ হিসেবে ইতোমধ্যে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বায়ু দূষণে বিশ্বের সব মানুষের গড় আয়ু দুই বছর চার মাস কমলেও বাংলাদেশের নাগরিকের গড় আয়ু কমছে ৬ বছর ৮ মাস করে। এর মধ্যে সবচেয়ে দূষিত শহর ঢাকার মানুষের আয়ু কমেছে প্রায় ৮ বছর।
বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) তাদের গবেষণায় বলেছে, বিগত প্রায় ৯ বছরে ঢাকা দূষণমুক্ত ছিল মাত্র ৬০ দিন। বাকি সময়গুলো দূষণে ছিল বসবাসের অযোগ্য। যার ধারাবাহিকতায় সময়ের সাথে দূষণ বেড়ে চলছে। এরইমধ্যে ২০ সালে লকডাউনের কারণে দূষণের পরিমাণ কমছিল। গবেষণা অনুযায়ী, ঢাকায় বায়ুমান সূচক বিগত বছরগুলোর তুলনায় চলতি বছরের নভেম্বর মাসে শতকরা ১১.০৫ ভাগ বেড়েছে। নভেম্বর মাসের মধ্যে মাত্র ১ দিন বায়ুমান ছিল মধ্য মানের।
বন পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় বলছে, ইটভাটা, শিল্প কারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষ যারা কঠিন বর্জ্য পোড়ায় তারা এই দূষণের জন্য দায়ী। এ ছাড়া নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন না করা এবং এসব সামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে না রাখা, নির্মাণস্থলের আশপাশে পানি না ছিটানো দূষণের জন্য দায়ী।
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউএইচও) মতে, বায়ু দূষণের কারণে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। বায়ু দূষণের কারণে প্রধানত স্ট্রোক, হৃদরোগ, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ থেকে মৃত্যুর হার বাড়ে।
বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান ও পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার নয়া দিগন্তকে বলেন, দূষণ ছড়িয়ে পড়ার পেছনে সরকারের অনেক কার্যক্রম দায়ী। সিটি করপোরেশন থেকে শুরু করে একেকটা মন্ত্রণালয় তাদের একেক কার্যক্রম পরিচালনা করে। তাতে যারা কাজের দায়িত্ব নেন তারা নিয়ম মেনে তা পরিচালনা করেন না। এতে করে বর্জ্য পোড়ানো, নির্মাণ কাজ সবমিলিয়ে দিন দিন দূষণ বাড়ছে। আর এর নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা সংস্থা পরিবেশ অধিদফতরও তা নিয়ন্ত্রণে ক্ষমতা হারিয়েছে।
বিরাজমান পরিস্থিতিতে পরিবেশ বিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুর রব নয়া দিগন্তকে বলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত নগরীর মধ্যে এখন ঢাকার অবস্থান। তিনি বলেন, ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ মানুষ হওয়াতে সবুজায়ন, খেলার মাঠ, পার্ক শিক্ষাব্যবস্থাসহ সব ধরনের নাগরিক সুবিধা ভেঙে পড়েছে। এতে করে দূষণ ভয়াবহ হয়ে উঠছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা