পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পর হাসিনাকে নিতে অপেক্ষায় ছিল ইন্ডিয়ান প্যারা ব্রিগেড
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:২৮
২০০৯ সালের পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পর কুমিল্লা সীমান্তে ভারতের একটি প্যারা ব্রিগেড অপেক্ষা করছিল বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জন্য। এই চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়ে সেনাবাহিনীর লে. জে. (অব:) আমিনুল করিম বলেছেন, ওই ভারতীয় প্যারা ব্রিগেডটি বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে শেখ হাসিনাকে ভারতে নিয়ে যেতে চেয়েছিল।
ঢাকায় গত রোববার একটি অনুষ্ঠানে লে. জেনারেল আমিনুল করিম বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পর সেনাসদরে এরিয়া অফিসারদের ডাক দেন তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন। কিন্তু সহস্রাধিক অফিসার এসে হাজির হলে জেনারেল মইন যেই দাঁড়ালেন, সালাম দেয়া মাত্রই সবাই দাঁড়িয়ে চেয়ার ছুড়ে মারতে লাগলেন। কেউ কাঁদছিলেন। জেনারেল মইনকে কথা বলতেই দিলো না। তারা চিৎকার করে বলছিলেন, আপনি কেন কথা বলবেন না। আপনিতো আমাদের অফিসারদের বাঁচাতে আসেন নাই। আমার ইউনিট অফিসারকে বাঁচাতে আসেন নাই। আমার রুমমেটকে তো আপনি বাঁচাতে আসেন নাই। আমার অফিসারকে তো আপনি বাঁচাতে আসেন নাই। জেনারেল মইন বলার চেষ্টা করলেন, আমার কিছু করার ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ছিল। অফিসাররা তা শুনতে নারাজ। কোনো কথা শুনবেন না তারা। আমি বিস্মিত হয়ে গেলাম। এটা কি সেনাবাহিনী? সেনাবাহিনী প্রধান কথা বলতেছেন? আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলাম। বুঝতে পারছিলাম না। দুই-একজন অফিসার দাঁড়ালেন। ঠাণ্ডা করার চেষ্টা করছিলেন। ব্রিগেডিয়ার পর্যায়ের। কিন্তু তারা কোনো কথাই শুনছিলেন না।
আমাকে জেনারেল মইন বললেন, আমিন, তুমি একটু মাইকটা নাও। শান্ত করার চেষ্টা কর। আমি মাইকটা নিলাম। প্রথমে আমি অফিসারদেরকে একটু রাগান্বিতভাবে বললাম, তোমরা যদি এমন শোরগোল কর তাহলে দেশটা সর্বস্বান্ত হয়ে যাবে। দেশটা চলে যাবে। কেন জানি আমার মুখ থেকে এ কথা বের হয়ে গেল। আল্লাহতালাই ভালো জানেন, বললাম, দেখ, একটা বাহিনী নষ্ট হয়ে গেছে। বিডিআর শেষ হয়ে গেছে। শত্রু কিন্তু অপেক্ষা করছে, পরে সেনাবাহিনী ডুববে। এখন সেনাবাহিনীকে যদি শত্রু ধ্বংস করে দিতে পারে তাহলে বাংলাদেশ খতম হয়ে যাবে। আমাদের কথা না শোন, শান্ত না হও, শৃঙ্খলা ফিরিয়ে না আনো, তাহলে শেষ হয়ে যাবে। এটা আমি কেন বলেছিলাম, আমি জিয়াউর রহমানের সময় আর্মিতে ছিলাম। সে সময় প্রতি সপ্তাহে সপ্তাহে একটা ক্যু হতো। এই ক্যু দেখতে দেখতে আমি বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। তখন মাত্র আর্মিতে জয়েন করি। রক্তক্ষরণ অনেক দেখেছি। অনেক ষড়যন্ত্র দেখেছি। জিয়াউর রহমান যখন চট্টগ্রামে মারা যান তখন আমি চট্টগ্রামে ছিলাম। অনেক হত্যাকাণ্ড দেখেছি। ইয়াং অফিসার আমাদের তৈরি করতে হবে। হয়তো যেকোনো সময় অঘটন ঘটে যেত পারত। আল্লাহ আমাকে এখনো বাঁচিয়ে রেখেছেন। আলহামদুলিল্লাহ।
জেনারেল আমিন তার স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমি সাক্ষী। এখনো জীবিত আছি। পরিস্থিতি একটু শান্ত হলে জেনারেল মইন পরে আমাকে বললেন, ওনার কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল প্রত্যেকটা অফিসার ওই দিন সন্ধ্যার মধ্যে একটা করে এসএমজি নেবে, ৬টা করে ম্যাগাজিন নেবে এবং সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়বে। শত্রুকে তারা খুঁজে বের করবে। কারা এ কাজ করেছে তা খুঁজে বের করবে। আমরা বললাম, এটা হতে দেয়া যাবে না। এটা হলে অফিসাররা একদিকে চলে যাবে, সৈনিকরা আরেক দিকে চলে যাবে এবং দেশের সাধারণ মানুষ আরেক দিকে চলে যাবে। দেশটা ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে। জেনারেল মইন আমাকে এটাও বললেন, জোরহাটে একটা ইন্ডিয়ান প্যারা ব্রিগেড অপেক্ষা করছে, যেকোনো সময় তারা ঢাকায় আসতে পারে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে ওরা হয়তো উঠিয়ে নিয়ে যাবে। আমরা বললাম এটা হতে দেবো না।
তিনি বলেন, এখন ভারতে সোয়াচের একজন অধ্যাপক তার বইতে এ কথা লিখেছেন যে জোরহাটে একটা কোর মানে তিনটা ডিভিশনের একটা ব্রিগেড অপেক্ষায় ছিল। কুমিল্লা দিয়ে তারা ঢোকার অপেক্ষায় ছিল। যাই হোক বিডিআর তো শেষ হয়ে গেছে। পলিটিক্যাল লিডাররা আমাদের সাথে বিট্রে (বিশ্বাসঘাতকতা) করেছে। আমাদের ওয়াইফদের সাথে বিশ্রী ব্যবহার করা হয়েছে, এগুলো ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। আজম ও নানক ছিল সবচেয়ে বড় ক্রিমিনাল। তারা সব জানত। আজম পিলখানায় হেঁটে যাচ্ছে ও রুমাল দিয়ে ঘাম মুছছেন। ঘাম মুছার তো কিছু নেই। উনি খেলতেছেন, এখানে নাটক করার তো কিছু নেই। ওনারা সব জানত। আমি টিভিতে দেখছিলাম।
জেনারেল মইন রোস্টাল থেকে নেমে আসতেই ওনাকে অফিসাররা ঘিরে ধরল। ওনার র্যাংক খুলে ফেলল। ইউনিফর্ম খুলতে লাগল। মেজর ও ক্যাপ্টেন এবং মহিলা অফিসারও ছিল। আমি বললাম, না যেভাবেই হোক সেনাবাহিনীকে টিকিয়ে রাখতে হবে। সেনাবাহিনী যদি শেষ হয়ে যায় তো দেশটাও শেষ হয়ে যাবে। আমি অফিসারদের বকাবকি করলাম। একজন নারী অফিসার বললেন, স্যার, কিছুই তো করতে পারেন নাই। এখন কেন বকাবকি করছেন। আমি বললাম, না তোমরা আর্মিকে ধ্বংস করতে পার না। আমি জেনারেল মইনের হাত ধরে সেখান থেকে নিয়ে আসলাম। জুনিয়র অফিসাররা ওনাকে ঘিরে রেখেছিল। আমি বললাম, ছাড় তোমরা ওনাকে। উনি বের হয়ে এসে বললেন, আমি রিজাইন করব। আমাকে কাগজ দাও আমি রিজাইন করব। আমি বললাম, স্যার আগুনতো জ্বালিয়েছেন, আগুন নেভান, তারপর রিজাইন করবেন। ওনাকে মেস অফিসে এনে বসালাম। মেসিয়ারকে বললাম, এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি আর এক কাপ গরম চা নিয়ে এসো। ওনাকে ঠাণ্ডা করলাম। আমরা ৮-১০ জন জেনারেল ওনার অফিসে একটা ছোট্ট কনফারেন্স রুমে বসলাম। জেনারেল মইন এসে বসলেন। আমি পাশেই বসা। তখন হয়তো আমি একমাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল ছিলাম। প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে ফোন এলো। কয়জন জেনারেল তার অফিসে যাবে তা জানতে চাওয়া হলো। জেনারেল মইন ও তিনজন জেনারেল গেলাম। আমরা টানা তিন ঘণ্টা আলাপ করলাম। জেনারেল মইন বিধ্বস্ত। কথাই বলতে পারছেন না। দায়িত্ব এসে পড়ল আমার ওপর। ডিজিএফআই প্রধান ছিলেন। জেনারেল আকবর, জেনারেল তারেক, জেনারেল বেলাল ও সার্জেন্ট জেনারেলসহ আরো কয়েকজন ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠকের শুরুতেই আমি বোকার মতো ওনাকে বলে বসলাম, আপনি কেমন করে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ছয়-সাতজন হত্যাকারীকে আপনার অফিসে নিয়ে এলেন। ওই যে ডিইডি তৌহিদসহ যারা প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করেছিল। তাদেরকে শেরাটন থেকে নাশতা নিয়ে এসে খাওয়ানো হলো। তারা খুব অফেন্সিভভাবে নিলো। আমার হুঁশ ছিল না। দেখলাম তারা আমাকে চ্যালেঞ্জ করছে। বলল, প্রধানমন্ত্রীর সামনে এত বড় কথা। আমি বললাম, না প্রধানমন্ত্রীর নিচে তো ডিজি আছে, সেনাপ্রধান আছে, বিমানবাহিনী প্রধান আছে, মন্ত্রী, এমপি আছে আগে তারা দায়িত্ব পালন করুক। জেনারেল জিয়ার দর্শন ছিল সেনাবাহিনীকে শেষ করলে পুরো দেশটাকে শেষ করা যাবে। ভারতের টার্গেট ছিল সেনাবাহিনী। আমাদের কথা বলতে বলতে রাত ১২টা ১টা বেজে গেল। এর মধ্যে মোস্ট প্রবাবলি প্রণব বাবুর ফোন এলো। প্রধানমন্ত্রী পাশের রুমে গিয়ে কথা বলে এসে জানালেন সীমান্ত নিরাপদ। কোনো সমস্যা হবে না। আমরা বললাম, প্রধানমন্ত্রী আপনাকে আমাদের সাথে যেতে হবে। অফিসারদের আশ্বস্ত করতে হবে। তারা পিলখানায় নিহত অফিসারদের দাফন করতে দেবে না। জেনারেল মইন বললেন প্রধানমন্ত্রীকে, আপনি কালকেই চলেন। আমি বললাম না এত তাড়াতাড়ি নয়। প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলাম আমরা বিডিআর হত্যাকাণ্ডে একটা তদন্ত করব। উনি বললেন করলে আপনারা করেন।
জেনারেল আমিন বলেন, আমাদের সেনাবাহিনী ও দেশকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র ছিল। যেদিন রৌমারি পাদুয়ায় বিএসএফ বাহিনীর সাথে বিডিআরের সংঘর্ষ হয় তার পরের দিন ভারতের পার্লামেন্টে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও অবসরপ্রাপ্ত এক মেজর বলেছিলেন, আমরা এর প্রতিশোধ নেব। কিছুদিন আগে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং লক্ষেèৗতে বাংলাদেশের সাথে কিভাবে যুদ্ধ করা যায় তার প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। তার ১৫ দিন আগে আমি সাবধান করেছিলাম যে সমূহ বিপদের সম্মুখিন হচ্ছি। ওটা ছিল আমার ওয়ার্নিং। তারা রংপুরে ডিস্টার্ব করতে চায়, চট্টগ্রামে ডিস্টার্ব করতে চায়, বান্দরবানে ডিস্টার্ব করতে চায়।
এগুলো সিগন্যাল। আমাদের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে এটা সাধারণ মানুষকে বুঝতে হবে। তাহলে দেশটা টিকে যাবে। এত সহজ না। আমাদের সেনাবাহিনীর ১২টা ডিভিশন আছে, বিডিআর বাহিনী আছে। আনসার আছে। বিএনসিসি আছে। ১৮ কোটি মানুষের মধ্য থেকে আমরা এক কোটি সৈনিক পাব। ১০ থেকে ২০ লাখ তরুণকে তিন মাস প্রশিক্ষণ দিয়ে এসএমজি চালানো ও গ্রেনেড ছোড়া শিখিয়ে দেবো। সেনাবাহিনীর কিছু করা লাগবে না। ভারতের সেনাবাহিনী বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকলে পালিয়ে যাবে। আমরা জনগণকে প্রশিক্ষণ দেবো। অস্ত্র দেবো। দিকনির্দেশনা দেবো। সক্ষমতা আছে আমাদের। নতজানু পররাষ্ট্রমন্ত্রী চলবে না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা