০২ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ পৌষ ১৪৩০, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৫
`

যে বছর জুলাই ‘৩৬ দিনের’

-

সময়ের নিয়মেই বিদায়ের শেষ প্রান্তে ২০২৪ সাল। সাম্প্রতিক বছরগুলোর মতো বিদায়ী সালও ছিল ঘটনাবহুল। তবে আন্দোলন, অস্থিরতা, গণ-অভ্যুত্থানের নতুন কিছু স্মৃতি যুক্ত হয়েছে এ বছর। একইসাথে মুক্তির স্বাদ, বিজয় রক্ষার নতুন চ্যালেঞ্জ বর্তমান সময়কে করেছে আরো কঠিন। দেশের ইতিহাসের বাঁকবদলের বছরটিতে নানা ক্ষেত্রের অনেক ঘটনাও ছিল বেশ আলোচিত-সমালোচিত।
ডামি ভোটে ক্ষমতায়, জনরোষে পতন : এ বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিত হয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আর মাঝামাঝিতে উত্তাল আন্দোলনের মাধ্যমে সৃষ্ট গণ-অভ্যুত্থানে পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের। নির্বাচন ও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ‘কেন্দ্রবিন্দুতে’ ছিলেন আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা।
৭ জানুয়ারি বিতর্কিত ‘ডামি নির্বাচন’এর মাধ্যমে টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতা ধরে রাখতে পারলেও সর্বাত্মক আন্দোলনে টিকতে পারেননি শেখ হাসিনা। মাত্র সাত মাসের মাথায় ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত গণ-অভ্যুত্থানে তীব্র জনরোষে পতন হয় তার সরকারের। দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন হাসিনা।

যে রায়ের পর নতুন মোড় নিলো দেশ : অনেকটা আকস্মিকভাবে চাকরির কোটা পুনর্বহাল করে চলতি বছরের ৫ জুন রায় দেন বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ। এতে জুলাইয়ের প্রথম দিন থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কোটাপদ্ধতির যৌক্তিক সংস্কার চেয়ে নতুন করে আন্দোলনে নামে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
জুলাই ছিল ‘৩৬ দিনের’ : কোটা সংস্কারের দাবিতে বছরের মাঝা মাঝি সময়ে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, শেষমেশ তা গড়েছে সরকার উৎখাতের ইতিহাস। ৩৬ দিনের সেই আন্দোলনে পালাতে বাধ্য হন সাড়ে ১৫ বছর দোর্দণ্ড প্রতাপে দেশ চালিয়ে আসা শেখ হাসিনা। শুরুতে এই আন্দোলনের কেন্দ্র ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পরে তা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। আন্দোলনে রক্তপাত শুরু হওয়ার ২০ দিনের মধ্যেই লাশ আর রক্তের বোঝা মাথায় নিয়ে পতন হয় দেড় দশকের আওয়ামী লীগ সরকারের। গণ-অভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেলের খসড়া তালিকা অনুযায়ী, আন্দোলনে ৮৫৮ জন নিহত এবং সাড়ে ১১ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। শেখ হাসিনার পতনের দিন ৫ আগস্ট ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু গণভবনের পাশাপাশি সারা দেশের থানা, বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা ও লুটপাট চালানো হয়। তিন দিন সরকারবিহীন ছিল বাংলাদেশ। ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দায়িত্ব নেয় অন্তর্র্বর্তী সরকার।

চূড়ান্ত আন্দোলন পর্ব : ফ্যাসিবাদবিরোধী সর্বশেষ আন্দোলনের ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৫ জুনের পরবর্তী ৬১ দিনের মধ্যে প্রথম ৪০ দিন দেশের নানা জায়গায় আন্দোলন হলেও জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে শিক্ষার্থীদের মিছিলে ছাত্রলীগের হামলা, পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলিতে আন্দোলন সহিংস হয়ে ওঠে।
১ জুলাই : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়। চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
৭ জুলাই : সারা দেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করা হয়। ব্যাপক বিক্ষোভ-অবরোধে অচল হয়ে যায় রাজধানী। পরের দিনও ‘বাংলা ব্লকেড’ পালনের ঘোষণা দেয়া হয়।
৯ জুলাই : সারা দেশে সড়ক ও রেলপথের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সকাল-সন্ধ্যা ব্লকেড অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
১০ জুলাই : কোটা পুনর্বহাল করে হাইকোর্টের আদেশের ওপর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা, ৭ আগস্ট পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ।
১৪ জুলাই : কোটা পুনর্বহালের নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ। ওই দিন গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্তব্য ক্ষোভ আরো উসকে দেয়। ওই দিন গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে মিছিল বের হয়।
১৫ জুলাই : ঢাবি ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগসহ সরকার সমর্থকরা। নিরীহ ছাত্রীদের ওপর লাঠিসোটা নিয়ে হামলার ছবি আর ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে, ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় সাধারণ মানুষ।
১৬ জুলাই : আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল দায়ের। সড়ক অবরোধ, সারা দেশে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটে এবং ছয় জনের প্রাণহানি হয়। তাদের মধ্যে একজন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আবু সাঈদ প্রাণ হারান পুলিশের গুলিতে। পরে সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের হল বন্ধের ঘোষণা আসে।

১৭ জুলাই : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গায়েবানা জানাজা করতে গিয়ে পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়।
সেদিন বিক্ষোভের কেন্দ্র ছিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন শেখ হাসিনা। রাতে যাত্রাবাড়ী এলাকায় সঙ্ঘাতের সূত্রপাত হয়, পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে; নিহত হন এক সাংবাদিকসহ কয়েকজন। ওই রাতেই বন্ধ করে দেয়া হয় ফেসবুক।
১৮ জুলাই : মেরুল বাড্ডায় পুলিশ অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে, পরে হেলিকপ্টারে উদ্ধার করা হয়। বিটিভি ভবনে অগ্নিসংযোগ করা হয়। সেতু ভবন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ চলে। পুলিশের সাথে বিক্ষোভকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ ঘটে। আন্দোলনকারীদের সাথে আলোচনায় বসতে সরকার রাজি বলে জানান আইনমন্ত্রী। রাত ৯টা থেকে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়।
১৯ জুলাই : ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সংঘর্ষ, পরিস্থিতি থমথমে। মেট্রোরেল স্টেশন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজা, মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ।
রাত ১২টা থেকে কারফিউ জারি। সারা দেশে সংঘর্ষে অন্তত ৫৬ জন নিহত হন। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তিন মন্ত্রীর সাথে বৈঠকে বসেন আন্দোলনকারীদের তিন নেতা।
২০ জুলাই : কারফিউয়ের মধ্যেও ঢাকা, সাভার, গাজীপুর, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বিক্ষোভকারীদের সঙ্ঘাত চলে। বহু বিক্ষোভকারী হতাহত হন। আইনমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী ও তথ্য প্রতিমন্ত্রীর সাথে কোটা সংস্কার আন্দোলনের তিন সমন্বয়কারীর বৈঠক হয় এদিন। সহিংসতায় ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে অন্তত ২৬ জন নিহত হন।

২১ জুলাই : আপিল বিভাগের শুনানির পর কোটা পুনর্বহাল নিয়ে হাইকোর্টের রায় বাতিল করা হয়। মেধা ৯৩ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা ১ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গ কোটা ১ শতাংশ করার আদেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত। রায়ের পরও পরিস্থিতি শান্ত না হওয়ায় কারফিউ অব্যাহত থাকে।
২২ জুলাই : কমপ্লিট শাটডাউন ৪৮ ঘণ্টার জন্য স্থগিতের ঘোষণা দেন কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। এই সময়ের মধ্যে তারা চার দফা দাবির বাস্তবায়ন দেখার জন্য সরকারকে আলটিমেটাম দেন।
২৩ জুলাই : রাতে অগ্রাধিকার বিবেচনা করে সীমিত পরিসরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা ফেরে।
২৪ জুলাই : নির্বাহী আদেশে তিন দিন সাধারণ ছুটির পর অফিস খোলে। কারফিউ শিথিলের সময় বাড়ানোয় বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত অফিস কার্যক্রম চলে।
২৬ জুলাই : আহতদের দেখতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এবং ক্ষয়ক্ষতি দেখতে বিটিভিতে যান শেখ হাসিনা। ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদারকে হেফাজতে নেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

২৭ জুলাই : প্রধানমন্ত্রী আহতদের দেখতে যাননি- এমন সমালোচনার মুখে আহতদের দেখতে পঙ্গু হাসপাতালে যান শেখ হাসিনা।
২৮ জুলাই : কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী আবু সাঈদসহ নিহতদের একটি অংশের পরিবারের সাথে গণভবনে সাক্ষাৎ করেন শেখ হাসিনা। সহিংসতায় ১৪৭ মৃত্যুর তথ্য দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল। যদিও তখনকার সংবাদমাধ্যমের হিসাবে সংখ্যাটি দুই শতাধিক। ১০ দিন পর মোবাইল ইন্টারনেট ফেরে।
২৯ জুলাই : জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়ে ঐকমত্য হয় ১৪ দলীয় জোটের বৈঠকে। সেখানে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
৩০ জুলাই : কোটা আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় নিহতদের স্মরণে সারা দেশে শোক পালন করা হয়। সেই কর্মসূচি প্রত্যাখ্যান করে ফেসবুক প্রোফাইল লাল করার এবং চোখে কালো কাপড় বেঁধে ছবি পোস্ট করার আহ্বান জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
৩১ জুলাই : আন্দোলনে হত্যার বিচার দাবিতে ‘মার্চ ফর জাস্টিসি’ কর্মসূচি পালিত হয়। এ কর্মসূচি ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সঙ্ঘাত হয়। সুষ্ঠু তদন্তে আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতা চান শেখ হাসিনা। তথ্যানুসন্ধান দল পাঠানোর আগ্রহ দেখায় জাতিসংঘও।
১ আগস্ট : ডিবি কার্যালয় থেকে মুক্তি পান ছয় সমন্বয়ক। নিহতদের স্মরণে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ শিরোনামে কর্মসূচি পালন করা হয়। জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির এবং সব অঙ্গসংগঠনকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।
২ আগস্ট : গণমিছিলে হামলা সংঘর্ষ হয়, পুলিশসহ দু’জন নিহতের খবর পাওয়া যায়।
৩ আগস্ট : আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের জন্য গণভবনের দরজা খোলা। সেই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন আন্দোলনকারীরা। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বিশাল জমায়েত থেকে সরকার পতনের এক দফা দাবি আসে। এদিন ঢাকার পরিবেশ অনেকটা শান্তিপূর্ণ থাকলেও অন্তত ১১ জেলায় হামলা, ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
৪ আগস্ট : অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে মাঠে নামার ঘোষণা দেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সারা দেশে ব্যাপক সঙ্ঘাতে শতাধিক মানুষের প্রাণহানি হয়। নিহতদের মধ্যে অন্তত ১৪ জন পুলিশ সদস্য এবং আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের ১৯ নেতাকর্মী ছিলেন। অন্যদিকে শাহবাগে ব্যাপক জমায়েতের মধ্যে পরদিন ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

‘৩৬ জুলাই’ : শেখ হাসিনার পতনের আগের দিনও চোটপাট দেখিয়ে গেছে আওয়ামী লীগ। ৫ আগস্ট সকালেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে নেমে পুলিশের সাথে মিলে বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভকারী ওপর হামলা ও গুলি চালায়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বানে সেদিন ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে যোগ দিতে ঢাকামুখী হন হাজার হাজার ছাত্র-জনতা। দুপুর নাগাদ শেখ হাসিনার পতনের কথা শোনা যায়। দেশ পরিচালনায় অন্তর্র্বর্তী সরকার গঠন হবে বলে জানান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। ঢাকার পথে পথে সেদিন আনন্দ মিছিল চলে। জনতা গণভবনের দখল নেয়, সেখানে চলে লুটপাট। সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে বৈঠক করেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। পরে তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণে জানান, অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার যত দ্রুত সম্ভব গঠন করা হবে।
ইসলামী অঙ্গনে আলোচিত ঘটনা : এ বছরে দেশের ইসলামী অঙ্গনের বেশ কিছু ঘটনাও ছিল আলোচিত। কোনোটা স্বস্তির, আবার কোনো ঘটনা বিব্রতকর। ২০২৪ সালে আন্তর্জাতিক কুরআন ও কিরাত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হয়েছেন একাধিক হাফেজ। অনেকেই সরাসরি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন, কেউ কেউ ভার্চুয়াল প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন।
এ দিকে বছরের অন্যতম বিশেষ ঘটনা ছিল স্বাধীনতার পর দেশের সরকার ব্যবস্থায় প্রথম কোনো আলেম উপদেষ্টার নিয়োগ। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা তালিকায় রাখা হয়েছে শ্রদ্ধাভাজন আলেম ড. মাওলানা আ ফ ম খালিদ হোসেনকে।
অন্য দিকে দুঃখজনক একটি ঘটনা ছিল বায়তুল মোকাররমে মুসল্লিদের মধ্যে সংঘর্ষ। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত খতিব মাওলানা রুহুল আমিনকে ঘিরে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। এতে হতাহতের ঘটনাও ঘটে। সেপ্টেম্বরে বায়তুল মোকাররমে খতিব নিয়ে সংঘর্ষ, জটিলতার পর অক্টোবরে নতুন খতিব হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় দেশের ইসলামী অঙ্গনের পরিচিত মুখ মাওলানা আবদুল মালেককে।

জুলাই অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে অন্য সবার মতো স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল মাদরাসার শিক্ষার্থীদের। জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদরাসার শিক্ষার্থীরা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। আন্দোলনের শুরু থেকেই রাজধানীর প্রায় সব মিছিলে তাদের সরব উপস্থিতি ছিল। এই আন্দোলনে প্রায় ৭০ জনের মতো মাদরাসা শিক্ষার্থী শহিদ হন।
শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনামলে বিভিন্ন সময় দেশের আলেমদের ওপর নিপীড়ন ও জেল, জুলুমের ঘটনা ঘটেছে। অনেককে মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত করে কারাগারে বন্দী করা হয়। কয়েক বছর কারাগারে বন্দী ছিলেন অনেকেই। এই তালিকায় মাওলানা মামুনুল হকের নাম ছিল শীর্ষে। তিন বছর পর ২০২৪ সালের মে মাসে জামিনে মুক্ত হন তিনি। এরপর আরো একাধিক আলেম কারাগার থেকে মুক্ত হন।
২০২৪ সালে দুঃখজনক আরেকটি ঘটনা ছিল বিশ্ব ইজতেমার মাঠে তাবলিগের সাথীদের মধ্যে সঙ্ঘাত। দিল্লির নিজামুদ্দীনের মাওলানা সাদ অনুসারী ও শূরায়ে নিজাম (মাওলানা জুবায়েরপন্থী) এর অনুসারীদের মধ্যে সঙ্ঘাতের ঘটনা ঘটে।
২০২৪ সালে আলোচিত ছিল সাড়ে চার বছর পর মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারীর দেশে ফেরার ঘটনা। গত ২ অক্টোরব দেশে ফেরেন তিনি।
স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত হয় ফেনী জেলা। বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন। ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল ফেনীতে ৭১ কোটি টাকার পুনর্বাসন কার্যক্রমের উদ্বোধন করে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন।


আরো সংবাদ



premium cement
সন্ত্রাসী হামলায় পাটগ্রাম উপজেলা প্রধান সমন্বয়ক আহত খালেদা জিয়ার বাসায় সেনাপ্রধান ‘৭ উইকেট’ ছেলেকে উৎসর্গ করলেন তাসকিন ‘কল্যাণরাষ্ট্র গড়তে সেবা দিয়ে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে’ সাবেক এমপি কোম্পানি কমান্ডার কবির উদ্দিন আহমেদের ইন্তেকাল ফরিদপুরে আলতু খাঁন জুট মিলে বয়লার বিস্ফোরণ, আহত ৩ শওকত ওসমান ছিলেন বৈষম্যবিরোধী এবং মানবতা মুক্তির আলোকবর্তিকা তদবির বন্ধে সচিবদের উদ্দেশে তথ্য উপদেষ্টার চিঠি বেরোবিতে ২০ লাখ টাকা অনুদান দিলো রূপালী ব্যাংক পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতা হাফিজ উদ্দিন বাংলাদেশে পাচারের জন্য ভারতের ত্রিপুরায় গাজার চাষ

সকল