০২ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ পৌষ ১৪৩০, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৫
`

ফের ট্রেইনি চিকিৎসকদের শাহবাগ অবরোধ : জনগণের ভোগান্তি

রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় ট্রেইনি চিকিৎসকদের অবস্থান কর্মসূচি : নয়া দিগন্ত -

মাসিক ভাতা পাঁচ হাজার টাকা বাড়ানোর ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে ফের রাজধানীর শাহবাগে সড়ক অবরোধ করেছেন বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসের (বিসিপিএস) এফসিপিএস প্রথম পর্ব পাস করা অবৈতনিক প্রশিক্ষণার্থীরা। গতকাল সকাল ৯টা থেকেই ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিসের (ডিএমজে) ব্যানারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা চত্বরে জড়ো হতে থাকেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা। এ সময় তারা ২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন।
তারা জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সরকার আশ্বাস দিলে অবরোধ কর্মসূচিতে যাবে না তারা। সরকার পক্ষের কোনো আশ্বাস না পেয়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তারা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলমান ছিল। আন্দোলনকারীদের দাবি- তাদের মাসিক ভাতা বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা বা নবম গ্রেডের সমমর্যাদা প্রদান করে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। এ দিকে চিকিৎসকদের সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনের কারণে যানচলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। অ্যাম্বুলেন্স ব্যতীত অন্য কোনো যানবাহন চলাচল করতে দেয়া হচ্ছে না। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন এসব সড়ক দিয়ে চলাচলকারী সাধারণ মানুষ। অবরোধের ফলে সায়েন্সল্যাব থেকে শাহবাগ, ফার্মগেট থেকে শাহবাগ, মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শাহবাগে অভিমুখী যানচলাচল বন্ধ ছিল। তবে বিকেল থেকে সাইড রোড দিয়ে ছোট যানবাহন (মোটরসাইকেল, সিএনজি, প্রাইভেট কার) সাইকেল, সিএনজি) সামান্য কিছু চলাচল করতে দেখা যায়। তবে বেশির ভাগ যানবাহনই শাহবাগ মোড়ের কাছাকাছি পর্যন্ত এসে ফিরে যায়।

দিনব্যাপী এই অবরোধ কর্মসূচিতে ভোগান্তিতে পড়েন যাতায়াতকারীরা। পথচারী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখানে দেশের অন্যতম হাসপাতাল। রাজধানীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোরও একটি শাহবাগ। বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে নানা আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় স্থানটি। এতে সাধারণ মানুষ পড়েন দুর্ভোগে। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা আরো ভয়াবহ ভোগান্তির শিকার হয়। তারা জানান, আগামী কয়েক মাস আইন করে শাহবাগ মোড় এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করার দরকার। ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিসের অন্যতম সমন্বয়কারী ডা: রফিকুল ইসলাম বলেন, এই আন্দোলন আজকের নয়। আমরা দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন করে আসছি। আমাদের যোক্তিক দাবিগুলো নিয়ে নেতৃস্থানীয় প্রত্যেক জায়গায় গিয়েছি। তার সুষ্ঠু সমাধান না পেয়ে বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছি। আমরা যারা ট্রেইনি চিকিৎসক আছি তারা রাত-দিন সেবা মানুষের সেবা করি। কিন্তু আমাদের প্রতি অর্থনৈতিক বৈষম্য করা হচ্ছে। মাত্র ২৫ হাজার টাকা বেতনে ঢাকা শহরের মতো জায়গায় বসবাস করা কষ্টের। আমাদের বারবার আশ্বাস দেয়ার পরেও দাবি পূরণ হয়নি। আমরা আজ পেটের দায়ে এখানে এসেছি। যোক্তিক এই দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব। আন্দোলনে আসা এক নারী চিকিৎসক বলেন, ঢাকা শহরে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে চলা খুব কষ্টকর। রোগীর ভালো সেবা নিশ্চিত করতে হলে ডাক্তারদের অবশ্যই অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দিতে হবে। এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও আমরা আন্দোলন করেছি। যার কারণে আমাদের সাথে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়েছে। আমরা চাই আর কোনো ধরনের কালক্ষেপণ না করে অন্তর্বর্তী সরকার যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নেবে। এর আগে, গত ২২ ডিসেম্বর একই দাবিতে শাহবাগ অবরোধ করেন ট্রেইনি চিকিৎসকরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলমের ও সরকার পক্ষের আশ্বাসে সড়ক ছাড়েন আন্দোলনকারীরা। এরপর ২৬ ডিসেম্বর আরো পাঁচ হাজার টাকা ভাতা বাড়িয়ে ৩০ হাজার করেছে সরকার। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেন চিকিৎসকরা। সিদ্ধান্ত প্রত্যাখান করে একটি বিবৃতিও দেন তারা। ওই বিবৃতিতে সমর্থন জানান সারজিস। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল আন্দোলনে নামেন ট্রেইনি চিকিৎসকরা।

 


আরো সংবাদ



premium cement