২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

আন্দোলন বিদায় বিচ্ছেদে আলোচিত ছিল শোবিজ অঙ্গন

সালতামামি
-

বিভিন্ন কারণে বছরজুড়ে আলোচিত-সমালোচিত ছিল শোবিজ অঙ্গন। এর মধ্যে ছিল গণ-আন্দোলন, দ্বন্দ্ব, বিদায় ও বিচ্ছেদ। যার মধ্যে অন্যতম ছিল নায়িকা অপু বিশ্বাস ও বুবলীর বিবাদ, জুলাই ছাত্র আন্দোলন ঘিরে ‘আলো আসবেই’ গ্রুপের গণ-আন্দোলন বিরোধী অপতৎপরা, তারকাদের আটক, বিয়ে বিচ্ছেদ ও বিদায় বছরজুড়ে ছিল আলোচনায়।
বিদায়ী বছরের শুরুতে বিয়ে ও বিচ্ছেদ নিয়ে আলোচনায় আসেন কয়েকজন তারকা। তাদের মধ্যে বছরের প্রথম মাস ১১ জানুয়ারি বিয়ে নিয়ে আলোচিত হন অভিনেত্রী মৌসুমী হামিদ। সেদিনই সন্ধ্যায় বিয়ের খবর প্রকাশ্যে আনেন ছোট পর্দার অভিনেতা ফারহান আহমেদ জোভান। তাদের খবরের পরেই বিয়ের খবর প্রকাশ্যে আনেন অভিনেত্রী নাজিয়া হক অর্ষা ও অভিনেতা মোস্তাফিজুর নূর ইমরান। সেই সময় এক মাসের ব্যবধানে আরো আগেই বিয়ে নিয়ে আলোচনায় ছিলেন গায়িকা লিজা, অবন্তী সিঁথি, অভিনেত্রী ও চিত্রনায়িকা আঁচল আঁখি এবং তরুণ অভিনেতা শাশ্বত দত্ত। তবে আরিফিন শুভ, মৌসুমী মৌ, মাহিয়া মাহির বিচ্ছেদ ছিল অনেক আলোচিত।
এরপর বিয়ে নিয়ে আলোচনায় আসেন শাকিব খান। জানা যায়, তার বিয়ের জন্য পাত্রী খুঁজছে তার পরিবার। সে আলোচান যখন তুঙ্গে তখই নতুন আলোচনায় আসেন শাকিব খানের সাবেক দুই স্ত্রী অপু বিশ্বাস ও বুবলী। জানা যায়, তারা প্রায়ই দ্বন্দ্বে জড়ান। এ নিয়ে শাকিবের বাসায় অপু বিশ্বাস ও বুবলীর প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার খবর শোনা যায়। এরপর শাকিবের জন্য পাত্রী দেখার কথা জোরালো হলেও বছর শেষেও বিয়ে নিয়ে আর নতুন কোনো সংবাদ দেননি শাকিব। তবে বছরজুড়ে দ্বন্দ্বে লিপ্ত ছিলেন আপু ও বুবলী।
তবে সবচেয়ে স্মরণীয় ও ঐতিহাসিক মাস ছিল জুলাই ও আগস্ট। জুলাই বিপ্লবে আন্দোলন সমর্থনে রাস্তায় নামের অনেক তারকা। ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারের কঠোর দমনপ্রক্রিয়া ও গুলিতে ছাত্র-জনতা হত্যার’ প্রতিবাদে দৃশ্যমাধ্যমের শিল্পীরা সোচ্চার হন। শিক্ষার্থীদের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছেন। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন- বড় ও ছোট পর্দার অনেক অভিনয়শিল্পী, নির্মাতা, কলাকুশলী। এর মধ্যে অনেক তারকা আন্দোলনের পক্ষে ভূমিকা রেখে প্রশংসিত হলেও ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে সমালোচিত হয়েছেন বেশির ভাগ তারকা। এর মধ্যে আন্দোলনের বিপক্ষে থাকা অভিনয়শিল্পীদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ‘আলো আসবেই’ সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হয়। সেই গ্রুপের সদস্য ছিলেন সংসদ সদস্য ও অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদ, রিয়াজ, জায়েদ খান, সাইমন সাদিক, অভিনেত্রী সুজাতা, অরুণা বিশ্বাস, নিপুণ, শমী কায়সার, আজিজুল হাকিম, রোকেয়া প্রাচী, তানভীন সুইটি, হৃদি হক, আশনা হাবিব ভাবনা, জ্যোতিকা জ্যোতি, সাজু খাদেম, সোহানা সাবা, চন্দন রেজা, সঙ্গীতশিল্পী শুভ্র দেব, নির্মাতা মুশফিকুর রহমান গুলজার, এস এ হক অলিক, খোরশেদ আলম খসরু, লিমন আহমেদসহ অনেকে। তারা ছাত্র-জনতার আন্দোলন বানচালে ষড়যন্ত্র করে সমালোচিত হন। তাদের ভূমিকায় দেশের মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দেয়। যা আজো অব্যাহত রয়েছে।
বছরের বিদায়ের মতো দুনিয়া থেকেও বিদায় নিয়েছেন অনেক তারকা। এই তালিকায় আছেন গীতিকবি জাহিদুল হক, অভিনেতা আহমেদ রুবেল, রবীন্দ্রসঙ্গীতশিল্পী সাদি মহম্মদ, ব্যান্ড তারকা শাফিন আহমেদ, ব্যান্ডশিল্পী খালিদ, অভিনেতা অলিউল হক রুমি, রবীন্দ্রসঙ্গীতশিল্পী পাপিয়া সারোয়ার, কণ্ঠশিল্পী জুয়েল, মনি কিশোর, অভিনেতা মাসুদ আলী খান, সুরকার সঙ্গীত পরিচালক সুজেয় শ্যাম, অভিনেতা জামাল উদ্দিন হোসেনসহ বেশ কয়েকজন।
৭ ফেব্রুয়ারি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান অভিনেতা আহমেদ রুবেল। ১৫ জানুয়ারি মারা যান ষাটের দশকের কবি, গীতিকার জাহিদুল হক। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীতশিল্পী সাদি মহম্মদ ১৩ মার্চ মারা যান। অজানা এক অভিমানে আত্মহত্যা করেন এই গুণী সঙ্গীতশিল্পী।
সঙ্গীত শিল্পী খালিদ মারা যান ১৮ মার্চ। তার বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর। অভিনেত্রী রিশতা লাবনী সীমানা ৪ জুন সকাল ৬টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ২২ এপ্রিল মারা যান অভিনেতা অলিউল হক রুমি। ২৫ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে মারা যান জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকা শাফিন আহমেদ।
কণ্ঠশিল্পী হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল ৩০ জুলাই সকালে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান। নির্মাতা শিল্পী চক্রবর্তী রক্তক্ষরণ জনিত কারণে ৭ মার্চ মারা। অক্টোবরে মারা যান ৯০ দশকের দর্শকপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মনি কিশোর। ১৯ অক্টোবর রাজধানীর রামপুরার বাসা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রবীণ অভিনেতা মাসুদ আলী খান মারা গেছেন ৩১ অক্টোবর। একুশে পদকপ্রাপ্ত জামাল উদ্দিন হোসেন টেলিভিশন ও মঞ্চ নাটকের অভিনেতা ১২ অক্টোবর মারা যান কানাডার ক্যালগিরিতে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সঙ্গীতযোদ্ধা, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক সুজেয় শ্যাম মৃত্যুবরণ করেন ১৭ অক্টোবর।
বছরের শেষের দিকে আমরা হারাই বিখ্যাত গীতিকার, সুরকার ও শিক্ষক আবু জাফরকে। তিনি মারা যান গত ৫ ডিসেম্বর। রবীন্দ্র সঙ্গীতশিল্পী পাপিয়া সারোয়ার ১২ ডিসেম্বর সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থান মারা যান। একুশে পদকজয়ী রবীন্দ্র সঙ্গীতশিল্পী পাপিয়া সারোয়ার দীর্ঘ দিন ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। এ ছাড়া ‘উজান ভাটি’ খ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা সি বি জামান মারা যান ২০ ডিসেম্বর। চলতি মাসে হার্ট অ্যাটাকের পর থেকেই আইসিইউতে ছিলেন তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement