০১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ পৌষ ১৪৩০, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৫
`

ডোনেশন প্রথা বাতিল হলে অর্ধেক দামে বই কিনতে পারবেন শিক্ষার্থীরা

১৫ বছরে পথে বসার উপক্রম ২৬ হাজার পুস্তক বিক্রেতার
-

বড় অঙ্কের টাকা ডোনেশন দিয়ে স্কুল-কলেজ আর কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে চড়া দামে বই বিক্রি করছে প্স্তুক প্রকাশকরা। ফলে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে বইয়ের দোকান (লাইব্রেরি) দিয়েও বিক্রি বাড়াতে পারছেন না দোকানিরা। আবার নামে-বেনামে অনলাইনে নানা ধরনের অফারে বই বিক্রির মাধ্যমেও হাজার হাজার বইয়ের দোকানিকে বৈধভাবে ব্যবসা করার সুযোগ সঙ্কুচিত করা হচ্ছে। এ সুযোগে বাজারে নকল ও মানহীন বইয়ের ব্যাপক ছড়াছড়ি রয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া গত ১৫ বছরের দখলকার স্বৈরাচারী সরকারের একচ্ছত্র আনুকূল্য নিয়ে কোনো নিয়মনীতি বা বিধিবিধানের তোয়াক্কাই করেনি বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির (বাপুস) সাবেক নেতৃবৃন্দ।
তবে গত ৫ আগস্টের পর জনরোষের ভয়ে বিগত দিনের নেতারা পলায়নের পর এখন ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে বাপুস। সমিতির বর্তমান নেতৃবৃন্দ মনে করেন, দেশের পুস্তক ব্যবসাকে সম্মানজনক স্থানে নিয়ে যেতে এবং সমিতির সদস্য ও সদস্য নন এমন ২৬ হাজার পুস্তক বিক্রেতাদের স্বার্থ সংরক্ষণের উদ্যোগও নেয়া হবে। ২০২৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বাপুসের নির্বাচনের মাধ্যমে যোগ্য ও দক্ষ নেতৃত্বের মাধ্যমে সংগঠনটি সুস্থ ধারায় ফিরবে বলেও আশা প্রকাশ করছেন বাপুসের সাধারণ সদস্যরা।
এ দিকে গতকাল সকালে রাজধানীর রমনাস্থ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাপুসের ৪৩তম বার্ষিক সাধারণ সভায় সমিতির সারা দেশের সদস্যরা অংশ নিয়ে বিগত দিনের নানা অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারিতার বর্ণনা তুলে ধরেন। সভায় উপস্থিত পুস্তক বিক্রেতাদের প্রায় সবার মুখেই ছিল ক্ষুব্ধ প্রতিবাদের ভাষা। তাদের বক্তব্য হলো বিভিন্ন স্কুলে ও কোচিং সেন্টারে যে পরিমাণ আর্থিক ডোনেশন দেয়া হয়, এটি বন্ধ করতে পারলে বইয়ের দাম অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে। এ ছাড়া কাগজের দামের সাথে সমন্বয় করে সহায়ক বা নোট গাইড বইয়ের দামও কমানোর দাবি জানান ঢাকার বাইরে থেকে আসা বেশ কয়েকজন পুস্তক বিক্রেতা।
বেশ কয়েকজন পুস্তক বিক্রেতা নয়া দিগন্তকে জানান, বড় দু’টি বোর্ড (এসএসসি ও এইচএসসি) পরীক্ষার আগে নোট গাইড ও টেস্ট পেপারের নামে সহায়ক বই বিক্রির নামে শতকোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কয়েকটি কোম্পানি। তারা প্রতি সেট বইয়ের দাম সাড়ে পাঁচ হাজার থেকে ছয় হাজার টাকার বেশি মূল্য নির্ধারণ করে বিক্রি করছে। আর এ ক্ষেত্রে কোম্পানির লোকজন এজেন্ট নিয়োগ করে স্কুল, কলেজ ও কোচিং সেন্টারে বড় অঙ্কের টাকা ডোনেশন দিচ্ছে। এই অবৈধ ডোনেশন বন্ধ হলে বইয়ের দাম অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে। এমনও অভিযোগ রয়েছে কিছু কিছু কোচিং সেন্টার নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানির বই বিক্রি করে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কমিশনও হাতিয়ে নিচ্ছে তারা। তা হলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে আমাদের দেশের দরিদ্র ও কম আয়ের অভিভাবকরা সামর্থ্যরে বাইরে গিয়ে বাধ্য হয়েই তারা সন্তানের পড়াশোনার জন্য এই অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে? অথচ এর কোনো সমাধান কেউই করছেন না।
লালমনিরহাটের এক পুস্তক বিক্রেতা বলেন, ১৬ পৃষ্ঠার বাচ্চাদের ছড়ার একটি বইয়ের গায়ের দাম দেয়া হয়েছে ৮০ টাকা। স্কুলের শিক্ষকদের ৮০ শতাংশ কমিশন দিয়ে কিন্ডারগার্টেন স্কুলে এই বই পাঠ্য করা হয়। অন্য দিকে আমাদের মাধ্যমে যদি ব্যাকরণ কিংবা অন্য কোনো গ্রামার বই বিক্রি করা হয়, তাহলে আমরা সেখানে মাত্র ৮-১০ শতাংশ কমিশন পাই। আমরা এমন অবস্থার মধ্যে রয়েছে যে, লাখ লাখ টাকা দোকানে বিনিয়োগ করে আমরা এখন দোকান ভাড়া, কর্মচারীর বেতন কিংবা কোনো কোনো মাসে বিদ্যুৎ বিল দেয়ার মতো টাকা উপার্জন করতে পারছি না। এটি আমাদের পুস্তক বিক্রেতাদের সাথে চরম বৈষম্য বলে আমরা মনি করি। আগামী দিনে বাপুসের যে নেতৃত্ব আসবে, আমাদের প্রথম চাওয়াই থাকবে বাপুসের বিদ্যমান সব বৈষম্য দূর করতে হবে।
বুক পয়েন্টের সম্পাদক ও প্রকাশক এম এ মুসা খান নয়া দিগন্তের এই প্রতিবেদককে বলেন, সবার আগে আমাদের সমিতির সদস্য এবং বাইরের মোট ২৫ হাজারের অধিক পুস্তক বিক্রেতাকে বাঁচাতে হবে। তাদের স্বার্থ রক্ষা হয় এমন উদ্যোগ নিতে হবে। একটি টেকসই নীতিমালা তৈরি করে বাপুসের সদস্যদের জন্য কল্যাণ তহবিল গঠনও দীর্ঘ দিনের দাবি। সদস্য সংখ্যা বাড়াতে প্রয়োজনে সদস্য ফি কমাতে হবে। সরকারের বিভিন্ন নীতিনির্ধারণী কমিটিতে বাপুসের সদস্যদেরও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পুস্তক প্রকাশনা বিক্রয়ের সাথে জড়িত সব ধরনের কর মওকুফেরও দাবি জানান তিনি।
বাপুসের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো: রেজাউল করিম বাদশা নয়া দিগন্তকে বলেন, বিগত দিনে বাপুসকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে এখন দেশের এই পরিবর্তিত সময়ে সদস্যদের কল্যাণে নতুনভাবে কাজ শুরু করতে হবে। আগামী নির্বাচনে বাপুসকে এবং এর সদস্যদের ধারণ করতে পারেন এমন নেতৃত্বই সদস্যরা নির্বাচিত করবে। আমরা চাই এখানে নতুন একটি ধারা চালু হোক। এ জন্য একাধিক কমিটি ও উপকমিটি গঠন করে বাপুসের সামগ্রিক কার্যক্রম এগিয়ে নেয়ার কোনো বিকল্প নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন।


আরো সংবাদ



premium cement