ঢাকা সদরঘাটে অপহরণ ও চাঁদাবাজচক্র বেপরোয়া
টার্গেট ঢাকাগামী চরফ্যাশনের লঞ্চযাত্রী-ব্যবসায়ী- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫৫
রাজধানী ঢাকার সদরঘাটে অপহরণ করে তেলঘাটে মুক্তিপণ আদায়কারী একটি দুর্বৃত্তচক্র বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাদের মূল টার্গেট ঢাকাগামী ভোলার চরফ্যাশনের লঞ্চের যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা। চক্রটি প্রতারণার ফাঁদ পেতে মানুষকে অপহরণ করে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ আদায় করে ছেড়ে দিচ্ছে। কখনো কখনো নিজেদের বিএনপির নেতা কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে টার্গেট করা মানুষকে অপহরণের পর মারধর করে হাত-পা বাঁধা ভিডিও স্বজনের কাছে পাঠিয়ে মুক্তিপণ দাবি করে হাতিয়ে নিচ্ছে বিপুল অর্থ। তাদের কৌশলের বিরুদ্ধে গেলে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হয় বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। তারা জানান, মুক্তিপণের দাবিকৃত টাকা না পেলে গুম ও খুনের হুমকি দিচ্ছে তারা।
গত এক মাসের অনুসন্ধানে সদরঘাটে এমন অনেক ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। এতে চরফ্যাশন ও ভোলা থেকে লঞ্চে ঢাকাগামী সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে অপহরণ, গুম ও চাঁদাদাবির অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। ফলে জরুরি প্রয়োজনে নিরাপত্তা বলয় ছাড়া কেউ ঢাকার গন্তব্যে আসা যাওয়া করছে না। অপহরণ ও চাঁদাবাজির ঘটনা চরফ্যাশনে জানাজানি হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
গত ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীর সদরঘাট এলাকা থেকে চরফ্যাশনের এক ব্যবসায়ী নেতাকে (৪৮) অপহরণ করে ওই দুর্বৃত্তচক্র। সদরঘাট থেকে তাকে অপহরণ করা হয়। ভোলা টি হাউজ নামে একটি দোকানে তাদের আড্ডা। সেখান থেকে তাকে জোরপূর্বক নিয়ে যায় ঘোষেরহাটগামী জাকির সম্রাট লঞ্চের ২২৮নং কেবিনে নিয়ে তাকে আটকে রাখা হয়। সাথে থাকা ৫০ হাজার টাকা নিয়ে যায় তারা। এরপর তার কাছ থেকে মোবাইল নান্বার নেয়া হয়। দুই ঘণ্টা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের পর তার পরিবারের কাছে ছবি পাঠিয়ে দেয়া হয়। এরপর ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। তার কাছে থাকা দু’টি চেকের পাতায় স্বাক্ষর নিয়ে দফারফা করে মুক্ত হন তিনি।
জানা গেছে, পোস্তগোলা ব্রিজ থেকে শোয়ারিঘাট, তেলঘাট থেকে কামরাঙ্গীরচরের ঢোডা পর্যন্ত এ চক্র গড়ে তুলেছে অপরাধের নেটওয়ার্ক।
অপর এক ব্যবসায়ী জানান, তারা বেশির ভাগ ব্যবসায়ীকে টার্গেট করে। অপহরণ করে মাইক্রোতে তুলে তেলঘাটের আস্তানায় নিয়ে যায়। অপহরণ চক্রের মূলহোতা আব্বাস। তার বাড়ি ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচা গ্রামে। যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক পরিচয়ে এসব অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে সে। তবে তার গডফাদার কে তা জানা যাচ্ছে না। এনআইডি অনুযায়ী তার বাবার নাম তাজুল ইসলাম তাজু। তাজুর মায়ের নাম মাছুমা, ঠিকানা চরকালিগঞ্জ, আলিনগর, শুভাঢ্যা, কেরানীগঞ্জ। দক্ষিণ আইচা এলাকায় এখন আর সে থাকে না। অপরাধের আড়ালে থাকেন আব্বাস। তার সহযোগী সাদ্দামসহ অপর পাঁচ-ছয়জন। আব্বাস দাড়ি টুপির অন্তরালে মানুষকে টার্গেট করে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে অপরাধ করেই যাচ্ছে।
গত ১৯ অক্টোবর ঢাকার ওয়াইজঘাট থেকে চরফ্যাশনের জাহানপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলী আকবর ফরায়েজীর ছেলেকে মাক্রোবাসে তুলে নিয়ে সদরঘাটে তেলঘাটে ভোলা টিকে হাউজে নিয়ে তিন লাখ টাকা আদায় করে পরদিন সকাল ১০টায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
৪ ডিসেম্বর চরফ্যাশনের ঢালচরের ফারুক মাঝির ছেলে রাকিবকে সদরঘাটে আটক করে গোপন আস্তানায় নিয়ে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। ৮ ডিসেম্বর সদরঘাটে তাদের আস্তানায় চরফ্যাশনের নীলকমল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে আটক করে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায় করে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
১৭ অক্টোবর সদরঘাটে ইলিশাগামী লঞ্চ কর্ণফুলীর কেবিনে চরফ্যাশনের এওয়াজপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম ও তার ভাই ডা: চঞ্চল চৌধুরীকে আটক করে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। এ ছাড়া গত ২৮ নভেম্বর চরফ্যাশন পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের আবুল কাশেম খলিফার ছেলে বাদল ভূঁইয়াকে আটক করে তেলঘাটে নিয়ে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।
১৭ ডিসেম্বর সদরঘাটে লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দেন এক ব্যবসায়ী। তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তেলঘাটে ব্যবসার আড়ালে এই চক্র প্রতিনিয়ত অপহরণ ও চাঁদাবাজি করছে। কিন্তু প্রশাসন কোনো কিছুই করছে না।