কেন্দ্রীয় ঔষধাগারে ফের যন্ত্রপাতি চুরির চেষ্টা
- হামিম উল কবির
- ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৩৮
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ঔষধাগার বা সিএমএসডিতে আবারো কোটি টাকার যন্ত্রপাতি চুরির ঘটনা ধরা পড়েছে। স্বাস্থ্যসংক্রান্ত কাজে এই প্রতিষ্ঠান জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, ভ্যাকসিন, মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি ক্রয় ও সংগ্রহ এবং বিতরণের দায়িত্ব পালন করে। কিন্তু এ প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায়ই নানাভাবে লুটপাটের ঘটনা ঘটছে।
গত নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সিএমএসডিতে আবারো এমন ঘটনা ঘটেছে। এবার নিলামকৃত মালামালের সাথে নিলাম হয়নি এমন অনেক যন্ত্রপাতি পাচার করতে গিয়ে ধরা পড়ে সিএমএসডিতে কর্মরত একটি চক্র। তারা এর আগেও চুরির ঘটনায় ধরা পড়ে এবং লঘু শাস্তি হওয়ায় বর্তমানে যেন দ্বিগুণ উৎসাহে নতুন করে চুরি শুরু করেছে। এ ধরনের ঘটনা ধরা পড়ার পর সিএমএসডির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতীতে স্বৈরাচারের আমলে এমন আরো ঘটনা ঘটে থাকতে পারে, তাই বড় আকারের অনুসন্ধান করা উচিত যাতে কোন মালামাল কোথায় ছিল এবং কোনটি কোথায় গিয়েছে তা জানা যায়। কারণ তখন এরা ছিল মহাশক্তিশালী। তাদের দাপটে সৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চুরি ধরা দূরের কথা; চাকরি বাঁচানোর স্বার্থে কথা বলতেও সাহস পেতেন না।
২১ নভেম্বর সকাল ৯টার পর নিলামের কার্যাদেশপ্রাপ্ত ঠিকাদার মালামাল গ্রহণের জন্য সিএমএসডির ৪৪৭টি ব্যবহার অযোগ্য মালামাল সংগ্রহ করতে স্টোরে ঢোকে। স্টোরের ইকুইপমেন্ট-১ শাখার মালামাল নিলাম হলেও স্টোর অফিসার ইসরাইল আমিনের নির্দেশে ইকুইপমেন্ট-২ শাখার মালামাল ঠিকাদারের গাড়িতে তুলে ফেলে সেদিন। সিএমএসডির সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ইকুইপমেন্ট-২ শাখার বারান্দার মেঝেতে সাজিয়ে রাখা নিলাম বহির্ভূত মালামাল গাড়িতে তুলতে দেখে ইকুইপমেন্ট-২ শাখার প্যাকার/লোডার কর্মচারী মো: মোস্তফা বিষয়টি স্টোর অফিসার ইসরাইল আমিন ও স্টোরকিপার মো: মেজবাহ উদ্দিনকে জানান। ইসমাইল এবং মেজবাহ উদ্দিন একসাথে মোস্তফাকে কড়া ধমক দিয়ে ওখান থেকে সরিয়ে দেন। পরে চেকপোস্টে কর্মরত টিনস্মিথ মো: শাহাদাত বিষয়টি সিএমএসডির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে চুরির চেষ্টাটি ধরা পড়ে।
পরে গাড়ি থেকে ১৬টি অনলাইন ইউপিএস, কমপিউটারের একটি দামি সিপিইউ, চারটি ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজার, ৯০ কার্টুন ইসিজি পেপার নামিয়ে আনা হয়। এ ঘটনায় ২৪ নভেম্বর নিলাম বহির্ভূত মালামাল চুরির চেষ্টার অভিযোগে স্টোর অফিসার ইসরাইল আমিন, ইকুইপমেন্ট-২ শাখার স্টোরকিপার মো: মেজবাহ উদ্দিন এবং প্যাকার/লোডার মো: মোস্তফার বিরুদ্ধে কারণদর্শাও নোটিশ জারি করা হয়। গত ২৬ নভেম্বর এই তিনজনই কারণদর্শানো নোটিশের জবাব প্রদান করেন। কিন্তু তাদের জবাবে সিএমএসডির যন্ত্রপাতি চুরি প্রকৃত ঘটনার পুরোটা উঠে আসেনি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করা উচিত, তখন বিষয়টি পুলিশ দেখলে পুরো ঘটনা সামনে আসতে পারে। সিএমএসডি ঘটনার বিস্তারিত জানতে সিনিয়র সহকারী সচিব মেহের নিগার সুলতানা, ফিন্যান্স অ্যান্ড বাজেটের দায়িত্বে নিয়োজিত মেডিক্যাল অফিসার মো: শামিউর রহমান ও মেডিক্যাল অফিসার (প্রশাসন) ডা: ফাতেমা তুজ জোহরার সমন্বয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে সিএমএসডির ওই তিন কর্মচারী এবং নিলামপ্রাপ্ত ঠিকাদারের জবানবন্দী নিয়েছে।
সিএমএসডির সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২০১২ সালে স্টোরের একটি শাখার রেজিস্টার বহির্ভূত ৯৯টি ব্যাটারি ওই শাখার স্টোরকিপারের দায়িত্বে থাকা জনৈক ফার্মাসিস্ট সিএমএসডির পরিবহন ঠিকাদার আরাফাত ট্রান্সপোর্টের সাথে আঁতাত করে পরিবহনে ওঠানোর সময় ধরা পড়ে। পরে ওই কর্মচারীকে মহাখালীর জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে বদলি করা ছাড়া অন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ওই কর্মচারী এক বছর ক্যান্সার হাসপাতালে থাকার পর পুনরায় সিএমএসডিতে ফিরে আসে। বর্তমান স্টোর অফিসার ইসরাইল আমিন আর ২০১২ সালে ব্যাটারি চুরিতে জড়িত ওই কর্মচারী একে অপরের ভায়রা ভাই। আরাফাত ট্রান্সপোর্টের সাথে আঁতাতে জড়িত ওই কর্মচারীকেও বিচারের আওতায় আনা উচিত, তাহলে আরো অনেক ঘটনা বের হয়ে আসতে পারে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা