জড়িত পুলিশকে কারাগারে পাঠালেন ট্রাইব্যুনাল
আন্দোলনে আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানো- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:২০
ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় লাশ পোড়ানো ঘটনায় সরাসরি জড়িত মুকুল চোকদার নামে পুলিশের এক সদস্যকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গতকাল চেয়ারম্যান বিচারপতি মো: গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। তাকে আগামী ২৬ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন। এ সময় প্রসিকিউটর বি এম সুলতান মাহমুদ, শাইখ মাহদীসহ অন্য প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন।
শুনানিকালে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন ট্রাইব্যুনালকে জানান, দোহার থানায় কর্মরত ছিলেন পুলিশ সদস্য মুকুল চোকদার। সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় কিশোরগঞ্জ থেকে আরো একজন পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, কিশোরগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা পুলিশ সদস্যের নাম মালেক। গতকাল বুধবার আদালত বন্ধ থাকায় সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে তাকে উপস্থাপন করা হয়। এখন তিনি কিশোরগঞ্জে বন্দী আছেন। যথাযথ প্রক্রিয়ায় ট্রাইব্যুনালে নথি পাঠানো হবে, তারপর এ মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হবে।
তাজুল ইসলাম বলেন, গত ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় ছয় তরুণকে গুলি করে হত্যার পর ভ্যানে রেখে তাদের লাশে আগুন লাগিয়ে দেন পুলিশ সদস্যরা। যখন এসব মরদেহে আগুন দেয়া হচ্ছিল, তখন একজন জীবিত ছিলেন। জীবিত থাকা অবস্থায় তার গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন দেয়া হয়। এই নৃশংসতার সাথে যেসব ব্যক্তি সরাসরি জড়িত, তাদের মধ্যে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের একজন কনস্টেবল মুকুল চোকদার।
তাজুল ইসলাম বলেন, মুকুল চোকদার কনস্টেবল হলেও ওই ভয়াবহ ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত, তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির দিনই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। গতকাল বন্ধের দিন থাকায় আজ তাকে ট্রাইব্যুনালে সোপর্দ করা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, সেখানে (সাভারের আশুলিয়া) তখন যিনি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন, তিনি পালিয়ে গেছেন। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি আছে। তার ওপরে যে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ও পুলিশ সুপার (এসপি) ছিলেন, তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তার ওপর আইজিপি ও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি আছে। সুপিরিয়র কমান্ড স্ট্রাকচার (সর্বোচ্চ নির্দেশদাতা) থেকে নিচ পর্যন্ত গেছে। তারা মাঠপর্যায়ে এগুলো বাস্তবায়ন করেছেন।
তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা যদি অপরাধগুলো প্রমাণ করতে চাই, কিভাবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়ন করা হয়েছে, সে জন্য গ্রাউন্ড লেভেলে (মাঠপর্যায়ে) নিষ্ঠুরতম কাজ যারা করেছেন, তাদের কয়েকজনকে আমরা ধরেছি। এমন নয়, যাত্রাবাড়ীতে ৩০০ থেকে ৪০০ মানুষকে মারা হয়েছে, সেখানে ৩০০, ৪০০, ৫০০ পুলিশ ছিল। প্রত্যেককে আমরা ধরব না। আমরা তাদের কমান্ডারদের ধরব।
তাজুল ইসলাম আরো বলেন, যখন ঘটনাটি সরাসরি প্রমাণের প্রশ্ন আসবে, একেবারে অকাট্য প্রমাণ পাবো যে তারাই সরাসরি লাশে আগুন দিয়েছেন, তখন তো তাকে স্পেয়ার (ছেড়ে দেয়া) করার কোনো সুযোগ নেই। তাদের মাধ্যমে কিন্তু প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত কমান্ড স্ট্রাকচার ও নির্দেশের যে ধারাবাহিকতা, সেটা প্রমাণিত হয়েছে বা হবে। সে কারণে আমরা তাদের ধরেছি।
এর আগে গত মঙ্গলবার ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় লাশ পোড়ানো ঘটনায় করা মামলায় ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ও সেখানে কর্মরত চার পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তাদের মধ্যে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা