২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রধানের অপসারণ দাবি

-


আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীর পদত্যাগ বা অপসারণ দাবি করেছেন প্রশাসন ক্যাডারের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা। এ ছাড়া কমিশন যদি কোনো ‘অযাচিত’ সুপারিশ করে, তাহলে কঠোর কর্মসূচি দেয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। গতকাল বুধবার রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে প্রশাসন ক্যাডারের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের যৌথ প্রতিবাদ সভায় এ দাবি জানানো হয়। জনপ্রশাসনের সংস্কারকে ভিন্ন খাতে পরিচালিত করে দেশকে অস্থিতিশীল করার গভীর ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে যৌথভাবে এই প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এবং বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড।

সম্প্রতি সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সরকারের উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ এবং অন্যান্য ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ কোটা রাখার সুপারিশ করা হবে। এর পর থেকেই এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন প্রশাসন ক্যাডারের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা। তারা সংস্কার কমিশনের এই সুপারিশের প্রস্তাবকে বৈষম্যমূলক, অযৌক্তিক, ষড়যন্ত্রমূলক উল্লেখ করে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
সরকার গঠিত জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন এই উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ ও অন্যান্য ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ কোটা রাখার সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে। একই সাথে কমিশন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডারে না রেখে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের মতো আলাদা করার সুপারিশ করতে যাচ্ছে।

বিষয়টি সামনে আসার পর থেকে প্রতিবাদের পাশাপাশি আন্তঃক্যাডার দ্বন্দ্বও প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। তাদের দাবি, সহকারী কমিশনার (শুরুর পদ) থেকে শুরু করে সচিব পর্যন্ত পদগুলোর সমন্বয়ে ‘বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস’ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অর্থাৎ প্রশাসনের শতভাগ পদ হতে হবে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য। এ নিয়ে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা নিজেদের দাবিতে গত রোববার সচিবালয়ে বড় শোডাউন করেন।
এ দিকে সরকারের উপসচিব পদে কোটা পদ্ধতি বাতিল, নিজ নিজ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ নীতিনির্ধারণী পদে দায়িত্ব দেয়া এবং সব ক্যাডার কর্মকর্তার সমান অধিকার নিশ্চিতের দাবিতে মঙ্গলবার ‘কলমবিরতি’ পালন করেছে ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত ‘আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’। পরিষদের পক্ষ থেকে আজ বৃহস্পতিবার মানববন্ধন করারও ঘোষণা দিয়েছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারও আলাদাভাবে মাঠে নেমেছে। তারা পৃথকভাবে সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের দাবির কথা জানিয়েছে।

এ রকম পরিস্থিতিতে বড় রকমের প্রতিবাদ সভা করলেন প্রশাসন ক্যাডারের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা। এতে বর্তমানে কর্মরত কনিষ্ঠ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সচিব পর্যন্ত কর্মকর্তারা উপস্থিতি ছিলেন। সাবেক কর্মকর্তাদের মধ্যে ১৯৭৩ ব্যাচের কর্মকর্তা পর্যন্ত প্রতিবাদ সভায় অংশ নেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সভাপতি হিসেবে ঢাকার বাইরের জেলা প্রশাসকে ও কর্মরত প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা অনলাইনে এই প্রতিবাদ সভায় অংশ নেন।
সভায় বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি এ বি এম আব্দুস সাত্তার বলেন, আমরা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীর অপসারণ চাই। সরকার যদি অপসারণ না করে, কিভাবে অপসারণ করতে হবে, সেই হাতিয়ার আমাদের জানা আছে।

বিসিএস পরিবারকে বাঁচানোর জন্য হয়তো আরো কষ্ট করতে হবে উল্লেখ করে আব্দুস সাত্তার আগামী ৪ জানুয়ারি মহাসমাবেশ করার প্রস্তাব দেন। একই সাথে তিনি সহকারী কমিশনার (শুরুর পদ) থেকে শুরু করে সচিব পর্যন্ত পদগুলোর সমন্বয়ে ‘বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস’ প্রতিষ্ঠা করার দাবি জানান।
প্রতিবাদ সভায় আরো একাধিক কর্মকর্তা জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধানের পদত্যাগ দাবি করে কমিশন পুনর্গঠনের আহ্বান জানান। তারা সিভিল সার্ভিসের বিভিন্ন ইতিহাস ও নানা তথ্য তুলে ধরেন। একই সাথে উপসচিবের পদটি শুধু যে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য হওয়া উচিত, তার পক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরেন।
বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো: আনোয়ার উল্লাহ কঠোর কর্মসূচির হুমকি ও নিজেদের ছয় দফা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘প্রথমত, আমরা এক আছি, এক থাকব। দ্বিতীয়ত, আমরা প্রশাসন ক্যাডারের ওপর কোনো রকমের সার্জারি বা কোটা আরোপ করতে দেবো না। তৃতীয়ত, কমিশন কোনো অযাচিত সুপারিশ করলে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে। চতুর্থত, প্রশাসনে কোনো পর্যায়ে অন্ধভাবে বহিরাগত কাউকে বসানোর চেষ্টা করা হলে তা কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে। পঞ্চম, পদোন্নতি ও পদায়নের ক্ষেত্রে বঞ্চিত কর্মকর্তাসহ সব ধরনের কর্মকর্তাকে সম্মানজনক অবস্থান তৈরি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে অবিলম্বে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ষষ্ঠত, দেশকে কোনোভাবে অস্থিতিশীল করার জন্য যেকোনো ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করার জন্য প্রশাসন সারা দেশে সতর্ক থেকে দায়িত্ব পালন করবে।’ এ সময় উপস্থিত কর্মকর্তারা তাতে সম্মতি দেন।

বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমানের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সভায় আরো বক্তব্য দেন প্রশাসনের ১৯৭৩ ব্যাচের কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেন আলমগীর, ১৯৭৯ ব্যাচের এস এম জহিরুল ইসলাম, ১৯৮১ ব্যাচের হেলালুজ্জামান, ১৯৮৪ ব্যাচের এম এ খালেক, ভূমি মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ, আবু ইউসুফ, ১৯৮৫ ব্যাচের মোহাম্মদ মসিউর রহমান, ১৯৮৬ ব্যাচের মো: জাকির হোসেন কামাল, শামীম আল মামুন, ঢাকার জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদ, উপসচিব নূরুল করিম ভূঁইয়া, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টার একান্ত সচিব মো: সারওয়ার আলম, পররাষ্ট্র উপদেষ্টার একান্ত সচিব মো: সামিউল মাসুদ, ২৮ ব্যাচের খন্দকার মুশফিক রহমান, ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো: বদরুদ্দোজা শুভ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহীদুল ইসলাম, যুগান্তরের উপসম্পাদক বি এম জাহাঙ্গীর, ডিবেট ফর ডেমোক্র্যাসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী প্রমুখ।

 


আরো সংবাদ



premium cement