বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক প্রকল্প বাতিল
একনেকে ১০ প্রকল্প অনুমোদন- বিশেষ সংবাদদাতা
- ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫৩
জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির কথা চিন্তা করে মৌলভীবাজারে স্থাপিতব্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক প্রকল্পটি বাতিল করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সংরক্ষিত বনায়ন এলাকায় এই প্রকল্পটি গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনুমোদন দেয়া হয় বলে জানান পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। এ ছাড়া রেলের দুই প্রকল্পসহ ১০ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৯৭৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে এক হাজার ৬৪২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ৩৩১ কোটি ৩২ লাখ টাকা।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানানো হয়। এর আগে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে তার দফতরে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় প্রকল্পগুলো অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। এসময় পরিকল্পনা সচিব ও অন্যান্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, সংরক্ষিত বনাঞ্চলে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে জীববৈচিত্র্যের বিশাল ক্ষতি হতো। এই প্রকল্প আগেই বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত এসেছে। এটা একনেকের মাধ্যমে বাদ দেয়া হলো। তিনি বলেন, দেশের আইন অনুযায়ী মৌলভীবাজারের এই অঞ্চলটা জীববৈচিত্র্য সংরক্ষিত এলাকা। এখানে ইকো পার্ক করা হয় পর্যটনের জন্য। সমীক্ষা করে দেখা গেছে, জীববৈচিত্র্য বিশেষ করে হাতিদের চলাফেরাসহ অন্যান্য জীবজন্তুর ভীষণ ক্ষতি হবে। কিছু কিছু বনাঞ্চলে আমরা সাফারি পার্ক করেছি। কিন্তু সব দেশেই কিছু কিছু বন অঞ্চল সংরক্ষিত থাকা উচিত। ইকোলজিক্যালি সেনসেটিভ অঞ্চল। সেটা সংরক্ষিত হিসেবে থাকে। এটা আগে থেকেই সংরক্ষিত অঞ্চল ছিল। কেন এখানে ইকোপার্কের জন্য এক বড় প্রকল্প হয়েছিল সেটাই আশ্চর্যের বিষয়।
এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, এখনো বাদ দেয়ার কাজ শেষ হয়নি। আরো বাদ পড়বে। আমরা এ ধরনের প্রকল্প বাদ দিচ্ছি। তবে এখনো এর চূড়ান্ত হিসাব করা হয়নি। কোনো প্রকল্পে দুর্নীতি হলে সে বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।
মৌলভীবাজারের সংরক্ষিত বন লাঠিটিলা বনের পাঁচ হাজার ৬৩১ একর জমিতে ‘বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক’ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, মৌলভীবাজার (প্রথম পর্যায়) প্রকল্পটি একনেক সভায় ২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর অনুমোদিত হয়েছিল। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর গঠিত কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের ৩৪৬টি লেভেলে ক্রসিং গেইটে গেইটকিপার নিয়োগসহ প্রয়োজনীয় মানোন্নয়ন করা হবে। ট্রেনের ভ্রমণ সময় কম করে সেকশনাল ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি করতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের ৩২৬টি লেভেল ক্রসিং গেইটে গেইটকিপার নিয়োগসহ প্রয়োজনীয় মান উন্নয়ন করা হবে। রেললাইন ও সড়কপথে যানবাহন চলাচলের সময় দুর্ঘটনা রোধ করে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে, চিলমারী এলাকায় (রমনা, জোড়গাছ, রাজিবপুর, রৌমারি ও নয়াহাট) নদীবন্দর নির্মাণ প্রকল্প; আশুগঞ্জ-পলাশ সবুজ প্রকল্প; কুমিল্লা অঞ্চলে টেকসই কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্প; অর্থনৈতিকভাবে জীবনচক্র হারানো রাবার গাছ কর্তন, পুনঃবাগান সৃজন ও রাবার প্রক্রিয়াকরণ আধুনিকায়ন প্রকল্প; ভোলা নর্থ গ্যাস ক্ষেত্রের জন্য ৬০ এমএমএসসিএফডি ক্ষমতাসম্পন্ন প্রসেস প্ল্যান্ট সংগ্রহ ও স্থাপন প্রকল্প; রশিদপুর-১১ নং কূপখনন প্রকল্প; ২ডি সাইসমিক সার্ভে ওভার এক্সপ্লোরেশন ব্লক ৭ অ্যান্ড ৯ প্রকল্প; মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ৬০টি ডে-কেয়ার সেন্টার প্রকল্প; বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের লেভেল ক্রসিং গেইটগুলোর পুনর্বাসন ও মানোন্নয়ন প্রকল্প এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের লেভেল ক্রসিং গেইটগুলোর পুনর্বাসন ও মানোন্নয়ন প্রকল্প।
এছাড়া বৈঠকে পরিকল্পনা উপদেষ্টার অনুমোদন দেয়া ছয়টি প্রকল্প একনেকে অবগতির জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- মাদানী এভিনিউ হতে বালু নদী পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ এবং বালু নদী হতে শীতলক্ষ্যা নদী পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্প; রফতানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্প; নির্বাচিত ফসলের নন-হিউম্যান কনজাম্পশন এবং ফসলের ক্ষতি ও অপচয় নিরূপণ জরিপ প্রকল্প; অনাবাদি পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন প্রকল্প; বাংলাদেশের প্রাণিকুলের রেড লিস্ট হালনাগাদকরণ প্রকল্প এবং চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিআইডিপি-৪) প্রকল্প।