২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

যারা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন বিচারের মুখোমুখি হওয়ার প্রস্তুতি নিন : তথ্য উপদেষ্টা

আরাফাতের জানাজার আগে বক্তব্য রাখেন তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম : নয়া দিগন্ত -

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পরপরই বিগত আওয়ামী সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রী-সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগসহ এর ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। ভারতে আশ্রয় নেয়া ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সাথে জড়িত অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করতে জড়িতদের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য, সম্প্রচার ও টেলিযোগাযোগ উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
গতকাল সোমবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে আহত ১২ বছর বয়সী মাদরাসা ছাত্র আরাফাতের জানাযা শুরুর আগে এমন মন্তব্য করেন নাহিদ ইসলাম।
তিনি বলেন, জুলাই গণহত্যাসহ এর আগে যত গুম খুন হয়েছে, তার বিচারের মাধ্যমে সমাজে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে এবং শহীদ ও আহতদের সামনে আমরা জাতি হিসেবে দাঁড়াতে সক্ষম হবে। আমরা যেন ভুলে না যাই, এ সরকারের বিচার টপ প্রায়োরিটি। এ বাংলার মাটিতে গণ-হত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত করা হবে, এমন ঘোষণা দিয়ে আমরা এক দফার ঘোষণা দিয়েছিলাম, সেখান থেকে আমরা একবিন্দু পরিমাণ পিছপা হইনি, আমরা অবশ্যই বিচার নিশ্চিত করব। যারা ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাইরে থেকে বাংলাদেশকে তারা অস্থিতিশীল করবে, তাদেরকে বলব বিচারের সম্মুখীন হওয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিন। শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আসবে কেবল বিচারের মুখোমুখি হওয়ার জন্য এবং ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলার জন্য।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আহত ও নিহতদের যে বাংলাদেশ আকাক্সক্ষা, সেই আকাক্সক্ষা থেকে বাংলাদেশ গড়া হবে এমন প্রসঙ্গ উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনে যেভাবে গুলি চালানো হয়েছে, এখনো হাসপাতলে গেলে সেই পাশবিকতা লক্ষ করা যায়। যেভাবে মানুষের হাত-পা, চোখ নষ্ট হয়েছে; এমন পাশবিকতা আর কোনো আন্দোলনে হয়েছে কি না আমার জানা নেই। যুদ্ধে আহত হলেও এভাবে পঙ্গুত্ববরণ করতে হয় না; এখন যারা আহত অবস্থায় বেঁচে রয়েছে, তাদের বেঁচে থাকাটা অনেক কষ্টের ও যন্ত্রণার। আমরা সেই কষ্ট ও যন্ত্রণার প্রতি সব সময় সমবেদনাশীল। এ সরকার অবশ্যই আহত ও শহীদদের পরিবারকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পুনর্বাসন করবে। সেইসাথে তাদের যে রক্তত্যাগ সে আকাক্সক্ষা থেকে বাংলাদেশকে গঠন করা হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘যখন আমাদের ভাইদের শহীদ হওয়ার খবর আসে এবং আমাদেরকে শহীদ মিনার আসতে হয়। দিন দিন এ শহীদের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। ১২ বছর বয়সী শহীদ আরাফাত দেশকে ফ্যাসিবাদ-মুক্ত করতে রাস্তায় নেমেছিল। আমরা যারা জীবিত আছি, তাদের সৌভাগ্য হয়নি শহীদ হওয়ার। এ আন্দোলনে স্কুল-কলেজের পাশাপাশি মাদরাসা শিক্ষার্থীদেরও ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল এবং তাদের রক্তত্যাগ ও আত্মত্যাগ রয়েছে। ফ্যাসিবাদী শাসনামলে দেখা যায়, বিগত সরকারের রোষানলে ও বঞ্চনার শিকার হয়েছে মাদরাসার শিক্ষার্থীরা। এবারের আন্দোলনে তারা কাঁধে-কাঁধ রেখে লড়াই করেছে। সমাজে যেই বিভাজন শেখ হাসিনা করে গিয়েছে, সেই বিভাজন জুলাই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দূর হয়েছে। দেশের বাইরের কোনো শক্তিকে আর এ বিভাজন করতে দেয়া হবে না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য যারা লড়াই করবে, আমরা সবাই এক এবং ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকব।
এ সময় অন্যদের মধ্যে আরাফাতের বাবা শহীদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো: সায়েদুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলমসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত আরাফাতের নামাজের জানাজার ইমামতি করেন আরাফাতের ভাই হাসান আলী। এর আগে গত রোববার রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে আহত ১২ বছর বয়সী মাদরাসাছাত্র আরাফাতের মৃত্যু হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement