বিএমইটির বহির্গমনে দৌরাত্ম্য বেড়েছে দালালের
ওয়ানস্টপে বিদেশগামীদের সিরিয়াল মেনে সেবা নিশ্চিতের নির্দেশ- মনির হোসেন
- ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:১৫
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) বহির্গমন শাখা যেন এখন ‘দালাল নির্ভর’ হয়ে পড়েছে। বিদেশগামী কর্মীদের বহির্গমন ক্লিয়ারেন্স সিন্ডিকেটের দখলেই রয়েছে এখনো। এ শাখা থেকেই বহির্গমন ছাড়পত্র (স্মার্ট কার্ড) নিয়ে প্রতিদিন সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, কাতার, কুয়েত, জর্ডান, ইতালী, পূর্ব ইউরোপের দেশ রোমানিয়া, বুলগেরিয়া, সার্বিয়াসহ বিভিন্ন শ্রমবান্ধব দেশে হাজার হাজার শ্রমিক রওয়ানা হচ্ছেন। আর এর জন্য প্রতিটি কর্মীর জমা হওয়া ফাইলের জন্য অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ দিকে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর বহির্গমন শাখার কার্যক্রম নিয়ে গত নভেম্বর মাসের সমন্বয় সভায় কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে বলে বৈঠক সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ওই সভায় এই শাখা নিয়ে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, যে কোনো উপায়ে হোক বহির্গমন শাখা থেকে দালালদের দৌরাত্ম্য কমাতে হবে। পাশাপাশি বিএমইটি’র নিজস্ব উদ্যোগে ওয়ানস্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে যেসব বিদেশগামী কর্মীকে সেবা দেয়া হচ্ছে তাদের ফাইল জমা হওয়ার সময় অবশ্যই সিরিয়াল (ক্রম) নিশ্চিত করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যদি এই সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট কেউ না মানে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলা হয়েছে।
বিদেশগামী ভুক্তভোগী শ্রমিক ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, ব্যক্তিগত উদ্যোগে যারা বিদেশ থেকে (মামা, খালু, চাচা) ভিসা সংগ্রহ করে আনছেন এবং বিএমইটির ওয়ান স্টপ সার্ভিসে ফাইল জমা দিয়ে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন তাদের প্রত্যেকেই বহির্গমন ছাড়পত্র পাওয়া পর্যন্ত সরকারি ফি’র বাইরে অতিরিক্ত ৩-৪ হাজার টাকা করে গুনতে হচ্ছে। এতে অভিবাসন ব্যয় আরো বেড়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন এই সেক্টরে শত শত ফাইল জমা পড়ছে। সেবার নামে এই সেক্টর থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট। যারা টিপসের নাম করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তাদের কারো বিরুদ্ধেই এখন পর্যন্ত তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারেননি সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদের আস্থাভাজন ও জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক সালেহ আহমদ মোজাফফর (গ্রেড-১)। গতকাল দুপুরে জনশক্তি সালেহ আহমদ মোজাফফরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। বহির্গমন শাখার পরিচালক সরদার মামুনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাকেও পাওয়া যায়নি।
তবে বিএমইটির মহাপরিচালকের দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন সদস্য নিজের পরিচয় গোপন রাখার শর্তে নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘আসলে বহির্গমন শাখায় দালাল বলতে কিছু দেখছি না’। তারপরও মাসিক সমন্বয় সভার আলোচনায় দালাল বলতে যা বুঝানো হয়েছে সেটি হচ্ছে, রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স নাই, তারপরও ওই ব্যক্তি ফাইল নিয়ে বর্হির্গমন শাখায় ঘোরাঘুরি করছে তাদেরই হয়তো দালাল বলা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, বিএমইটি’র বহির্গমন শাখায় ক্লিয়ারেন্স করানোর জন্য একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। তারা অন্য রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্সের নামে আসা চাহিদাপত্র জমা করিয়ে দিয়ে থাকেন। গ্রুপভিত্তিক যারা কাজ করে থাকে, তাদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কাজ চলমান রয়েছে।
বিএমইটি সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ নভেম্বর জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর সম্মেলন কক্ষে মহাপরিচালক সালেহ আহমদ মোজাফফরের সভাপতিত্বে মাসিক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রশাসন শাখার কার্যক্রম, বাজেট, সাধারণ সভা, আইটি শাখা, বহির্গমন শাখা, কর্মসংস্থান শাখা, প্রশিক্ষণ শাখা, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন সেল, টিটিসিগুলো ঢাকার কার্যক্রম ও ৪০টি উপজেলায় ৪০টি টিটিসি ও চট্টগ্রামে একটি ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। এসব বিষয়ে আলোচনার পর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সভাপতির পক্ষ থেকে সবাইকে নির্দেশ প্রদান করা হয়। এর মধ্যে বহির্গমন শাখা থেকে দালালদের দৌরাত্ম্য রোধ করার জন্য পরিচালক (বহির্গমন) সরদার মামুন ও পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মাসুদ রানাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। একই সাথে ওয়ানস্টপের মাধ্যমে সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে ক্রম অনুযায়ী সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে বলা হয়। অতিরিক্ত মহাপরিচালক ওয়ান স্টপের সেবা তদারক করবেন। এ ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
গতকাল বিকেলে বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর সাথে জড়িত একজন রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক নয়া দিগন্তকে বলেন, ওয়ানস্টপে ব্যক্তিগত উদ্যোগে যারা ভিসা নিয়ে আসছে, তারা লাইনে দাঁড়িয়ে ফাইল জমা দিচ্ছেন। কিন্তু তারা কেউই জানেন না ফাইল কিভাবে প্রসেস করতে হয়। এই সুযোগে ওই রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ও প্রতিনিধিরাই এসব ফাইল জমা দিচ্ছেন। কর্মীরা সঠিকভাবে ওয়ানস্টপের সার্ভিস কি সেটি বুঝতে না পারার কারণে প্রত্যেকের কাছ থেকে অতিরিক্ত ২ থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। সেই হিসেবে তাদের একেকটি ফাইল প্রসেস করতে ৮-১০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়ে যাচ্ছে। আর এগুলো সব প্রকাশ্যেই হচ্ছে। কিন্তু তাদের শনাক্তে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এসব ফাইল অতিরিক্ত মহাপরিচালকের দফতর পর্যন্ত গিয়ে থাকে। যারা টাকা দেন না তাদের ফাইল পড়ে থাকে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বহির্গমন শাখায় দালাল নির্মূল করা প্রসঙ্গে যেটা বুঝানো হচ্ছে সেটি হচ্ছে একজন রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ২০-৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০টি রিক্রুটিং এজেন্সি লাইসেন্সের নামে ফাইল জমা দিয়ে থাকেন। এখন তাদেরকে বোঝানো হয়েছে কি-না তা আমি বুঝতে পারছি না। তবে আমার মতে যে রিক্রুটিং এজেন্সির নামে ফাইল চাহিদাপত্র আসবে সেই এজেন্সিই তার ফাইল জমা দেবেন। এই নিয়মটি চালু হওয়া উচিত বলে যোগ করেন তিনি। উল্লেখ্য, বিএমইটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত বহির্গমন ছাড়পত্র নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন ৬ লাখ ৯৮ হাজার ৫৫৮ জন কর্মী। এর মধ্যে সৌদি আরবে গিয়েছেন ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৩৪৩ জন। যদিও অক্টোবর মাসে ১ লাখ ৩ হাজার শ্রমিক বিএমইটির ক্লিয়ারেন্স নিয়েছেন বলে বহির্গমন শাখার একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা