২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

কেরানীগঞ্জে ৩ ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছে সন্ত্রাসীরা

-


সন্ত্রাসের জনপদ ঢাকার কেরানীগঞ্জে গত ১৫ বছরে একটি শক্তিশালী ভূমিদস্যু সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। তারা প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় উপজেলার ধলেশ্বরের তীর, খাসজমি ও আবাদি জমির মাটি জবর দখল করে বিক্রি করে দিচ্ছে। এসব সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে এভাবে রাতের আঁধারে শত শত একর ব্যক্তি মালিকানাধীন ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে ঢাকা জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও উপজেলা ভূমি অফিসারের নির্দেশনাও মানছে না সন্ত্রাসীরা।
গতকাল কেরানীগঞ্জ উপজেলার তেঘরিয়া, কোন্ডা, শাক্তা, কলাতিয়া, শুভাঢ্যা, হযরতপুর, তারানগর, রুহিতপুর ও বাস্তা ইউনিয়নে ঘুরে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

অনুসন্ধানে বাঘৈর মৌজায় দেখা যায়, প্রায় পাঁচ শ’ শতাংশের অধিক ফসলি জমির মাটি কেটে পুকুর বানিয়েছে সন্ত্রাসীরা। এ ব্যাপারে জমির মালিক শাহনাজ বেগম, হেলেনা বেগম, শিপু বেগম, ফাতেমা লিজা ও মৃত আমির হোসেনের সন্তানরা জানান, তারা এলাকায় থাকেন না। তাদের জমি বর্গা চাষিদের দিয়ে আবাদ করান। এসব জমিতে তিনটি ফসল উৎপন্ন হয়। গত নভেম্বরে ধান কাটা শেষ হয়েছে। সম্প্রতি তাদের অজান্তেই ১৩৪ শতাংশ জমির মাটি কেটে নিয়ে গেছে সন্ত্রাসীরা। জমির একাংশের মালিক শাহনাজ বেগমের ছেলে শাহাদাত জানান, উপজেলার বাঘৈর মৌজায় তার মা, খালা ও মামার পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ১৩৪ শতাংশ তিন ফসলি জমি রয়েছে। যে জমি তারা উত্তরাধিকার সূত্রে ভোগদখল করে আসছেন। সম্প্রতি একটি রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় স্থানীয় ভূমিদস্যু খোরশেদ জমিদার, তার ভাগ্নে রাজামিয়া ও আরিফ হোসেনের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা রাতের আঁধারে ভেকু দিয়ে তাদের ১৩৪ শতাংশসহ এলাকার প্রায় পাঁচশ শতাংশেরও বেশি তিন ফসলি জমির মাটি কেটে নিয়েছে সন্ত্রাসীরা। এসব মাটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ইটের ভাটায় বিক্রি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে তিনি গত ১৩ ডিসেম্বর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় অভিযোগ দিলে সন্ত্রাসীরা এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম তা গ্রহণে অস্বীকার করেন। এরপর গত ১৪ ডিসেম্বর জমির মাটিকাটা বন্ধে সহায়তা চেয়ে হেমায়েতপুর আর্মি ক্যাম্পে ক্যাম্প কমান্ডার বরাবর আবেদন করেন। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তিনজনকে আটক এবং জমির মাটি কাটা বন্ধের নির্দেশনা দেন।

কিন্তু সন্ত্রাসীরা সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করে সেনাবাহিনীর গাড়ি চলে যাওয়ার পর রাতে আবারো মাটি কাটা শুরু করে। এরপর ভুক্তভোগী গত ১৮ ডিসেম্বর ঢাকা জেলা প্রশাসক (ডিসি) তানভীর আহমেদ বরাবর লিখিত আবেদন করেন। এ ব্যাপারে ডিসি কেরানীগঞ্জের ইউএনওকে বিষয়টি দেখার নির্দেশনা দেন। ইউএনও রীনাত ফৌজিয়া বিষয়টি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের এসিল্যান্ড রইস আল রেদোয়ানকে খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দেন। এসিল্যান্ড বিষয়টি তদন্তের জন্য ভূমি উপসহকারী রুহুল আমিনকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। রুহুল আমিন তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন, কিন্তু মাটিকাটা বন্ধ হয়নি। এ ছাড়া উপজেলার কোন্ডা ইউনিয়নে ধলেশ্বরী নদীর তীর, ধলেশ্বরী নদীর আব্দুল্লাহপুর এলাকা, রুহিতপুর এলাকা ও হযরতপুর এলাকার কালিগঙ্গা নদীর তীরের সরকারি খাসজমির মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করে দিচ্ছে সন্ত্রাসীরা। লাখির চরের ইব্রাহিমের ৩০ শতাংশ, হযরতপুরের, আয়াত আলীর ১৯ শতাংশ, ও কোনডা ইউনিয়নের শত শত একর ফসলের জমির মাটি সন্ত্রাসীরা জবরদখল করে রাতের আঁধারে ইটের ভাটায় বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সিন্ডিকেট হোতা খোরশেদ জমিদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাঘৈর এলাকায় শত শত একর ফসলের জমির মাটি বিক্রির কথা স্বীকার করলেও এর সাথে জড়িত নয় বলে দাবি করেন। কে জড়িত জানতে চাইলে, তিনি মো: আরিফ ও রাজা মিয়ার নাম উল্লেখ বলেন। এ ব্যাপারে ইটভাটায় মাটি বিক্রির সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য আরিফের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, খোরশেদ জমিদারের মধ্যস্থতায়ই আমরা জজ মিয়া চেয়ারম্যানের এআরভি ইটভাটাসহ পাঁচটি ভাটায় মাটি বিক্রি করেছি। চানমিয়া ও দেলোয়ার হোসেনের জমির পাওয়ার নামার অনুকূলে আমরা ওই জমির মাটি কেটে নিয়েছি। তবে তাদের পাওয়ার নামাটি ভুয়া বলে উল্লেখ করেন জমির মালিকরা ।
এ ব্যাপারে ঢাকা জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদ এ প্রতিবেদককে বলেন, কেরানীগঞ্জে ফসলি জমির মাটি যাতে ভূমিদস্যুরা কেটে নিতে না পারে এজন্য ইউএনও রীনাত ফৌজিয়াকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আর ইউএনও রীনাত ফৌজিয়ার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি অসুস্থতার কারণে ফোন রিসিভ করেননি। তবে কোন্ডা ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী রুহুল আমিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement