২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬ পৌষ ১৪৩১, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
ইজতেমা ময়দানে ট্রিপল মার্ডার

মোয়াজের ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে সোপর্দ

মূল নেতৃত্বে ছিলেন ওয়াসিফুল ইসলাম, ছেলে ওসামা মেয়ে জামাতা, আ’লীগ নেতা এরতেজা
-

টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে রাতের অন্ধকারে জুবায়েরপন্থীদের ওপর হামলা ও ট্রিপল মার্ডারের অন্যতম আসামি মাওলানা সাদ কান্ধলভী অনুসারীদের বাংলাদেশের মুখপাত্র মুফতি মোয়াজ বিন নুরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাকে গতকাল শুক্রবার বিকেলে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। আগামী রোববার এ রিমান্ড আবেদনের শুনানি হবে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) দক্ষিণ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার এন এম নাসিরুদ্দিন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে ভারতের নিজামুদ্দিন বা সাদ অনুসারীদের বাংলাদেশের পরামর্শ সভার (কার্যপরিষদ) প্রধান সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলামকে ১ নম্বর আসামি করে টঙ্গী পশ্চিম থানায় একটি মামলা করেন জুবায়েরপন্থী এস এম আলম হোসেন। মামলায় ওয়াসিফুল ইসলামের ছেলে মুফতি ওসামা ইসলাম আনু এবং মেয়ের জামাই আওয়ামী লীগ নেতা ড. কাজী এরতেজা হাসানকেও আসামি করা হয়েছে। মামলায় চিহ্নিত মতে মোট ২৯ জনকে এজাহার নামীয় ও অজ্ঞাত আরো কয়েকশ সাদ অনুসারীকে আসামি করা হয়। গ্রেফতার মুফতি মোয়াজ বিন নুর ওই মামলার ৫ নম্বর আসামি। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের টঙ্গী পশ্চিম থানার অফিসার ইনসচার্জ (ওসি) ইস্কান্দার হাবিবুর রহমান জানান, গ্রেফতার মোয়াজ বিন নুর (৪০) উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের মরহুম নুর মোহাম্মদের ছেলে। মামলার পরপরই মোয়াজ বিন নূরকে রাজধানীর উত্তরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়।

মামলায় এজাহার নামীয় চিহ্নিত আসামিরা হলেন- ঢাকার ধানমন্ডি এলাকার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম, খুলনার বাটিয়াঘাটা উপজেলার বড় কড়িয়া গ্রামের মনসুর রহমানের ছেলে আব্দুল্লাহ মনসুর, ধানমন্ডি এলাকার সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলামের ছেলে ওসামা ইসলাম আনু, একই এলাকার ড. কাজী এরতেজা হাসান, উত্তরা এলাকার মৃত নূর মোহাম্মদের ছেলে মোয়াজ বিন নূর, সাভারের জিয়া বিন কাশেম, তুরাগ থানা (বেলাল মসজিদ) এলাকার আজিমুদ্দিন, সাভারের সৈয়দ আনোয়ার আব্দুল্লাহ, মুগদা (বড় মসজিদ) এলাকার শফিউল্লাহ, কক্সবাজারের ডুলাহাজরা এলাকার মৃত মাওলানা মোজাম্মেলুল হকের ছেলে আনাস, মোহাম্মদপুর এলাকার আব্দুল্লাহ শাকিল, কাকরাইল এলাকার রেজা আরিফ, উত্তরা পশ্চিম থানার (সেক্টর-৯) আব্দুল হান্নান, একই থানার (সেক্টর-১১) রেজাউল করিম তরফদার, তুরাগ (বেলাল মসজিদ) এলাকার মুনির বিন ইউসুফ, ঢাকার সায়েম, হাজী বশির সিকদার, কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার চন্দনপুর গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে মনির হোসেন, ঢাকায় মীরপুর এলাকার প্রকৌশলী মুহিবুল্লাহ, পল্লবী এলাকার আজিজুল হকের ছেলে আতাউর রহমান, এলিফ্যান্ট রোড এলাকার তানভীর, তুরাগের ভাটুলিয়া এলাকার মৃত ওয়াজ উদ্দিনের ছেলে বাবুল হোসেন, একই থানা এলাকার প্রকৌশলী আবুল বশর, প্রকৌশলী রেজনুর রহমান, উত্তরার (সেক্টর-১০) মৃত ফজলুল হক সিকদারের ছেলে নাসির উদ্দিন সিকদার, ড. আব্দুস সালাম, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ওয়াসি উদ্দিন, রাজধানীর মীরপুর এলাকার মিজান, তুরাগ (বেলাল মসজিদ) এলাকার শাহাদাতসহ কয়েকশ’ জন ।

মামলার এজাহারে বাদি উল্লেখ করেন, উল্লেখিত আসামিরা মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারী। গত ৪ ও ৭ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমায় বাধা দিয়ে ইসলামের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য চেষ্টা করে। তারা সরকারকে বিব্রত করার উদ্দেশ্যে সরকারি সিদ্ধান্ত বহির্ভূত আগামী ২০ থেকে ২৪ ডিসেম্বর টঙ্গী ময়দানে সাদপন্থীদের জোড় করার মর্মে ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিকমাধ্যমে প্রোপাগান্ডা চালায়। মামলার প্রধান আসামি সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম তার সই করা চিঠির মাধ্যমে সারা দেশের সাদপন্থীদের জানান আগামী ২০ থেকে ২৪ ডিসেম্বর টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা ময়দানেই পুরনোদের জোড় হবে। ওই চিঠিতে পুরনো সাথীদের সাথে মোনাসেব সাথীদেরও নিয়ে আসে এবং তাদের সাথে যেন টর্চলাইট ও হ্যান্ডমাইক থাকে এমন নির্দেশনা দেয়া হয়।
মামলার ২ নম্বর আসামি আব্দুল্লাহ মনসুর ফেসবুক লাইভে ঘোষণা দেন, পুরনোদের জোড়ে এবং বিশ্ব ইজতেমায় যদি মাওলানা সাদ সাহেবকে আনতে দেয়া না হয় এবং তাদের যদি টঙ্গী ময়দানে ২০ থেকে ২৪ ডিসেম্বর জোড় করতে দেয়া না হয়, তাহলে তারা সরকারের সিদ্ধান্ত মতে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব হতে দেবে না। তাদের এসব উসকানিমূলক বক্তব্যে ও নির্দেশে বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত ৩টার দিকে ঘুমন্ত ও পাহারারত শূরায়ী নেজামের সাথীদের ওপর হামলা করে। তাদের হামলায় কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্দু গ্রামের মৃত ওসমান গণির ছেলে আমিনুল ইসলাম বাচ্চু (৬৫), ফরিদপুর সদর উপজেলার কমলাপুর গ্রামের মৃত শেখ সামাদের ছেলে বেলাল হোসেন (৬০) এবং বগুড়া সদর উপজেলার ধাওয়াপাড়া গ্রামের ওমর উদ্দিনের ছেলে তাজুল ইসলাম নিহত হন।

তাবলিগের সাদপন্থীদের কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি : তাবলিগের সাদপন্থীদের সব কার্যক্রম বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা এবং খুনিদের গ্রেফতার করে বিচারের দাবিতে গতকাল রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর লোহার ব্রিজ এলাকায় এক জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। তৌহিদী জনতার ব্যানারে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব ও কামরাঙ্গীরচর জামিয়া নুরিয়া ইসলামিয়ার শিক্ষাসচিব মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজি বলেন, স্বঘোষিত বিশ্ব আমির ভারতের সাদ কান্ধলভির অন্ধ অনুসারীদের টঙ্গী এস্তেমা মাঠে মূল ধারার তাবলিগের সাথীদের ওপর সশস্ত্র আক্রমণ চালিয়ে হতাহতের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সব দ্বীনি কার্যক্রম চলবে হক্কান উলামায়ে কেরামদের তত্ত্বাবধান ও নির্দেশনায়। কিন্তু সাদপন্থী সন্ত্রাসীরা সারা বিশ্বের হক্কানি ওলামায়ে কেরামদের মতামতকে উপেক্ষা করে সর্বজন স্বীকৃত নন্দিত দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি বিগত ১৯১৮ সালে টঙ্গীর ময়দানে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে আলেম-ওলামা, মাদরাসার ছাত্র ও তাবলিগের সাথীদেরকে হতাহত করেছিল। আবার গত মঙ্গলবার রাত ৩টায় তুরাগ তীরে টঙ্গীর ময়দান দখল করতে দেশীয় অস্ত্রসহ হামলা চালিয়ে চারজন মুসল্লিকে হত্যা করেছে এবং অসংখ্য লোকজনকে আহত করেছে। তিনি অবিলম্বে নিহত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান, আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং খুনিদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক বিচার করার দাবি জানান। তিনি বলেন, সাদপন্থীরা সন্ত্রাসী তৎপরতার মাধ্যমে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাদেরকে কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, ইমাম সমাজ কামরাঙ্গীরচর থানার সভাপতি মুফতি ইলিয়াস মাদারীপুরী, মাওলানা ওমর ফারুক, মুফতি হাবিবুর রহমান, মুফতি আব্দুর রহমান বেতাগী, মাওলানা সাইফুল ইসলাম সুনামগঞ্জী, মুফতি ফয়জুল্লাহ বিন মুখতার, মাওলানা সলিমুল্লাহ খান, মুফতি আবুল হাসান কাসেমী, মুফতি আবদুস সালাম, মুফতি কামাল উদ্দিন, মুফতি হোসাইন আহমদ, মুফতি আব্দুল্লাহ আল মামুন ও মাওলানা মুসলেহ উদ্দীন প্রমুখ।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল