২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬ পৌষ ১৪৩১, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

উত্তরাঞ্চলে কর্মসংস্থানে বড় ভূমিকা রাখছে দেশবন্ধু টেক্সটাইল

শ্রমিকদের ৯৫ শতাংশই স্থানীয়
-


উত্তরাঞ্চলে কর্মসংস্থানে বড় ভূমিকা রাখছে দেশবন্ধু টেক্সটাইল। সেখানে কর্মরত শ্রমিকদের ৯৫ শতাংশই স্থানীয়। কর্মরতরা প্রাপ্য বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট। শ্রমিকদের মাসে বেতন দেয়া হচ্ছে ১২ হাজার ৮০০ টাকার বেশি। দক্ষতা অনুসারে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন পাচ্ছেন কেউ কেউ। এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রতিষ্ঠানটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
আঁখি নামে এক পোশাক শ্রমিক বলেন, আগে ঢাকার সাভারে কাজ করতাম। সেখানে ওভার টাইমসহ মোট ১৮ হাজার ৫০০ টাকা বেতন পেতাম, তা দিয়ে ঘরভাড়া ও খাওয়া-দাওয়ার পর হাতে বেশি টাকা থাকত না। কিন্তু এখানে ওভার টাইম ছাড়াই ১৪ হাজার ৩০০ টাকা পাচ্ছি। পাশেই বাড়ি হওয়ায় বাড়তি কোনো খরচ নেই বললেই চলে। ফলে পুরো টাকাই হাতে থাকে। তার চেয়ে বড় কথা নিজের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এক সাথে থাকতে পারছি। এর চেয়ে বড় কথা আর কি হতে পারে?

সাইফুল নামে এককর্মী বলেন, তিন বছর ধরে দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলসে কাজ করেছি। কাজের পরিবেশ ও কর্মকর্তাদের ব্যবহার এক কথায় অমায়িক। আগে গাজীপুরের একটি কারখানায় কাজ করতাম। এ ধরনের পরিবেশ সেখানে পাইনি। করোনার সময় কারখানা বন্ধ হওয়ায় এলাকায় চলে আসি। বাড়িতে এসেই দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলসের খবর পাই, যথাযথ নিয়ম মেনেই চাকরিতে যোগ দেই। বর্তমানে বেতন ১৯ হাজারের একটু বেশি। নিজ এলাকায় নিজের পেশার ভালো বেতনে কাজ পাওয়ায় আমি খুবই খুশি। মা-বাবা, ভাইবোন ও স্ত্রী-সন্তান সবাইকে নিয়ে ভালোভাবে দিন কাটাচ্ছি।
প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক (উৎপাদন) ইসুরু উমেশ জানান, উত্তরবঙ্গে দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলসের যাত্রা শুরু হয় ২০১৯ সালে। এটিই বর্তমানে উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় পোশাক কারখানা। চীন-বাংলাদেশ যৌথ ব্যবস্থাপনায় কারখানার উৎপাদন ও বিপণন হচ্ছে। তবে এখানকার উৎপাদিত পণ্যের ভোক্তা শতভাগ বিদেশি। উত্তরা ইপিজেডে ২৩টি কোম্পানি বিনিয়োগ করে নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর মধ্যে দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলসের মালিক-শ্রমিক ও কর্মচারীদের সম্পর্ক যেকোনো কারখানার চেয়ে অনেক ভালো। এক কথায় আদর্শ ও শান্তিপূর্ণ প্রতিষ্ঠান বলতে যা বুঝায় দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলস তার বাস্তব উদাহরণ।

তিনি আরো বলেন, গামের্ন্টস ব্যবসায় একটি বড় সমস্যা শিপমেন্ট বাতিল। তবে দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলস চালুর পর থেকে এখনো পর্যন্ত কোনো শিপমেন্ট বাতিল হয়নি। ইপিজেড ও কাস্টমস নীতিমালা মেনে সঠিক প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত পণ্য শিপমেন্ট হচ্ছে।
রফতানি কাজকে আরো সহজ করতে ইপিজেডের পাশে একটি রেল স্টেশন স্থাপনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এতে পণ্য পরিবহনের কাজ ব্যাপক সহজতর হবে।
আরেক মহাব্যবস্থাপক মো. ইব্রাহিম আকন জানান, দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলসের উৎপাদিত পণ্য শতভাগ রফতানি হয়। বর্তমানে ইউরোপের বড় দুটি দেশ এখানকার উৎপাদিত পণ্যের ভোক্তা। এর একটি হচ্ছে ইউএসএর জি-থ্রি, কসকো ও ডিকনি। অন্যটি হলো স্পেনের ম্যাঙ্গো কোম্পানি। নতুন করে আরো কয়েকটি দেশ ও কোম্পানিকে যুক্ত করার জোর চেষ্টা চলছে। এর মধ্যে ইউকের প্রাইমার্ক কোম্পানিটির সাথে আলোচনা মোটামুটি শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে যে কয়টি কোম্পানির অর্ডার রয়েছে তা ডেলিভারি দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কারখানায় বেশ কিছু আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে। অটো সেটআপ মেশিন স্থান পেয়েছে দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলে; যা দেশের হাতেগোনা কয়েকটি কারখানায় ব্যবহৃত হয়।
কারখানার হেড অব এইচআর, এডমিন অ্যান্ড কমপ্লাইন্স মো. আশরাফ উল্লাহ বলেন, দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলস বিদেশে পোশাক রফতানির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে যেমন অবদান রাখছে, তেমনই মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে বেকার সমস্যা সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের ব্যাপক হারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এক কথায় দেশবন্ধু গ্রুপের মতো কোম্পানির কারণে অতি দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, এলাকায় পোশাক শ্রমিক অহরহ থাকলেও দক্ষ কর্মীর বড় অভাব রয়েছে। কারণ গার্মেন্টে অনেক সূক্ষ্ম কাজ রয়েছে যা বাস্তবায়নে দক্ষ কর্মীর বিকল্প নেই। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এ এলাকায় সে ধরনের সুযোগ কম। ঢাকা, গাজীপুর, সাভার ও আশুলিয়া এলাকায় শত শত কারখানা থাকায় চাহিদা মতো কর্মী যখন তখন পাওয়া যায়, কিন্তু এখানে সে সুযোগ নেই। কিছু কিছু কর্মীকে বাছাই করে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কাজ চালিয়ে নেয়া হচ্ছে। তবে তা পর্যাপ্ত না। এ কারণে এখানে আরো কয়েকটি কারখানা প্রতিষ্ঠিত হলে উত্তরবঙ্গের চেহারা পাল্টে যাবে।
মার্চেন্ডাইজিং ম্যানেজার এফ এম শফিউল আজম জানান, প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে আড়াই হাজার কর্মী কাজ করছেন। দুই ভবনে মোট ৫৬টি লাইনের মধ্যে বর্তমানে ২৪টি লাইনে পুরোদমে উৎপাদন আছে। এখানে ব্যবহৃত কাঁচামাল বেশির ভাগই অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেয়া হয়। তবে কিছু কিছু ভারত ও চীন থেকে আমদানি করা হয়।

তিনি আরো জানান, বিশ্ব মহামারি করোনায় সারা দেশের সিংহভাগ কারখার বন্ধ ছিল, তখনো এ কারখানার উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়নি। বরং দেশের অর্থনীতিকে বাঁচাতে স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারি সব আইন-কানুন পরিপালন করেই উৎপাদন প্রক্রিয়া ঠিক রাখা হয়েছিল।
কর্তৃপক্ষ বলছেন দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলস শতভাগ রফতানিবান্ধব প্রতিষ্ঠান। যাতে এমব্রয়ডারি, ডেনিম গার্মেন্টস, ওয়াশিং ইউনিট এবং প্রিন্ট সুবিধা রয়েছে। প্রতিবছর এখানে এক কোটি ৭৪ লাখ ৭২ হাজার পিস ডেনিম, চিনো, কার্গো প্যান্ট, আউটওয়্যার, ফেন্সি অ্যাপারেলস উৎপাদনে সক্ষমতা রয়েছে। তবে বর্তমানে সব কয়টি লাইন চালু না থাকায় বার্ষিক উৎপাদন হচ্ছে ৬০ লাখ পিস। সর্বমোট আয়তন দুই লাখ ৭১ হাজার ২৭২ বর্গফুট। এতে ইটিপি প্ল্যান্ট ও ওয়াশিং প্ল্যান্ট সুবিধাও বাস্তবায়ন হয়েছে। দেশবন্ধু টেক্সটাইলস তার পরিবেশবান্ধব গ্রিন ফ্যাক্টরির মাধ্যমে মনোনিবেশ করেছে যা পরিবেশ গত সমস্যা নিরসন ও জ্বালানি উৎকর্ষ বাড়িয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল