ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার

দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেছেন, আমরা অসহায় মানুষের কণ্ঠস্বর হতে চাই। আমরা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। সব সময় এই লড়াই করে যাব। শুধু হাসিনা ফ্যাসিবাদ নয়, যারাই ফ্যাসিবাদী আচরণ করবে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে। আমার দেশ পত্রিকার প্রতি সবার অনেক প্রত্যাশা রয়েছে। জনগণের সেই প্রত্যাশা পূরণে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে। আমার দেশ পত্রিকার পুনঃপ্রকাশ উপলক্ষ্যে গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদুর রহমান এসব কথা বলেন। আগামীকাল রোববার থেকে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা নবযাত্রা শুরু করবে জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মিডিয়াতে একটা ইসলাম ফোবিয়া আছে। আমরা সংবাদের মাধ্যমে ইসলাম ফোবিয়া মোকাবেলা করব। বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের ওপর যে জুলুম চলছে সে বিষয়ে দৈনিক আমার দেশ সোচ্চার থাকবে বলে জানান তিনি।
পত্রিকাটির পুনঃপ্রকাশ নিয়ে মাহমুদুর রহমান বলেন, আমার দেশ প্রত্রিকা মানুষের পছন্দের পত্রিকা। ২২ তারিখ (কাল) সকালে সবার হাতে হাতে আমার দেশ পত্রিকা পৌঁছে যাবে ইনশা আল্লাহ। কারণ এটা অসহায় মানুষের কথা বলে। কেউ কেউ অপছন্দ করতে পারেন কিন্তু এটা স্বীকার করতেই হবে এই পত্রিকাটি একটা ব্র্যান্ড।

তিনি বলেন, গত ১৭ বছর হাসিনা পরিবারের বিরুদ্ধে কারো লেখার সামর্থ্য ছিল না। আমার দেশ আগেই লেখা শুরু করছিল। আমার দেশের দরজা অসহায় মানুষের জন্য সব সময় খোলা থাকবে। এটা অসহায় মানুষের কণ্ঠস্বর হবে। এটা আমাদের নতুন যাত্রা মন্তব্য করে তিনি বলেন, আপনারা আমাদের এক মাস সময় দিন। পত্রিকা শুরু করলে প্রথম মাসে অনেক ভুলভ্রান্তি হয়। আপনারা ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চলবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেকোনো ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধেই আমাদের লড়াই চলবে। এটা আমার জীবনের লাস্ট ইনিংস। এ খেলাটা আমি মিডিয়ার ফিল্ডেই খেলতে চাই।

আমার দেশ পত্রিকার মাধ্যমে ইসলামোফোবিয়া মোকাবেলা করবেন উল্লেখ করে মাহমুদুর রহমান বলেন, আমরা যথাসম্ভব সঠিক খবরটা দেয়ার চেষ্টা করব। আপনারা জানেন, হাসিনার ফ্যাসিবাদ আমলে অনেক পত্রিকা ইসলামী জঙ্গি নাটক সাজিয়েছে। বড় বড় অনেক পত্রিকায় শুধু এক পক্ষের বক্তব্য দেয়া হয়েছে। ভিক্টিমের কোনো বক্তব্য ছিল না। শুধু পুলিশ ও র‌্যাবের বক্তব্য দিয়ে মিডিয়া নিউজ করত। দুই পক্ষের বক্তব্য দেয়নি। আমি একজন সম্পাদক, কোনো পত্রিকার নাম উল্লেখ করব না।
পত্রিকার সম্পাদকীয় নীতি প্রসঙ্গে মাহমুদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশ। অথচ ফিলিস্তিন ইস্যুতে আমাদের পত্রিকাগুলোতে লেখা কম। দেশের পত্রিকাগুলো ফিলিস্তিন নিয়ে আন্তর্জাতিক পাতায় এক-দুই কলাম রাখে মাত্র। প্রথম পাতায় ফিলিস্তিনের নিউজ যায় না। আমরা কাশ্মীরে মুসলিম নির্যাতন, চীনের উইঘুরে মুসলিম নির্যাতন ও রোহিঙ্গা মুসলিমসহ সারা বিশ্বের নির্যাতিত মুসলমানদের নিয়ে লিখব।
তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে দালালির কারণে মানুষের মধ্যে পত্রিকা পড়ার অভ্যাস কমে গেছে। বড় বড় পত্রিকার সার্কুলেশন কমেছে ৫০ শতাংশ। আমরা মানুষের মধ্যে পত্রিকার প্রতি আস্থা বাড়াব। পত্রিকা হলো সমাজ-সংস্কৃতির দর্পণ। আমরা চাই, মানুষ অপেক্ষা করুক। সকালবেলা পত্রিকার জন্য অধীর আগ্রহে থাকুক। ‘আমার দেশ’ সেই পরিবেশ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবে।

সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মাহমুদুর রহমান বলেন, আমরা স্বাধীনতার কথা বলব। আমরা আগেও কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করি নাই, এখনো করব না। হাসিনার আমলে আমরা অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদের বিপক্ষে ছিলাম। আমরা কখনোই কোনো দলকে বাড়তি কাভারেজ দেই নাই। এখনো কোনো দলের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নাই। যে দল আধিপত্যের বিরুদ্ধে থাকবে, গণতন্ত্রের পক্ষে থাকবে আমরা তাদের পক্ষে থাকব।
তিনি আরও বলেন, যখন শাহবাগ আন্দোলন চলছিল, তখন সব পত্রিকায় জ্বর ছিল। শাহবাগ যে হাসিনা ও পার্শ্ববর্তী দেশের চক্রান্ত ছিল, সেটা আমার দেশ পত্রিকা বুঝতে পেরেছিল। তখন আমাদের হেডলাইন ছিল ‘শাহবাগে ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি’।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন পত্রিকাটির নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ডেপুটি চিফ রিপোর্টার বাসির জামাল। এ সময় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক কবি হাসান হাফিজ, পত্রিকাটির ব্যবস্থাপনা সম্পাদক জাহেদ চৌধুরী, কবি আবদুল হাই শিকদার, আলফাজ আনামসহ পত্রিকার অন্য সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।