১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২ পৌষ ১৪৩১, ১৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

প্রাথমিকের ৮০ শতাংশ বই ছাপার কাজ এখনো বাকি

-

- মাঠপর্যায়ে পৌঁছেছে মাত্র ১২ ভাগ
- এনসিটিবি ও প্রেসের তথ্যে গরমিল

নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে দুই সপ্তাহও বাকি নেই। কিন্তু এখনো প্রাথমিকের বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপার বাকি রয়েছে ৮০ শতাংশেরও বেশি। সূত্র মতে, গত ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাঠপর্যায়ে প্রাথমিকের পাঠ্যবই পৌঁছেছে মাত্র ১২ শতাংশ। যদিও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বলছে চতুর্থ এবং পঞ্চম শ্রেণী বাদে ১ম থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত এই তিন ক্লাসের পাঠ্যবইয়ের বেশির ভাগই মুদ্রণ হয়েছে। চতুর্থ এবং পঞ্চম এই দুই শ্রেণী বাদে নিচের দিকের তিনটি ক্লাসের ৪০ শতাংশের বেশি বই ইতোমধ্যে পাঠপর্যায়েও চলে গেছে।
এ দিকে প্রাথমিকের বিভিন্ন শ্রেণীর পাঠ্যবই মুদ্রণের দায়িত্বপ্রাপ্ত ৪১টি প্রেস থেকে যে তথ্য পাওয়া গেছে সেখানে দেখা গেছে প্রাক-প্রাথমিক, প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শ্রেণীর বই ছাপার কাজে কিছুটা অগ্রগতি থাকলেও চতুর্থ এবং পঞ্চম শ্রেণীর পাঠ্যবই মুদ্রণের কাজ শুরুই হয়নি। ফলে প্রাথমিকের প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত সব ক্লাস মিলে পাঠ্যবই মুদ্রণের যে হিসাব সেখানে গড় হিসেবে মাত্র ১৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আর মাঠপর্যায়ে বই পৌঁছেছে মাত্র ১০ শতাংশের মতো। যদিও প্রাথমিকের পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিতে হলে প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত সব বই একসাথেই জেলা-উপজেলায় অর্থাৎ স্কুলে স্কুলে ১ জানুয়ারির আগেই পৌঁছাতে হবে। অন্যথায় শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বছরের প্রথম দিনে নতুন বই তুলে দেয়া সম্ভব হবে না।

সূত্র জানায়, এনসিটিবি এবং প্রেস মালিকদের দেয়া তথ্যে ব্যাপক গরমিলের কারণই হচ্ছে এনসিটিবি শুধুমাত্র প্রথম দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শ্রেণীর বইয়ের হিসেব করেই তথ্য দিয়েছে। অন্য দিকে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের দায়িত্বে থাকা প্রেস মালিকরা প্রাথমিকের সব শ্রেণীর (১ম শ্রেণী থেকে ৫ম শ্রেণী) মোট বই এবং এর কত শতাংশ ছাপা হয়েছে বা পাঠপর্যায়ে কত শতাংশ পৌঁছেছে সেই তথ্য জানিয়েছে। প্রাথমিকের পাঠ্যবই ছাপার পর সেই বইয়ের মান যথাযথ পর্যায়ে রয়েছে কি না তা পরিদর্শনের দায়িত্ব পালন করে তৃতীয় একটি কোম্পানি। পাঠ্যবই ছাপার পর মান যাচাইয়ের এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় পিডিআই (প্রি-ডেলিভারি ইন্সপেকশন)। বেসরকারি একটি ঠিকাদারি কোম্পানি এই কাজে নিয়োজিত থাকে। এবারের প্রাথমিকের পাঠ্যবই যে হারে ছাপার কাজে ধীরগতি সেখানে পিডিআইর কাজেও ধীরগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। ফলে বই মাঠপর্যায়ে পৌঁছাতেও বিলম্ব হচ্ছে।
মুদ্রণের কাজে নিয়োজিত একাধিক সূত্র জানায়, ২০২৫ সালের জন্য প্রাথমিকের জন্য মোট পাঠ্যবই ছাপা হবে ৯ কোটি ৩৫ লাখ ৬৫ হাজার ৬৪৭ কপি। এর মধ্যে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঠ্যবই মুদ্রণের পর পিডিআই করা হয়েছে মাত্র এক কোটি ৬৪ লাখ ১১ হাজার ৮৩৫ কপি। অর্থাৎ পিডিআইর এই হার ছিল মাত্র ১৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এর মধ্যে আবার পাঠপর্যায়ে বই পৌঁছেছে মাত্র ১২ শতাংশ। এই হারও অন্যান্য বছরের তুলনায় সন্তোষজনক নয়।

এ দিকে এনসিটিবির দেয়া তথ্য মতে, প্রাথমিক স্তরের প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শ্রেণীর ৭০টি লটের মোট বই সংখ্যা তিন কোটি ৯ লাখ ৭৪ হাজার ১৪ কপি এর মধ্যে এ পর্যন্ত মুদ্রিত বইয়ের সংখ্যা দুই কোটি ৩৫ লাখ ৭৩ হাজার ৬০৭ কপি। আর মুদ্রিত বইয়ের মধ্যে পিডিআইকৃত বইয়ের সংখ্যা এক কোটি ৬৪ লাখ ১১ হাজার ৮৩৫ কপি। শতকরা হিসেবে পিডিআইয়ের হার ৫৩ শতাংশ। একই সাথে ইতোমধ্যে সরবরাহকৃত বইয়ের সংখ্যা এক কোটি ২৯ লাখ ৫৭ হাজার ৩৬৪ কপি। শতকরা হিসেবে এই হার ৪১ দশমিক ৮৩ শতাংশ।
প্রাথমিকের পাঠ্যবই ছাপা এবং মাঠপর্যায়ে সরবরাহের বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান নয়া দিগন্ত বলেন, চতুর্থ এবং পঞ্চম শ্রেণীর পাঠবই মুদ্রণে কিছুটা ধীরগতি থাকলেও প্রথম দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শ্রেণীর পাঠ্যবই মুদ্রণ এবং সরবরাহের চিত্র এখনো সন্তোষজনক। এ ছাড়া আমাদের হাতে যে সময় আছে তাতে আশা করছি ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহের মধ্যেই প্রাথমিকের সব শ্রেণীর সব বই মাঠ পর্যায়ে পৌঁছানো সম্ভব হবে। অবশ্য একটি কথা সবাই স্বীকার করবেন যে, একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে এ বছর একেবারে কম সময় নিয়েই পাঠ্যবই মুদ্রণ করতে হচ্ছে। তারপরও আমরা একটি টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে সবার সহযোগিতা নিয়েই এ বছরের কাজটি তুলতে পারব বলে আশা করছি। অন্য দিকে চলতি বছরে মাধ্যমিকের বই সরবরাহে কিছুটা ধীরগতি থাকলেও প্রাথমিকের সব শিক্ষার্থীই নতুন বছরের শুরুতে নতুন পাঠ্যবই হাতে পাবে।


আরো সংবাদ



premium cement