পুরোদমে চালু হচ্ছে চট্টগ্রামের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
মোটরসাইকেল ও ট্রেইলর চলাচলে নিষেধাজ্ঞা- নূরুল মোস্তফা কাজী চট্টগ্রাম ব্যুরো
- ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৩২
মোটরসাইকেল ও ট্রেইলর চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে পুরোদমে যানবাহন চলাচল শুরু হচ্ছে সোয়া চার হাজার কোটি টাকার চট্টগ্রামের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে চারটি অস্থায়ী বুথ বসিয়ে টোল আদায় শুরু করছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। জনগুরুত্ব বিবেচনায় ১৫টি র্যাম্প থেকে সরে এসে কমিয়ে ৯টি র্যাম্প বাস্তবায়ন করবে সংস্থাটি। তবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলেও কোনো র্যাম্পই এখন পর্যন্ত যানবাহন চলাচলের জন্য প্রস্তুত নয়।
সিডিএ সূত্র জানিয়েছে, প্রথম দফায় টোল হার বেশি নির্ধারণ করা হলেও সরকার পরিবর্তনের পর তা সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা হয়েছে। গত ২৯ নভেম্বর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কারিগরি দিক বিবেচনায় মোটরসাইকেল ও ট্রেইলর চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ১০ প্রকারের যানবাহনের টোলের হার নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে জিইসি বা সিআরবি বা আগ্রাবাদ থেকে ফ্লাইওভারে ওঠে চট্টগ্রাম ইপিজেড, সিমেন্ট ক্রসিং, কেইপিজেড ও সি-বিচগামী সিএনজি ট্যাক্সি-৩০ টাকা, কার-৮০ টাকা, জিপ-১০০ টাকা, মাইক্রোবাস-১০০ টাকা, পিকআপ-১৫০ টাকা, মিনিবাস ২০০ টাকা, বাস-২৮০ টাকা, ট্রাক (চার চাকা)-২০০ টাকা, ট্রাক (ছয় চাকা)-৩০০ টাকা এবং কাভার্ড ভ্যানকে ৪৫০ টাকা টোল গুনতে হবে। বিপরীতমুখী সি-বিচ, কেইপিজেড, সিমেন্ট ক্রসিং, চট্টগ্রাম ইপিজেড থেকে উঠে নিমতলা, আগ্রাবাদ, টাইগারপাস বা লালখান বাজারে নামলেও একই হারে টোল গুনতে হবে। তবে জিইসি বা টাইগারপাস থেকে উঠে আগ্রাবাদ বা ফকিরহাট নামার গাড়িগুলোকে এবং বিপরীতমুখী নিমতলা বা আগ্রাবাদ এক্সেস রোড থেকে উঠে লালখান বাজার বা টাইগ্রারপাস নামার গাড়িগুলোর মধ্যে ছয় চাকার ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে এবং এই অংশে সিএনজি ট্যাক্সি-২০ টাকা, কার-৫০ টাকা, জিপ-৭০ টাকা, মাইক্রোবাস-৯০ টাকা, পিকআপ-১৩০ টাকা, মিনিবাস ১৮০ টাকা, বাস-২৫০ টাকা ও ট্রাক(চার চাকা)-১৮০ টাকা টোল গুনতে হবে।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় সি-বিচ থেকে লালখান বাজার বা টাইগারপাস এবং বায়েজিদ বা মুরাদপুর থেকে মুরাদপুর ফ্লাইওভার ব্যবহার করে সি-বিচ পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হারে টোল আদায় আগামী ১৯ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে। সি-বিচ প্রান্তে স্থাপিত চারটি অস্থায়ী বুথের মাধ্যমে টোল আদায় করা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প ব্যয় হচ্ছে চার হাজার ২৯৮ কোটি টাকা। এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ শেষে তা মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ের মাধ্যমে সরকারের ঋণের টাকা পরিশোধের নির্দেশনা রয়েছে। এর আগে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে সিডিএর টোল প্রস্তাবের ওপর অনুষ্ঠিত পর্যালোচনা সভায় টোলের হার নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে গত ২৪ সেপ্টেম্বর টোলের হার নির্ধারণ নিয়ে আবার পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সিডিএ বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করে যৌক্তিকতাসহ টোলের হার পুনর্নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত হয়। মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তের আলোকে টোল আদায়ের হার যৌক্তিকভাবে পুনর্নির্ধারণের জন্য ২৮ অক্টোবর সিডিএর ৪৬২তম বোর্ড সভায় নতুন করে টোল প্রস্তাব করা হয়, যা সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন হয়।
টোলের হার কমানোর বিষয়ে সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মো: মাহফুজুর রহমান বলেন, প্রথম দফায়ও তারা টোলের সহনীয়ভাবে নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন; কিন্তু মন্ত্রণালয় সিডিএর প্রস্তাবের চেয়ে একটু বেশি নির্ধারণ করে টোলের হার চূড়ান্ত করেছিল। এখন নতুন সরকারের আমলে সহনীয় টোলের হার নির্ধারণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। টোল আদায় কার্যক্রম শুরু হলে এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি চলাচলে শৃঙ্খলা আসবে বলেও তিনি জানান। প্রকল্প পরিচালক বলেন, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান যাচাই-বাছাই করে ১৫টি র্যাম্পের স্থান নির্ধারণ করেছিল। সে অনুযায়ী নকশা চূড়ান্ত করা হয়। তবে বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থা ছয়টি র্যাম্প নির্মাণের ব্যাপারে আপত্তি দিয়েছিল।
এ দিকে বিভিন্ন মহলের আপত্তির মুখে চূড়ান্ত হওয়া ১৫টি র্যাম্পের মধ্যে ছয়টি র্যাম্প নির্মাণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিডিএ। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নগরীর ফুসফুস খ্যাত টাইগারপাসের সিআরবিমুখী দ্বিতল সড়কের পলোগ্রাউন্ড থেকে পতেঙ্গামুখী র্যাম্প; মূল এক্সপ্রেসওয়ে থেকে আগ্রবাদে জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরের সামনে নামার র্যাম্প ও আগ্রাবাদ এক্সেস রোডে ওঠানামার দু’টি র্যাম্প, সিমেন্ট ক্রসিং মোড় এলাকায় নামার র্যাম্প।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো: নুরুল করিম নয়া দিগন্তকে বলেন, ১৫টি র্যাম্পের কথা ছিল। আমরা চট্টগ্রামবাসীর দাবিকে আমলে নিয়ে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে স্টাডি করে এবং বোর্ড মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছু র্যাম্প আমরা বাদ দিয়েছি। তবে প্রবিশন রাখা হচ্ছে, যদি চট্টগ্রামবাসী কখনো চায় ওই র্যাম্পগুলো চালু করতে পারবে। যে র্যাম্পগুলো বাদ দেয়া হচ্ছে সেসব এলাকায় কোনো প্ল্যান দেয়া হবে না। জিইসি’র র্যাম্পটি নগরবাসীর জন্য জরুরি বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তা না হলে পুরো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সুফল মিলবে না জানিয়ে তিনি বলেন, লালখান বাজারে ইউ লুপ থাকায় সেখানে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ওঠা-নামা উভয় সুবিধা থাকলে দুর্ঘটনা ঘটবে, ট্রাফিক বিভাগ থেকেও এ বিষয়ে আপত্তি রয়েছে বলে তিনি জানান। সবাইকে রাজি করিয়ে কোনো কাজ করা যায় না মন্তব্য করে তিনি বলেন, যেহেতু লালখান বাজার অংশে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহন ওঠার সুযোগ নেই সে জন্য জিইসি র্যাম্পের মাধ্যমে কার্যত মুরাদপুর ফ্লাইওভার ও বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের সাথে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। একই সাথে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কারণে পতেঙ্গা প্রান্তে এবং জিইসি মোড়ে যাতে যানজট সৃষ্টি না হয় সে বিষয়েও পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে সিডিএ চেয়ারম্যান জানান।
সিডিএ চেয়ারম্যান জানান, টোল কালেকশনের সাথে কোনো একটি ব্যাংককে সংযুক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে, যাতে সংগৃহীত টোল সরাসরি ব্যাংকে চলে যায়।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে তিন হাজার ২৫০ কোটি টাকার এই প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। প্রকল্প অনুমোদনের প্রায় দুই বছর পর ২০১৯ সালে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ শুরু হয়। তবে প্রথম থেকেই নকশা ও নির্মাণকাজ নিয়ে ধাপে ধাপে জটিলতা দেখা দেয়। প্রথমে নগরের লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করার কথা ছিল। তবে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বিমানবন্দর পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে বাধা দেয়। এরপর পতেঙ্গায় নামিয়ে দেয়া হয় একটি প্রান্ত। নির্মাণকাজ চলাকালে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং নগর পুলিশের পক্ষ থেকেও আপত্তি ছিল। বিশেষ করে নগরের সল্টগোলা থেকে বারিক বিল্ডিং মোড় পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ের নকশা নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের তীব্র বাধার মুখে দফায় দফায় বৈঠক করে তা সংশোধন করা হয়। এসব শেষ করে প্রকল্প সংশোধন করা হলেও নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। শেষ পর্যন্ত প্রকল্প ব্যয় দাঁড়িয়েছে চার হাজার ২৯৮ কোটি টাকা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা