বছর শেষে আরো অবনতির পথে পুঁজিবাজার
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫৬
- মূলধন কমেছে ১১ হাজার ২০৮ কোটি টাকা
- সপ্তাহজুড়ে ছিল ৬৯ শতাংশ বিক্রির চাপে
অব্যাহত দরপতনে বর্তমানে দেশের পুঁজিবাজারের অবস্থা এক বছর আগের চেয়ে আরো অবনতির পথে। গত সপ্তাহে এই চিত্র বাজারে প্রকাশ পেয়েছে। বাজারের এই ধারাবাহিক চরম অবনতিতে বিনিয়োগকারীরা শঙ্কিত। সপ্তাহজুড়ে গড়ে বিক্রির চাপ ছিল ৬৯ শতাংশ। ক্রেতা মাত্র ৩১ শতাংশ। ঝুঁকি নিয়ে কেউ শেয়ার কিনতে চাচ্ছেন না। ডিএসইর বাজারমূলধন কমেছে এক সপ্তাহে এক দশমিক ৬৯ শতাংশ বা এগারো হাজার ২০৮ কোটি টাকা। এ দিকে বিদায়ী সপ্তাহে বাজারমূলধনের অংশীদারিত্বে ব্যাংকিং খাত ১৯.৬ শতাংশ এবং ফার্মসিউটিক্যালস খাতের ১৬.২ শতাংশ। আর ব্লক মার্কেটে ১০ কোম্পানির ১০৫ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে।
ডিএসইর সাপ্তাহিক তথ্য থেকে বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসইতে বিদায়ী সপ্তাহে পতনের চাপে ক্লান্ত ছিল। ফলে সূচক হারানোর সাথে সাথে বাজার মূলধন ১.৬৯ শতাংশ বা ১১ হাজার ২০৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা কমেছে। বিদায়ী সপ্তাহে লেনদেনে অংশ নেয়া ৪১৩টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ৭৬টির বা ১৯.৩৮ শতাংশের, দর পতনের শিকার ২৯৩টির বা ৭৪.৭৪ শতাংশ, দর অপরিবর্তিত ছিল ২৩টির এবং ২১টি লেনদেনে অংশ নেয়নি। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স সপ্তাহ শেষে ৯১.৩৩ পয়েন্ট হারিয়ে এখন পাঁচ হাজার ১০৫.৪৩ পয়েন্টে নেমেছে। আর ডিএসই-৩০ সূচক ৩০.০২ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৮৮১.৯০ পয়েন্টে, শরিয়াহ সূচক ২৩.৯২ পয়েন্ট কমে এক হাজার ১৪০.০৫ পয়েন্টে নেমেছে। তবে ডিএসএমই সূচক আরো ১৪.৯৩ পয়েন্ট বেড়ে এখন এক হাজার ১১০.৮৯ পয়েন্টে উঠে এসেছে। টাকায় গড় লেনদেন গত সপ্তাহে ২৭.৪৯ শতাংশ বা ১২২ কোটি ১৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা কমেছে। যার আগের সপ্তাহের থেকে দ্বিগুণ। সদ্য বিদায়ী সপ্তাহে ৩২২ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার লেনদেন হয়েছে, যেখানে আগের সপ্তাহে হয়েছিল ৪৪৪ কোটি ৩৪ লাখ ৯০ হাজার টাকার। আর পুরো সপ্তাহে গড়ে ১২ কোটি ৯২ লাখ ৪০ হাজারটি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড বেচাকেনার জায়গায় আগের সপ্তাহে হয়েছিল ১৯ কোটি ১৯ লাখ ৩০ হাজারটি। ফলে কমেছে ৩২.৬৬ শতাংশ বা ছয় কোটি ২৬ লাখ ৭০ হাজারটি।
ডিএসইতে সদ্য বিদায়ী সপ্তাহে মোট লেনদেন কমেছে আগের দ্বিগুণ। গেলো সপ্তাহে ৬১০ কোটি ৮২ লাখ ১০ হাজার টাকা লেনদেন কম হয়েছে। আগের সপ্তাহের দুই হাজার ২২১ কোটি ৭৪ লাখ ৭০ হাজার টাকার বিপরীতে সদ্য বিদায়ী সপ্তাহে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৬১০ কোটি ৯২ লাখ ৬০ হাজার টাকার। আর মোট শেয়ার বেচাকেনা কমেছে ৩১ কোটি ৩৫ লাখ। আগের সপ্তাহে যেখানে ৯৫ কোটি ৯৬ লাখ ৬০ হাজারটি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড বেচাকেনা হয়েছিল, সেখানে বিদায়ী সপ্তাহে হয়েছে ৬৪ কোটি ৬১ লাখ ৯০ হাজারটি। ব্লক মার্কেটে লেনদেন বেড়ে ১২০ কোটি ৬৯ লাখ ৫০ হাজার টাকার এবং এসএমইতে কমে ৫৪ কোটি ৪৯ লাখ ৭০ হাজার টাকার বেচাকেনা হয়েছে। ডিএসইর বাজারমূলধন ১১ হাজার ২০৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা কমে এখন ছয় লাখ ৫২ হাজার ৪৯৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকায় নেমেছে।
সাপ্তাহিক দর বৃদ্ধিতে ১০ কোম্পানি
এ দিকে ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনার তথ্য বলছে, সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ২৭.৮৮ শতাংশ। দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে, এইচ আর টেক্সটাইলের ১৭.২৩ শতাংশ, অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেনের ১৭.০৫ শতাংশ, সাইহাম কটনের ১৫.২৮ শতাংশ, মেট্রো স্পিনিংয়ের ১৫.০০ শতাংশ, সোনারগাঁও টেক্সটাইলের ১৩.৫৪ শতাংশ, হামি ইন্ডাস্ট্রিজের ১২.৫২ শতাংশ, লুব-রেফ বাংলাদেশের ১১.৭৬ শতাংশ, সাইহাম টেক্সটাইলের ৯.১৫ শতাংশ এবং আমরা টেকনোলজিসের ৮.৬২ শতাংশ দর বেড়েছে।
সাপ্তাহিক দর পতনের শীর্ষ ১০ কোম্পানি
সবচেয়ে বেশি দর কমেছে প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের। সপ্তাহজুড়ে ফান্ডটির ইউনিট দর ২৩.৮২ শতাংশ কমেছে। দর পতনের শীর্ষ তালিকায় স্থান পাওয়া অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে, খান ব্রাদার্সের ১৩.১২ শতাংশ, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টেসের ১১.৭১ শতাংশ, ইসলামী ব্যাংকের ১১.৪৬ শতাংশ, অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের ১১.০০ শতাংশ, জেমিনি সি ফুডের ১০.৩৭ শতাংশ, ফাইন ফুডসের ১০.২৭ শতাংশ, মিডল্যান্ড ব্যাংকের ৯.৬১ শতাংশ, জেনেক্স ইনফোসিসের ৯.৪৬ শতাংশ এবং মনোস্পুল পেপারের ৯.০১ শতাংশ শেয়ার দর কমেছে।
লেনদেনের শীর্ষ ১০ কোম্পানি
সপ্তাহে লেনদেন তালিকার শীর্ষস্থান দখল করেছে ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেড। সপ্তাহজুড়ে প্রতিদিন গড়ে ২২ কোটি ২১ লাখ ১০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা ছিল ডিএসইর মোট লেনদেনের ৬.৮৯ শতাংশ বলে ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনায় এই তথ্য জানা গেছে। লেনদেনের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ড্রাগন সোয়েটার। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির প্রতিদিন গড়ে ৮ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা ছিল ডিএসইর লেনদেনের ২.৬০ শতাংশ। তৃতীয় স্থানে রয়েছে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির প্রতিদিন গড়ে ৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা ছিল ডিএসইর লেনদেনের ২.৩৮ শতাংশ। এ ছাড়া প্রতিদিন গড় লেনদেনে সাপ্তাহিক শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে লাভেলো আইসক্রিমের ৭ কোটি ২৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা, সাইহাম কটনের ৭ কোটি ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা, এনআরবি ব্যাংকের ৬ কোটি ৮৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা, বেক্সিমকো ফার্মার ৬ কোটি ৫২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের ৫ লাখ ৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা, জেনেক্স ইনফোসিসের ৫ কোটি ৩ হাজার টাকা এবং স্কয়ার ফার্মার ৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
ব্লক মার্কেটে ১০ কোম্পানির ১০৫ কোটি টাকার ট্রেড
এ দিকে বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইর ব্লক মার্কেটে দশ কোম্পানির সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে ১০ কোম্পানির। কোম্পানিগুলো হলো- ওরিয়ন ইনফিউশন, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, আল আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, ফাইন ফুডস, লাভেলো আইস্ক্রিম, রিলায়েন্স ওয়ান, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, আইডিএলসি, জিপিএইচ ইস্পাত ও বিচ হ্যাচারি। ডিএসইতে ব্লক মার্কেটে এই ১০ কোম্পানির মোট ১০৫ কোটি ১৮ লাখ ১০ হাজার টাকা বলে ডিএসইর দেয়া তথ্য থেকে জানা গেছে। আর কোম্পানিগুলোর মধ্যে ব্লক মার্কেটে ওরিয়ন ইনফিউশনের সবচেয়ে বেশি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। সপ্তাহজুড়ে ব্লক মার্কেটে কোম্পানিটির ৬৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। বিদায়ী সপ্তাহে কোম্পানিটির সর্বশেষ দর ছিল ৩২০ টাকা ২০ পয়সা। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ১৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। বিদায়ী সপ্তাহে কোম্পানিটির সর্বশেষ দর ছিল ১২ টাকা। আল আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ৪ কোটি ২৭ লাখ ৩০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। বিদায়ী সপ্তাহে কোম্পানিটির সর্বশেষ দর ছিল ১৯ টাকা ৩০ পয়সা। সপ্তাহজুড়ে ব্লক মার্কেটে লেনদেন হওয়া অন্যান্য সাতটি কোম্পানির মধ্যে রয়েছে : বিচ হ্যাচারির ৪ কোটি ২৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা, লাভেলো আইস্ক্রিমের ৩ কোটি ৪২ লাখ টাকা, রিলায়েন্স ওয়ানের ২ কোটি ৭৩ লাখ ১০ হাজার টাকা, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের ২ কোটি ৩৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা, আইডিএলসির ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা, জিপিএইচ ইস্পাতের ১ কোটি ৪৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং বিচ হ্যাচারির ১ কোটি ৮ লাখ টাকার শেয়ার।
চট্টগ্রাম স্টকে সূচকে পতনের সেঞ্চুরি
সিএসইর দেয়া সাপ্তাহিক তথ্য বলছে, সূচক পতনে সেঞ্চুরি ছিল বিদায়ী সপ্তাহে চট্টগ্রাম স্টক মার্কেটে। লেনদেনের পরিস্থিতি চরম অবনতির দিকে। সপ্তাহান্তে পরিস্থিতির উন্নতি নেই। মূল্যসূচক সিএসই-৩০ সূচক ১৪৩.৯৮ পয়েন্ট কমে ১১ হাজার ৭৫৫.৯২ পয়েন্টে, সিএএসপিআই ২৭৭.১০ পয়েন্ট কমে ১৪ হাজার ৩০৪ পয়েন্টে ও সিএসসিএক্স ১৬৯.২৯ পয়েন্ট কমে ৮ হাজার ৭০২ পয়েন্টে নেমে এসেছে। দর বৃদ্ধির চেয়ে দর পতনের কোম্পানির সংখ্যা দ্বিগুণ। শেয়ার বেচাকেনাও কম। এক কোটি ৩২ লাখ ৩৫ হাজার ৯০টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট ২৬ কোটি ৯৬ লাখ ৫১ হাজার ৬৪৫ টাকা বাজারমূল্যে, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় প্রায় এক কোটি টাকা কম। লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানির সংখ্যাও কমেছে। ৩১৫টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ৬৭টির বা ২১.২৬ শতাংশ, দর পতনের শিকার ২১৩টি বা ৬৭.৬১ শতাংশ এবং দর অপরিবর্তিত ৩৩টির। বাজারমূলধনে অংশীদারিত্ব এ শ্রেণীর কোম্পানির বেড়ে ৭১.৮৫ শতাংশ, বি শ্রেণীর কমে ১৬.৫১ শতাংশ, এন শ্রেণীর ৪.৪৮ শতাংশ এবং জেড শ্রেণীর ৭.১৬ শতাংশ।
বাজার পর্যালোচনায় প্রাতিষ্ঠানিক বিশ্লেষক রয়্যাল ক্যাপিটাল বলছে, বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী বিক্রির চাপে রেখেছিল পুঁজিবাজারকে। এখানে এ শ্রেণীর কোম্পানির বাজারমূলধনে অংশীদারিত্ব ছিল ৮৬.৮০ শতাংশ, বি শ্রেণীর ৮.৬ শতাংশ, এন শ্রেণীর ১.০ শতাংশ এবং জেড শ্রেণীর সাড়ে তিন শথাংশ। বেচা ও কেনা দুটোতেই ব্যাংকিং খাতের শেয়ারের চাপ বেশি ছিল।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা