১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

কর্মহীনতায় চরম কষ্টে জামালপুরের অতিদরিদ্র শ্রমিকরা

-

চলে যাচ্ছে ডিসেম্বর মাস। শেষ হয়ে আসছে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের অর্ধেক সময়। এখনো আসেনি সরকারের অতিদরিদ্রদের জন্য খণ্ডকালীন কর্মস্থান প্রকল্প কর্মসৃজন কর্মসূচি (ইজিপিপি), গ্রামীণ সামাজিক খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচি টেস্ট রিলিফ (টিআর), গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচি ও কাজের বিনিময়ে টাকা(কাবিটা’র) বরাদ্দ। ফলে কাজের অভাবে কর্মহীন অবস্থায় চরম মানবেতর জীবনযাপন করছে বন্যা ও নদীভাঙনকবলিত জেলা জামালপুরের অতিদরিদ্র শ্রমিক ও শ্রমজীবী কয়েক লাখ মানুষ।
জামালপুরের সাতটি উপজেলার বুকচিড়ে প্রবাহিত হচ্ছে দেশের দু’টি জাতীয় নদনদী যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রসহ অন্তত ১০টি নদনদী। যে কারণে প্রতি বছর বন্যা ও নদীভাঙনের শিকার হন এই জেলার ২৬ লাখ মানুষ।
এ বছরও এর ব্যতিক্রম হয়নি। হয়েছে দুই দফা ভয়াবহ বন্যা। পাশাপাশি নদীভাঙনে নিঃস্ব হয়েছেন কয়েক হাজার পরিবার। বন্যার পানির স্রোতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার গ্রামীণ কাঁচা সড়ক। বন্যা পরবর্তী সময় বিশেষ করে সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাস কাজের অভাবে কর্মহীন হয়ে পড়েন এ অঞ্চলের অতিদরিদ্র ও দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষ। বন্যায় কাঁচা রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় চলাচল অনুপয়োগী হয়ে পড়েছে গ্রামীণ সড়ক।
সরকার প্রতিবছর এ সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে অতিদরিদ্রদের জন্য খণ্ডকালীন কর্মস্থান প্রকল্প কর্মসৃজন কর্মসূচি (ইজিপিপি), সামাজিক-গ্রামীণ খাদ্য নিরাপত্তার জন্য টেস্ট রিলিফ (টিআর) কর্মসূচি, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন বা সংস্কারের জন্য কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসুচি ও কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) কর্মসূচির বরাদ্দ দিয়ে থাকেন।

এসব কর্মসূচির মাধ্যমে খন্ডকালিন কাজের সুযোগ পেয়ে থাকেন জেলার অন্তত ৫ লাখ অতিদরিদ্র এবং দরিদ্র শ্রমিক। কিন্তু চলতি অর্থ বছরের অর্ধেক সময় চলে গেলেও কোনো প্রকার বরাদ্দ আসেনি। এতে চরম কষ্টে রয়েছেন জামালপুরের বন্যা ও নদীভাঙনকবলিত অতিদরিদ্র ও দরিদ্র কয়েক লাখ মানুষ।
জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ শাখা সূত্রে জানায়, জেলায় কর্মসৃজন কর্মসুচি (ইজিপিপি) প্রকল্পের তালিকাভুক্ত ২০ হাজার ৬৮০ জন অতিদরিদ্র নারী ও পুরুষ শ্রমিক রয়েছে। এর মধ্যে বকশিগঞ্জ উপজেলায় ২ হাজার ১৮৪ জন, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা- ২ হাজার ৮৫৩ জন, ইসলামপুর উপজেলায় ২ হাজার ৮১৪ জন, মেলান্দহ উপজেলায় ২ হাজার ৮৮৪ জন, মাদারগঞ্জ উপজেলায় ২ হাজার ৮৭৩ জন, সরিষাবাড়ী উপজেলায় ২ হাজার ২৯৭ জন এবং জামালপুর সদর উপজেলায় ৪ হাজার ৭৭৫ জন অতিদরিদ্র শ্রমিক রয়েছে। জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন শাখা সূত্র জানায়, সাধারণ যে সকল বরাদ্দ সেগুলো সাধারণ নিয়মেই আসে। আর বিশেষ বরাদ্দ আসে মন্ত্রণালয়ের বিশেষ প্রকল্পের মাধ্যম দিয়ে। চলতি অর্থবছর এখনো কোনো প্রকল্পের বরাদ্দ আসেনি।
সামাজিক খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন ও সামাজিক খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত কর্মহীন দরিদ্র মানুষদের কর্মস্থান সৃষ্টির জন্য কর্মসৃজন কর্মসূচি (ইজিপিপি), সামাজিক গ্রামীণ খাদ্য নিরাপত্তার টেস্ট রিলিফ (টিআর) কর্মসূচি, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন বা সংস্কার কাজের জন্য কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসুচি ও কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) কর্মসূচির অর্থ বরাদ্দ দ্রুত ছাড় করা উচিত বলে মনে করেন সচেতন মহল।
জামালপুর জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও মানবাধিকার কর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প সমূহের অর্থ বরাদ্দ ছাড় না করায় কাজের অভাবে চরম কষ্টের মধ্যে রয়েছে সমাজের অতিদরিদ্র ও দরিদ্র শ্রেণির মানুষ।
জামালপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো: আলমগীর হোসেন বলেন, ২০২৪-২৫ নতুন অর্থবছরে এখনো কোন বরাদ্দ আসেনি। বরাদ্দ আসলে দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নের প্রস্তুতি রেখেছে তার দফতর।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement