১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ

-

- রাতে ঢাকায় কনকনে শীত
- চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০.২ ডিগ্রি
- তীব্র ঠাণ্ডায় কাঁপছে তিস্তা-ধরলা বেষ্টিত ৬৩ চরাঞ্চলের মানুষ

সারা দেশে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। হঠাৎ করে গতকাল শীতে জবুথবু হয়ে পড়েছে মানুষ। লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, রংপুরসহ উত্তরের ১৬ জেলায় তীব্র শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে গত কয়েক দিন ধরে। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায় ও গোপালগঞ্জ জেলায় ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার পার্শ্ববর্তী গাজীপুর, কালিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ ও সাভারেও প্রবল ঠাণ্ডায় মানুষ কাবু হয়ে পড়েছে। খোদ রাজধানীতে গতকাল শীতের জামা-কাপড়ের দোকানে ব্যাপক ভিড় দেখা গেছে। গোপালগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে শীত ঝেঁকে বসেছে। এতে নিম্ন আয়ের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ে। ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রকোপ হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। ঘনকুয়াশার কারণে উত্তরের জেলাগুলোতে দিনের বেলাও গাড়ি হেডলাইট জালিয়ে চলতে দেখা গেছে। সাধারণ ও নিম্ন আয়ের মানুষ শীতবস্ত্রের অভাবে কাতরাচ্ছে।
লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত জেলা লালমনিরহাটের ওপর দিয়ে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে কাঁপছে পাঁচ উপজেলাসহ তিস্তা-ধরলা বেষ্টিত ৬৩ চরাঞ্চলের মানুষ। গত ক’দিনের শীতে কাহিল অসহায় মানুষগুলো খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। শীতের তীব্রতা বাড়লেও নেই পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র।
জানা গেছে, উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলার নাম লালমনিরহাট। পাঁচটি উপজেলা ও দুইটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এ জেলা। জেলার দুইপাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া রাক্ষুসী তিস্তা-ধরলা নদী। জেলার সদর উপজেলা, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলায় ভয়াবহ শৈত্যপ্রবাহ আর ঘন কুয়াশার সাথে ঠাণ্ডার মাত্রা বেড়ে গেছে। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় গোটা জেলা। গত ক’দিন ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না কোথাও। রাত ১০টার পর ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে যায় পুরো এলাকা। সন্ধ্যার পর থেকেই উত্তরের ঠাণ্ডা বাতাসে শীত লাগতে শুরু করে। রাতে টিনের চালে টিপটিপ করে শিশির পড়তে শোনা যায় বৃষ্টির মতো। সন্ধ্যা থেকেই এখন গায়ে গরম কাপড়, কম্বল ও কাঁথা নিতে হচ্ছে এখানকার মানুষকে। গরম কাপড়ের অভাবে বাড়ির সামনে আগুন জ্বালিয়ে শিশু ও বৃদ্ধ নারী-পুরুষ শীত নিবারণের চেষ্টা করছে।
ঘন কুয়াশায় ঝুঁকি এড়াতে সকালে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে যান চলাচল করছে। আর গরম কাপড়ের অভাবে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে গ্রামাঞ্চলসহ তিস্তা-ধরলা বেষ্টিত ৬৩ চরাঞ্চলসহ প্রত্যন্ত এলাকার দরিদ্র, অসহায় ও নি¤œ আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ।
জীবন-জীবিকার তাগিদে হাড়কাঁপানো শীতকে উপেক্ষা করে খুব সকালে কাজের সন্ধানে বিভিন্ন শ্রমজীবী কৃষক, দিনমজুর, রিকশা, অটো, ভ্যানচালক, খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছে মহাবিপাকে। তীব্র শীত উপেক্ষা করে ক্ষেতখামারে কাজ করছে নিম্নআয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। এ দিকে কনকনে ঠাণ্ডার কারণে জেলা সদর হাসপাতালসহ পাঁচটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিউমোনিয়া, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগ নিয়ে ভর্তি হচ্ছে রোগীরা।
স্থানীয় শীতার্ত মানুষের অভিযোগ, শীতের তীব্রতা বাড়লেও নেই পর্যাপ্ত সরকারি শীতবস্ত্র। স্থানীয় প্রশাসন ও বিভিন্ন সংগঠন এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের শীতবস্ত্র বিতরণ করেনি।
দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, চুয়াডাঙ্গায় শীতের দাপট শুরু হয়ে গেছে। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে এই জেলাই। গতকাল চুয়াডাঙ্গা জেলায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস। শীতের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে সদর হাসপাতালে শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বেড়ে যায়। চলতি ডিসেম্বর মাসের প্রথম ১২ দিনে সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ২৪৫ জন শিশু ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। এর মধ্যে নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা ৪১ এবং ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে ৩০৬ জন। একই সময়ে হাসপাতালের বহির্বিভাগে আরো এক হাজার ৮০৫ জন শিশু চিকিৎসা নিয়েছে।
গতকাল হাসপাতালের শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে দেখা যায়, শয্যা সংখ্যার বিপরীতে তিন গুণ রোগী দু’টি ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে। জায়গার সঙ্কট থাকলেও নার্স ও সেবিকারা চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রেখেছেন। তবে রোগীর স্বজনদের অনেকেই অতিরিক্ত ভিড় এবং চিকিৎসাসেবায় কিছুটা ধীরগতির অভিযোগ করেছেন। একই সময়ে দু’টি ওয়ার্ডের দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স এবং শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জনবল সঙ্কটের অভিযোগ করেছেন। তারা বলছেন, রোগীর চাপ বাড়ছে, কিন্তু জনবল সঙ্কটের কারণে অতিরিক্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে তাদের বেগ পেতে হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা ও গোপালগঞ্জের তাপমাত্রা ১০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস
চুয়াডাঙ্গায় গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে চুয়াডাঙ্গা ও গোপালগঞ্জে গতকাল সকাল ৯টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
নাঙ্গলকোট (কুমিল্লা) সংবাদদাতা জানান, অগ্রহায়নের শেষ দিকে নাঙ্গলকোটে শীতের তীব্রতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। উত্তরের হিমেল হওয়ায় শৈত্যপ্রবাহে উপজেলার সর্বত্র শীত ঝেঁকে বসেছে। গতকাল ভোরবেলা থেকে বিকেল বেলা পর্যন্ত সূর্যের দেখা মেলেনি। উপজেলার সর্বত্র কুয়াশাচ্ছন্ন অবস্থায় দেখা গেছে। তীব্র শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে। দিনব্যাপী খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হয়নি। যারা ঘর থেকে বের হয়েছে তাদেরকে গায়ে গরম কাপড় মুড়িয়ে বের হতে হয়েছে। তীব্র শীতে নাঙ্গলকোট পৌরসদরসহ বিভিন্ন বাজারের দোকানপাটে ক্রেতাদের উপস্থিতিও কম দেখা যায়। এ ছাড়া রাস্তাঘাটগুলোতেও মানুষের উপস্থিতি কম দেখা যায়। বিভন্ন স্থানে মানুষকে শীত নিবারণের জন্য খড়কুটা জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতে দেখা যায়। অন্য দিকে শীতে নিম্নআয়ের হতদরিদ্র মানুষ শীতের কাপড়ের অভাবে জড়োসড়ো হয়ে শীত নিবারণ করতে দেখা যায়। তাদেরকে প্রয়োজন ছাড়া খুব একটা ঘর থেকে বের হতে দেখা যায়নি।


আরো সংবাদ



premium cement
ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচারে ৫৩ নাগরিকের উদ্বেগ ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে দুর্নীতি কে প্রশয় দেয়া হবে না : জাতীয় নাগরিক কমিটি ফতুল্লা থেকে অপহৃত ২ শিশু বরিশাল থেকে উদ্ধার মহানবী সা:-কে নিয়ে কটূক্তি করা শিক্ষককে চাকরিচ্যুতের দাবি টাইম ম্যাগাজিনের বর্ষসেরা ব্যক্তি ট্রাম্প আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য দিবসে রিকের র‌্যালি ও মানববন্ধন অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের সভাপতি হাসান শরীফ, সাধারণ সম্পাদক সোহেল চুয়েটে র‌্যাগিংয়ের দায়ে ১১ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার ঢাকায় উচ্চমাত্রার হর্ন ব্যবহার না করতে ডিএমপির নির্দেশনা তামিমের ঝড়ে জয় পেল চট্টগ্রাম তথ্য উপদেষ্টার বক্তব্য নিয়ে ধোঁয়াশা, কর্মকর্তা প্রত্যাহার

সকল